<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সারা দেশে ঘন কুয়াশার সঙ্গে প্রচণ্ড শীত পড়েছে। কনকনে ঠাণ্ডা ও হিমেল বাতাসে ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবন। শীতে বিভিন্ন জেলায় ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। বয়স্ক ও শিশুরা নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুমের তথ্য বলছে, চলতি বছরের নভেম্বর থেকে গত ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেড় মাসে শীত ও শীতজনিত রোগে ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে। একজনের মৃত্যু হয়েছে ডায়রিয়ায়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই সময়ে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস, অ্যাজমা, শ্বাসকষ্ট, শ্বাসতন্ত্রের বিভিন্ন রোগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৯৯ হাজার ৫১৭ জন। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৭২ হাজার ৪২৭ জন ও  শ্বাসতন্ত্রের রোগী ২৭ হাজার ৯০ জন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শ্বাসতন্ত্রের রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত নরসিংদী জেলায়। ওই জেলায় এ পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে চার হাজার ৬০ জন। মারা গেছে পাঁচজন। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ময়মনসিংহ জেলায়, ৯ জন। এরপর নরসিংদী ও খাগড়াছড়িতে মৃত্যু হয়েছে পাঁচজন করে। ভোলা ও নেত্রকোনায় দুজন করে মারা গেছে। এ ছাড়া বান্দরবান, খুলনা, পিরোজপুর, বরগুনা, সিলেট  ও চট্টগ্রামে একজন করে মারা গেছে।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ডেপুটি প্রগ্রাম ম্যানেজার মো. জাহিদুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে, বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশে যে সময়ে শীত অনুভূত হতে থাকে, তখন থেকে ঠাণ্ডাজনিত রোগ, শ্বাসকষ্ট এবং শীতকালীন ডায়রিয়াসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করি। এবার নভেম্বরে শুরু করেছি। শীতে ঠাণ্ডাজনিত শ্বাসকষ্ট এবং ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। এই দুটি বিষয়ের তথ্য শীতকালীন রিপোর্টের জন্য সংগ্রহ করা হয়।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য (ভাইরোলজিস্ট) অধ্যাপক নজরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, শীতকালে ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা অন্য কোনো জীবাণুর সংক্রমণের আশঙ্কা বেশি থাকে। সাধারণত শিশু ও বয়স্করা শ্বাসতন্ত্রের সমস্যায় বেশি ভোগে। কারণ তাদের শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি বলেন, ভাইরাসের কারণে সংক্রমিত হলে তা খুব জটিল হয় না। তবে সংক্রমণ যখন বুকের ভেতর ফুসফুসে ছড়িয়ে যায় তখন তা মারাত্মক হয়ে যায়। নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কিওলাইটিস শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে না থাকা উত্তম। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে তথ্য মতে, গত ২০২২ ও ২০২৩ সালে মৃত্যু হয় ১০১ জনের। এই সময়ে শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হয় ৭২ হাজার মানুষ। ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তিন লাখ ৭৬ হাজার ৭২৪ জন। গত বছরের নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে তিনজনের মৃত্যু হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বছরে গড়ে ১০৪ জনের মৃত্যু</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কানাডার ক্যালগারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) চারজন শিক্ষকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশে বছরে শীতজনিত রোগে ১০৪ জন মারা যায়। মৃত্যুর হার বেশি রংপুর ও বরিশাল বিভাগে।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গবেষণায় ২০০৯-২০১০ সালের শীত মৌসুম থেকে শুরু করে ২০২০-২০২১ সালের শীত মৌসুম পর্যন্ত ১২টি শীত মৌসুমের তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। এতে দেখা যায়, ২০০৯ থেকে ২০২১ সালের শীত মৌসুমে মোট এক হাজার ২৪৯ জন মানুষের মৃত্যু হযেছে। এ সময় সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে ২০১১-২০১২ সালের শীতে, ২১৪ জন। সবচেয়ে কম মৃত্যু হয় ২০১৬-২০১৭ সালের শীতে, ১৮ জন। ২০২০ ও ২০২১ সাল মিলিয়ে যে শীত মৌসুম, সে সময় মৃত্যু হয় ৫২ জনের।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শীতের কারণে মৃত্যুর তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলা (ডেভেলপিং কোল্ড রিলেটেড মরটালিটি ডাটাবেইস ইন বাংলাদেশ) শিরোনামের গবেষণাটির ফলাফল গত বছরের ২৭ সেপ্টেম্বর এনভায়রনমেন্টাল রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক হেলথ নামের একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশ করা হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এতে দেখা যায়, শীত মৌসুম শুরুর পর ২১ থেকে ৩১ ডিসেম্বর এবং জানুয়ারির ১১ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে শীত বেশি পড়ে। ওই সময় শীতে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়ে যায়। মৃত্যুর বেশির ভাগ ৭৫.৫ শতাংশ ক্ষেত্রে কারণ শীত। ১০.৬৫ শতাংশ ক্ষেত্রে ঠাণ্ডায় রোগাক্রান্ত হওয়া মৃত্যুর কারণ। ৫.৮ শতাংশ ক্ষেত্রে মৃত্যুর কারণ আগুন পোহাতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হওয়া।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বায়ুদূষণও মৃত্যু বাড়াচ্ছে</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অ্যাজমা, যক্ষ্মা ও বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ এবং জাতীয় বক্ষব্যাধি ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সেরাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, শীতে রোগীর মৃত্যুর অন্যতম কারণ ফুসফুসের ক্ষতি। শুধু যে শীতের কারণে মৃত্যু হচ্ছে এমন নয়। পরিবেশ ও বায়ুদূষণ, রাসায়নিক পদার্থের ব্যবহার, ধূমপান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এসব কারণে শ্বাসকষ্ট ও ফুসফুসের রোগ বাড়ছে। একই সঙ্গে বাড়ছে রোগীর মৃত্যু।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শহরগুলো বেশি দূষণের শিকার হলেও এখন গ্রামের রোগী বেশ বেড়েছে। সাধারণত নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত বাতাসে দূষণের মাত্রা বেড়ে যায় এবং রোগীর চাপ বাড়তে থাকে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ডা. মো. সেরাজুল ইসলাম বলেন, ১৫ বছরের নিচে যে শিশুরা চিকিৎসার জন্য আসে, তাদের সাধারণত নিউমোনিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বেশি। চিকিৎসায় এরা ৯৬ শতাংশ ভালো হয়ে যায়। বয়স্ক যারা আসে তারা নিউমোনিয়া, সিওপিডি, অ্যাজমা ও ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে আসে। এসব রোগীর শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। এ জন্য মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি। বয়স্কদের শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কাছের হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। </span></span></span></span></p>