<p style="text-align:justify"><span style="color:#c0392b">নীলচে বেগুনি রঙের ঘনবদ্ধ রসুন্দিলতা ফুল। গাছ ভর্তি ফুলের এমন অবারিত প্রস্ফুটন অনেকটাই বিরল। হেমন্তের প্রায় পুষ্পহীন প্রকৃতিতে ওরাই যেন একমাত্র সম্রাজ্ঞী। রসুন্দিলতা চিরসবুজ, শক্ত, দীর্ঘ ও ঝোপালো গাছ। হেমন্ত ছাড়াও বছরে আরো দু-একবার ফুল ফোটে। ফুলের অগ্রভাগ ঈষৎ বেগুনি, নলাকার অংশটি ক্রিমসাদা। চোখ-জুড়ানো সেই রং</span></p> <p style="text-align:justify">রসুন্দিলতার এতই জৌলুস যে একবার তাকে দেখতেই হবে। এ যেন মাতাল করা রূপ! একবার ভাবুন, মাথার ওপর রোদ-ঝলমলে হেমন্তের নীলাকাশ, নিচে কোনো আর্চের ওপর নীলচে বেগুনি রঙের ঘনবদ্ধ রসুন্দিলতার প্রাচুর্য। এমন একটি অপার্থিব দৃশ্য দেখেই পার করে দেওয়া যায় অনেকটা সময়। গাছ ভর্তি ফুলের এমন অবারিত প্রস্ফুটন অনেকটাই বিরল। এ কারণে হেমন্তে রসুন্দিলতার ঝাড়গুলোতে চোখ রাখি। এ বছর যেন একটু তাড়াহুড়া ছিল রসুন্দিলতার। ফুটেছিল একটু আগে আগে। নভেম্বরের শুরুতেই রমনা নার্সারি লাগোয়া সব গাছ নীলচে বেগুনি রঙের কলিতে সুসজ্জিত হয়ে উঠেছে। হেমন্তের সবটুকু স্নিগ্ধতা ভর করেছে যেন সেখানে। ভালোভাবে তাকিয়ে দেখি, দু-একটি ফুলও ফুটেছে। চোখ-জুড়ানো সেই রং। ওরা তখন নিজেদের পরিপূর্ণ সৌন্দর্য ফুটিয়ে তুলতে ব্যস্ত।</p> <p style="text-align:justify">গাছটির ইংরেজি নাম গার্লিক ভাইন। একটি পাতার কিঞ্চিৎ ছিঁড়ে আঙুলের ডগায় ঘষে গন্ধটা শুঁকে নিন। তাহলেই নামের সার্থকতা উপলব্ধি করতে পারবেন। এ কারেণই এ ফুলের নাম রসুন্দি। কয়েকটা দিন পরই পার্কের সেই গাছগুলোর জীবনে বসন্ত এসেছিল। পুষ্পবন্যায় বর্ণিল হয়ে উঠেছিল ওদের সবুজ পাতার ঘর। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে বান্দরবানের লামায় অবস্থিত কোয়ান্টাম সেন্টারে রসুন্দিলতার পরিপূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ হলো।</p> <p style="text-align:justify">প্রস্ফুটন প্রাচুর্য এবং রাজসিক ঐশ্বর্যের কারণে রসুন্দিলতা ছড়িয়ে পড়েছে সর্বত্র। তবে আমাদের দেশে অভিষেক বেশিদিনের নয়। কোথাও কোথাও এই ফুলের নাম নীল পারুল হলেও এ অঞ্চলের প্রায় বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া পারুলের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। সম্ভবত গড়নের দিক থেকে কিছুটা সাদৃশ্য থাকায় এমন নামকরণ। কাছাকাছি রঙের আরেকটি ফুলের নাম ঢোলকলমি ঢাকায় রমনা পার্ক, বলধা গার্ডেন, শিশু একাডেমি, বোটানিক্যাল গার্ডেনসহ অনেকের ব্যক্তিগত সংগ্রহেও দেখা যায়। কেউ কেউ শখ করে বাড়ির সীমানাপ্রাচীরে লাগিয়ে রেখেছেন। বিশেষত ঢাকার পরিকল্পিত আবাসিক এলাকার মধ্যে উত্তরা, বনানী ও ধানমণ্ডি এলাকায় সবচেয়ে বেশি সহজলভ্য।</p> <p style="text-align:justify">আমাদের মৌসুমি ফুলের বাগান প্রস্তুত করে নেওয়ার কাজ যখন শুরু হয়, তখন রসুন্দিলতাও নিজেকে নতুনভাবে সাজিয়ে নিতে শুরু করে। প্রায় নিষ্প্রাণ গাছে নতুন করে সঞ্চারিত হয় প্রাণ। কাঁচা সবুজ পাতায় ভরে ওঠে গাছ। হেমন্তের প্রায় পুষ্পহীন প্রকৃতিতে ওরাই যেন একমাত্র সম্রাজ্ঞী।</p> <p style="text-align:justify">রসুন্দিলতা (Pseudocalymma allaceum) চিরসবুজ, শক্ত, দীর্ঘ ও ঝোপালো গাছ। যৌগপত্র দ্বি বা ত্রিপক্ষল, পত্রিকা ভল্লাকার বা আয়তাকার, মসৃণ, চার থেকে পাঁচ সেন্টিমিটার লম্বা, চার্ম। শীর্ষ পাতাটিই মূলত আকর্ষীতে রূপান্তরিত হয়। হেমন্ত ছাড়াও বছরে আরো দু-একবার ফুল ফোটে। ফুলের অগ্রভাগ ঈষৎ বেগুনি, নলাকার অংশটি ক্রিমসাদা। দল ফানেলের মতো, মুখ চার সেন্টিমিটার চওড়া, তাতে পাঁচটি মুক্ত পাপড়ি আছে, সেগুলো গোলাকার ও ছড়ানো। বংশবৃদ্ধি কলম ও শিকড় থেকে গজানো চারায়। এরা ক্রান্তীয় আমেরিকার প্রজাতি।</p>