<p style="text-align:left"><span style="color:#c0392b"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রায় আট বছরের চেষ্টায় বীরশ্রেষ্ঠদের জীবনী লিখতে সক্ষম হয়েছেন ইয়াংঙান ম্রো। তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এখনো অনেক ম্রো আছেন যাঁরা বাংলা লেখা দূরে থাক, পড়তেও পারেন না। অথচ তাঁরা ম্রো মাতৃভাষা পড়তে পারেন। মূলত তাঁদের জন্যই বইটি লেখা</span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বান্দরবানে পাহাড়ি নৃগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংখ্যার দিক থেকে ম্রোদের অবস্থান দ্বিতীয়। কিন্তু পাহাড়ের অন্য নৃগোষ্ঠীর তুলনায় তারা খুবই অনগ্রসর। বেশির ভাগই লিখতে ও পড়তে পারে না। নিরক্ষরতার অন্ধকারে থাকা ম্রোদের মাঝে গন্ধরাজ হয়ে সৌরভ ছড়াচ্ছেন ইয়াংঙান ম্রো। ম্রো জাতিগোষ্ঠীর মানুষ তাঁকে চেনে নিজেদের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কণ্ঠস্বর</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> হিসেবে। পিছিয়ে পড়া এই নৃগোষ্ঠীর অনেক প্রথমের সঙ্গে জড়িয়ে আছে ইয়াংঙানের নাম। ম্রো ভাষার প্রথম অভিধান লিখেছেন তিনি। লিখেছেন নিজ ভাষার প্রথম ব্যাকরণও। ম্রো ভাষায় প্রকাশিত প্রথম বইটিও তাঁর লেখা। পাহাড়চূড়ায় পাঠাগারও গড়েছেন। গত বছর লিখেছিলেন বিলুপ্তপ্রায় রেংমিটচ্য ভাষার প্রথম অভিধান </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মিটচ্য তখক</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্ববিদ্যালয়জীবন থেকে দুর্গম পাহাড়ে যে আলোর মশাল জ্বালিয়েছেন ইয়াংঙান, তা আজও জ্বলছে। এর সর্বশেষ উদাহরণ ম্রো ভাষায় লিখিত মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সাত বীরশ্রেষ্ঠের জীবনী। ম্রো ভাষায় বইটির নাম </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নমমো তসেন কিয়াক মি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">হাই স্কুলে পড়ার সময় ইয়াংঙানকে বীরশ্রেষ্ঠদের বীরত্বগাথা শুনিয়েছিলেন নিত্য রঞ্জন দাস। ম্রো আবাসিক উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক তিনি। গতকাল রবিবার বান্দরবানের একটি রেস্তোরাঁয় বইটির মোড়ক উন্মোচনও করেছেন সেই নিত্য রঞ্জন দাস। পাশাপাশি ম্রো নৃগোষ্ঠীর ক্রামা ধর্মের প্রবর্তক মেনলে ম্রোর আঁকা দুর্লভ ছবির অ্যালবামও প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কেন এই বই</span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রায় আট বছরের চেষ্টায় বীরশ্রেষ্ঠদের জীবনী লিখতে সক্ষম হয়েছেন ইয়াংঙান ম্রো। তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এখনো অনেক ম্রো আছেন যাঁরা বাংলা লেখা দূরে থাক, পড়তেও পারেন না। অথচ তাঁরা ম্রো মাতৃভাষা পড়তে পারেন। মূলত তাঁদের জন্যই বইটি লেখা। চেষ্টা করব যেসব ম্রো ছেলেমেয়ে বাংলা না জানায় বীরশ্রেষ্ঠদের জীবনী পড়তে পারে না, সেসব ছেলেমেয়ের হাতে এই বই পৌঁছে দিতে। এতে করে তারা বীরশ্রেষ্ঠদের সম্পর্কে জানতে পারবে, জানবে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কথা দিয়েছিলেন চাদুই ম্রোকে</span></span></strong></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অবশ্য এই বই লেখার পেছনে একটি বিশেষ ঘটনা আছে। ২০১৭ সালের ১৪ ডিসেম্বর। থানচিতে ম্রো ভাষার এক বিদ্যালয়ে অভিভাবকদের বার্ষিক সভা। সেখানে গিয়ে চাদুই ম্রো (৪৭) নামের একজনের সঙ্গে দেখা হয়েছিল ইয়াংঙানের। চাদুই অনেক ম্রো গল্প জানতেন। ইয়াংঙানও দীর্ঘদিন ধরে ম্রো সমাজে মুখে মুখে ফেরা গল্পগুলো সংগ্রহ করছিলেন। রাতে চাদুই একটার পর একটা গল্প শোনালেন ইয়াংঙানকে। পরদিন সকালে রোদ পোহাতে পোহাতে বীরশ্রেষ্ঠদের জীবনকাহিনি পড়ছিলেন ইয়াংঙান। কারণ ১৬ ডিসেম্বর ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে বীরশ্রেষ্ঠদের নিয়ে আলোচনা করতে হবে। চাদুই এসে তাঁর পাশে বসলেন। এক পর্যায়ে বইটি চেয়ে নিলেন। কিন্তু পড়তে পারছিলেন না। কারণ তিনি বাংলা জানতেন না। আফসোস করে বলছিলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আহা, বইটা যদি ম্রো ভাষায় লেখা থাকত তাহলে আমিও বাংলার<br /> বীর সন্তানদের সম্পর্কে জানতে পারতাম। চোখ থাকতেও যেন আমি অন্ধ!</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বলতে বলতেই তার চোখ থেকে টপ টপ করে জল পড়ছিল। এই ঘটনা ভীষণভাবে পীড়া দিয়েছিল ইয়াংঙানকে। পরে চাদুই তাকে অনুরোধ করলেন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভবিষ্যতে সম্ভব হলে বীরশ্রেষ্ঠদের জীবনী ম্রো ভাষায় অনুবাদ করতে। </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঠিক আছে। চেষ্টা করব</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বলে চাদুইকে কথা দিয়েছিলেন ইয়াংঙান। সেই চেষ্টার ফসলই এই </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নমমো তসেন কিয়াক মি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বইটি হাতে নিয়ে ইয়াংঙান প্রথমে স্মরণ করলেন সেই চাদুইকে। বললেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আজ চাদুই নেই। কিন্তু তার চাওয়া পূরণ হয়েছে। তবে তিনি আর পড়ে যেতে পারলেন না!</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> মোট ৩০ পৃষ্ঠার বইটির মূল্য ১০০ টাকা। প্রকাশিত হয়েছে অনুকূল প্রিন্টার্স থেকে। তবে ম্রো শিশুদের বিনা পয়সায় বইটি বিতরণ করবেন বলে জানালেন ইয়াংঙান। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p> <p style="text-align:left"><strong><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আগামীতে রেংমিটচ্য ভাষায়</span></span></span></span></span></strong></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাহাড় ছাড়িয়ে এখন সারা দেশের মানুষ চেনে ইয়াংঙানকে। অবশ্য এত দূর আসা মোটেও সহজ ছিল না। মা-বাবা ছিলেন দরিদ্র জুমচাষি। খুব অভাবের মধ্য দিয়ে বড় হয়েছেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যলয়ে প্রাচ্য ভাষা বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে হাতে ম্রো ভাষায় অভিধান লিখে গ্রামে গ্রামে বিক্রি করতেন। পাশাপাশি ম্রো সমাজে প্রচলিত গল্প, কবিতা সংগ্রহ করতে থাকলেন। স্নাতকোত্তর পাসের পর চেয়েছিলেন নিজ জনগোষ্ঠীর ইতিহাস, ঐতিহ্য নিয়ে কাজ করবেন। তাই বেছে নিয়েছেন লেখকজীবন। ২০১৫ সালে এসে প্রকাশিত হলো ইয়াংঙানের লেখা প্রথম বই </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রিইয়ংখতি</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। এরপর একে একে লিখলেন ক্রামাদি, জুম পাহাড়ের মানুষ, ম্রোচ্য লাইসম, ম্রো রূপকথা, ক্রামা ধর্মের উৎপত্তি ও ম্রো সমাজ, ততোং, জুম পাহাড়ের জীবন, সাংচারখতি নামের বই। ইয়াংঙানের প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৩৪। এর মধ্যে ম্রো ভাষায় প্রকাশিত বই ২২টি, বাংলায় ১১টি, আর একটি রেংমিটচ্য ভাষায়। ইয়াংঙানের এই উদ্যোগ নিয়ে ২০২৩ সালের ৪ নভেম্বর প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল কালের কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় অন্য জীবন বিভাগে। শিরোনাম </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চিম্বুকে জ্বলছে ইয়াংঙান মশাল।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ভবিষ্যতে বিপন্ন রেংমিটচ্য ভাষায় বীরশ্রেষ্ঠদের জীবনী অনুবাদ করবেন বলে জানালেন ম্রোদের এই মশালচি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><img alt="ম্রো ভাষায় বীরশ্রেষ্ঠদের জীবনী" height="600" src="https://asset.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/12 December/16-12-2024/121/9_kaler-kantho--16-12-2024.jpg" width="1000" /></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইয়াংঙান ম্রো।    <strong>ছবি : কালের কণ্ঠ</strong></span></span></span></span></span></p>