<p><span style="color:#c0392b"><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শুঁয়াপোকারা দীর্ঘ সময় কিছু না খেয়ে শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচিয়ে, নিশ্চল থেকে নিজেদের কী করে যেন টিকিয়ে রাখে! শীত চলে যাওয়ার পর বসন্তের ফুরফুরে হাওয়ায় শুঁয়াপোকাদের ঘুম ভাঙে। এরপর একদিন সে গুটি ছিদ্র করে বাইরে বেরিয়ে এসে বসন্ত উদযাপন করে</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে, কিন্তু তাতে সহসা ভেজার ভয় নেই। একটা পাহাড়ি উপত্যকা</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ঢালের নিচে কুলকুল করে বয়ে চলেছে ঝরনাধারা। উত্তর আমেরিকার ওয়াটকিনস গ্লেন স্টেট পার্কের গিরিখাতে পাহাড়ের পাথুরে গায়ে আর্দ্র পরিবেশে বেশ কিছু ফার্ন জন্মেছে। সেসব ফার্নের গাছগুলো দেখছি, ওগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে নিচ্ছি আমাদের দেশের ফার্ন গাছগুলোকে। কিছু মেলে, কিছু মেলে না। হঠাৎ সেসব ঝোপঝাড়ের মধ্যে বৃষ্টিতে ভিজতে দেখলাম একটা শুঁয়াপোকাকে। আহা কী রঙের বিন্যাস! কোন রঙের সঙ্গে কোন রং ম্যাচিং হবে, সেটা বোঝেন শিল্পীরা আর বস্ত্রবিদেরা। তুচ্ছ একটা শুঁয়াপোকার সেটা বোঝার কথা নয়। কিন্তু কী আর করবে বেচারা! স্রষ্টাই ওদের সে রং দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। চেহারাটা দেখাচ্ছে ভালুকের মতো, ভালুকের মতো ঘন কালো পশমে ঢেকে আছে দেহের দুই প্রান্ত, মাঝখানে কমলা-গেরুয়া রং। এ জন্য এরই শুঁয়াপোকাদের বলে উলি বিয়ার ক্যাটারপিলার। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">প্রজাপতি ও মথের ছানাদের ইংরেজিতে বলে ক্যাটারপিলার। তবে সব প্রজাপতি ও মথের ছানাদের এ রকম শুঁয়া বা পশম থাকে না, কিছু ছানার দেখতে বেশ নাদুসনুদুস ও পশমহীন থলথলে দেহ। যা হোক উলি বিয়ার ক্যাটারপিলারের দেহটা লম্বা লম্বা পশমে ঢাকা, তাই একে শুঁয়াপোকা বলা হয়। পৃথিবীতে অনেক জাতের শুঁয়াপোকা থাকলেও এসব শুঁয়াপোকার কাজকারবার অন্যদের চেয়ে বেশ আলাদা। উত্তর আমেরিকায় শীতকালে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা বা শীত পড়ে, বরফও। শীত আসার আগেভাগে এই শুঁয়াপোকার সঙ্গে দেখা হলো। পুরো শীতকালে আর ওদের সঙ্গে কারো সাক্ষাৎ হবে না, ফের দেখা মিলবে শীতের পর বসন্তে। কিন্তু যতই শীত আসুক ওরা মরবে না, নিজেদের গুটিয়ে নেবে একটা গুটির ভেতরে। শীত পড়তে শুরু করলেই ওরা ওদের মুখের লালা দিয়ে নিজেদের দেহকে পেঁচিয়ে ফেলবে, ওই লালা আবার বাতাসে এসে সুতার রূপ ধারণ করে। প্যাঁচাতে প্যাঁচাতে চোখ-মুখ, হাত-পা সব লেপ মুড়ি দিয়ে থাকার মতো ঢেকে ফেলে একটা লম্বা ঘুম দেয় শুকনো পাতার স্তূপের তলায়। ওখানেই যেন দীর্ঘ সময় ধরে অনেকটা হিমায়িত অবস্থায় চলে ওর শান্তির ঘুম। এই দশাকে কীটতত্ত্বের ভাষায় বলে মুককীট বা পিউপা। গুটি বা খেলসের ভেতরে ওরা একটা পুতুলের মতো আকৃতি ধারণ করে বলেই ওদের বলে পিউপা বা পুত্তলি।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জেনে বিস্মিত হলাম যে কীটতত্ত্ববিদেরা নাকি ওসব শুঁয়াপোকার গায়ের পশম আর রং দেখে বুঝতে পারেন যে সে বছর শীত কতটা পড়বে। যদিও এর কোনো বিজ্ঞানভিত্তিক কারণ নেই, তবু অনেকে বিশ্বাস করেন যে উলি বিয়ার শুঁয়াপোকার গায়ে যে কালো ও কমলা-গেরুয়া রঙের আড়াআড়ি দাগ বা ডোরা ব্যান্ড থাকে, সে দাগই নাকি শীতের তীব্রতা সম্পর্কে পূর্বাভাস দেয়! যুক্তরাষ্ট্রের মাছ ও বন্য প্রাণী বিভাগের লোকেরা অন্তত এ কথা বিশ্বাস করেন যে দেহের মাঝখানের কমলা-গেরুয়া ব্যান্ড যত চওড়া হবে তত কম শীত পড়বে, এ দাগ যত কম চওড়া হবে শীত তত বেশি পড়বে। তাকিয়ে দেখলাম ওর দিকে, কমলা দাগটা বেশ চওড়া। তার মানে এ বছর আমেরিকায় শীত বেশি পড়বে। সত্য-মিথ্যা জানি না, কিন্তু উলি বিয়ার শুঁয়াপোকাদের নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে এরূপ ধারণা চালু রয়েছে। এটাকে কেউ নিছক কৌতুক বা মজার কথা হিসেবে ভাবলে ভাবতে পারেন, তবে মিথটা মিথ্যে নয়। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এত দীর্ঘ সময় ধরে কোনো পোকা কিছু না খেয়ে শীতের তীব্রতা থেকে বাঁচিয়ে, নিশ্চল থেকে নিজেদের কী করে টিকিয়ে রাখে কে জানে! শীত চলে যাওয়ার পর যখন বসন্তের ফুরফুরে হাওয়া বইতে শুরু করে, তখন ওসব শুঁয়াপোকার একদিন ঘুম ভাঙে। গুটির ভেতরেই ওদের ডানা গজায়, শুঁড় গজায়, পাগুলো শক্ত হয়। এরপর একদিন সে গুটি ছিদ্র করে বাইরে বেরিয়ে এসে রোদেলা বসন্ত দিন উদযাপন করে। তখন সে শুঁয়াপোকার রূপান্তরিত নবজন্মে নতুন নাম হয় ইসাবেলা টাইগার মথ। নামটা যেমন রানির মতো, সেসব মথের রূপটাও তেমনি। ডানার রং সূক্ষ্ম রেখা বা ফুটিযুক্ত কমলা আভায় গৌরবর্ণ। ওদের বৈজ্ঞানিক নাম </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">Pyrrharctia isabella</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> ও বংশ ইরেবিডি। ১৭৯৭ সালে লিনিয়ান সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা উদ্ভিদবিদ স্যার জেমস এডওয়ার্ড স্মিথ এ নাম রাখেন। শুঁয়াপোকা দেখলে আমরা ভয় পাই, কেননা ওদের শুঁয়া চামড়ায় লাগলে সেখানে চুলকায় ও ফুলে ওঠে। কিন্তু এদের শুঁয়ায় সাধারণত সেরূপ হয় না। তবে কারো কারো তা হতেও পারে। হেমন্তে ডিম ফুটে এ শুঁয়াপোকারা বের হওয়ার পর বহু রকমের গাছের পাতা খেয়ে সর্বনাশ করে, বিশেষত বিরুৎ ও গুল্ম প্রকৃতির গাছের। এ পোকা কানাডায়ও আছে।</span></span></span></span></span></p>