<p>ভ্যাট ৫ থেকে ১৫ শতাংশ বাড়ানোর প্রতিবাদে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য রেস্তোরাঁ বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি। সংগঠনটির মহাসচিব <strong>ইমরান হাসান </strong>কালের কণ্ঠকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে রেস্তোরাঁ খাতের নানা সমস্যার কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন <strong>শিহাবুল ইসলাম </strong></p> <p> </p> <p><strong>প্রশ্ন :</strong> ভ্যাট বাড়ানোর কারণে রেস্তোরাঁ খাত কী ধরনের চাপে পড়বে?</p> <p><strong>ইমরান হাসান :</strong> মূল্যস্ফীতির কারণে ভোক্তাদের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের মিল ছিল না আগে থেকেই। নতুন করে বাড়তি ভ্যাটের কারণে খাবারের দাম আরো বাড়বে। এতে ভোক্তারা কম খাবে। এখন একটি গ্রিল চিকেন আমরা ৪০০ টাকা বিক্রি করি। অনেক জায়গায় ৩৮০ টাকা। ১৫ শতাংশ ভ্যাট বাড়ানোর কারণে তা যথাক্রমে ৪৬০ ও ৪৪০ টাকা। এতে যে ভোক্তা আগে মাসে দুইবার গ্রিল চিকেন খেত, সে এই দাম বাড়ার কারণে মাসে একবার খাবে। মানে আমাদের বিক্রি কমে যাবে।</p> <p> </p> <p><strong>প্রশ্ন : </strong>অন্যদের চেয়ে আপনাদের কাঁচামালের খরচ বেশি কেন?</p> <p><strong>ইমরান হাসান :</strong> আপনি যদি ফাইভস্টার হোটেলে একটি কফি খান, সেটির দাম ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার নিচে নয়। নিচু স্তরের রেস্টুরেন্টগুলোতে গেলে দাম কম হবে। আবার পাড়া-মহল্লায় একই কফি আরো কম দামে দেবে। কফি কিন্তু একই। পরিবেশ, বিনিয়োগ ও রেস্টুরেন্টের ভাড়া কিন্তু ভিন্ন ভিন্ন। এখন ট্যাক্সেশনের ক্ষেত্রে ধরে নেওয়া হয়েছে ২৫ শতাংশ কাঁচামালের খরচ। ৩০ শতাংশ অবকাঠামো খরচ। বাকি টাকা লাভ। এখন ওই নেট প্রফিটের ওপরে ৪০ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয় আমাদের। এই প্রক্রিয়ায় যদি ট্যাক্সেশন করা হয়, ভ্যাটের হিসেবে যদি মাসে ৫০ লাখ টাকা বিক্রি দেখাই, তখন বছর শেষে ছয় কোটি টাকা হয়। এখন এই রাজস্ব কর্মকর্তারা ছয় কোটি টাকা থেকে খরচ বাদ দিয়ে হিসাব করে দেখাবেন দুই কোটি টাকা লাভ হয়েছে। এখন খরচ বাদ দিয়ে যে ৮০ লাখ টাকা লাভ হয়েছে সেখান থেকে ৪০ শতাংশ ট্যাক্স দিই, তাহলে বাড়িঘর বিক্রি করে দিতে হবে। কিন্তু আমাদের প্রকৃতপক্ষে লাভ ৮০ লাখ টাকা নয়, হয়েছে ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা। এখন পাঁচতারা হোটেলের সঙ্গে তুলনা করে যদি আমাদের ট্যাক্স দিতে বলা হয়, তাহলে তো আমরা টিকতে পারব না।</p> <p>বাংলাদেশে হোটেল-রেস্টুরেন্টের বাজার কত হাজার কোটি টাকার? </p> <p><strong>ইমরান হাসান :</strong> সঠিক হিসাব নেই। কিন্তু বাংলাদেশে সব ভোগ্য পণ্যের ২০ শতাংশ এককভাবে রেস্টুরেন্টে ব্যবহার হয়। এখানে অনেক বিদেশি খাবার তৈরিতে আমাদের নতুন কৃষির ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে। যেমন—ক্যাপসিকাম, ব্রকোলি, ক্যাবেজ, হাঁস, কোয়েল, গরুর খামার। এ রকম অনেক কিছু এসেছে রেস্তোরাঁকেন্দ্রিক।</p> <p>এই খাতে বিনিয়োগ কী পরিমাণ হবে? </p> <p><strong>ইমরান হাসান :</strong> সঠিক হিসাব নেই। তবে ধারণা করে বলতে পারি, অন্তত ১০ বিলিয়ন ডলার হবে।</p> <p>আগের সরকার ভ্যাট ৫ শতাংশ নামিয়ে আনার পরও ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া বন্ধ হয়নি।</p> <p><strong>ইমরান হাসান :</strong> ভ্যাট ফাঁকি দেওয়া, এভাবে বললে ঠিক হবে না। এনবিআর সিস্টেম করেছে চুরি করার জন্য, যাতে আমরা চুরি করি। এখন হাত-পা বেঁধে সাঁতার কাটতে বলা হচ্ছে। ভ্যাট ৫ শতাংশে নামিয়ে আনার পর তখনকার এনবিআর চেয়ারম্যান বলেছিলেন, রেস্তোরাঁ খাত থেকে ভ্যাট আদায় ১৯ শতাংশ বেড়েছে। আমরা বলি, ভ্যাট ৫ শতাংশ রেখেই যদি সব রেস্তোরাঁকে ভ্যাটের আওতায় আনা হয়, তাহলে এই খাতের রাজস্ব আহরণ ১০ গুণ বাড়বে।</p> <p>ট্যাক্স নেওয়া সহজ করা যাবে কিভাবে?</p> <p><strong>ইমরান হাসান :</strong> যত ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আছেন, সবাইকে একটা ডিজিটে ৩ শতাংশে নিয়ে আসেন। তৃতীয় পক্ষ দিয়ে মনিটর করেন। পণ্য বিক্রির সঙ্গে সঙ্গে ট্যাক্স নিয়ে নেন। এতে যদি আমরা রেভিনিউ না দিতে পারি, তখন আমাদের ইম্পোজ করেন। এর সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ত করেন। একটা রেস্তোরাঁও ভ্যাটের বাইরে থাকতে পারবে না।</p> <p>আপনি বলেছেন, দেশে চার লাখ ৮১ হাজার রেস্তোরাঁ আছে। এর মধ্যে আপনাদের সমিতির সদস্য মাত্র ৬০ হাজার। তাহলে বাকি চার লাখের বেশি রেস্তোরাঁর জন্য আপনারা কেন কথা বলছেন?</p> <p><strong>ইমরান হাসান :</strong> ধরেন, আপনার পরিবারে অবাধ্য একটা ছেলে আছে। আপনার পরিবার বাঁচাতে হলে তাকে তো বাইরে রেখে বাঁচাতে পারবেন না। আমরা বলেছি, সরকার সহযোগিতা করলে সবাইকে একই ছাতার নিচে নিয়ে আসব। নিরাপদ খাদ্য প্রস্তুতির জন্য ট্রেনিংও করব, রাজস্বও দেব। বিজিএমইএ যেভাবে কাজ করে, তাদের অনুমতি ছাড়া যে রকম আমদানি-রপ্তানি করা যায় না, তেমনি তাদের আদলে আমাদের সংগঠনটাকে ক্ষমতা দেওয়া হোক। আমরা ওরকমভাবে গড়ে তুলতে চাই।</p> <p>সবাইকে এক ছাতার নিচে নিয়ে আসবেন কিভাবে?</p> <p><strong>ইমরান হাসান :</strong> এটা সরকারের আইনেই আছে। এটা বাস্তবায়ন করলেই হবে। সরকার তো আমাদের ছাড়াই ট্রেড লাইসেন্স দিয়ে দেয়। যে ট্রেড লাইসেন্স চায়, সরকার তাকেই দিয়ে দেয়। কিন্তু এই ব্যবসা চাইলেই তো যে কেউ করতে পারে না। এখানে মানুষের স্বাস্থ্য জড়িত। যদি আমাদের সম্পৃক্ত করে লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়, তাহলে দেখবেন পাঁচ বছর পরে স্বাস্থ্য খাতের বাজেট অনেক কমে গেছে।</p> <p>যারা আপনাদের সদস্য নয়, তাদের যদি সরকার বন্ধ করতে চায়, তখন বলবেন সরকার আপনাদের বিপদে ফেলছে।</p> <p><strong>ইমরান হাসান :</strong> দেখেন, আমরা রেস্তোরাঁ বন্ধ চাই না। আমরা চাই বাকিদের সিস্টেমের মধ্যে নিয়ে আসা হোক। সিস্টেমে নিয়ে আসার জন্য ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত আমরা কমিটি করে দিতে পারব। তখন কেন্দ্র থেকে আমরা বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়ে তাদের বাধ্য করতে পারব, যা একদম তৃণমূল পর্যন্ত চলে যাবে। </p> <p>কত শতাংশ রেস্তোরাঁ ভ্যাটের আওতায় আছে?</p> <p><strong>ইমরান হাসান :</strong> এটার পরিসংখ্যান আমাদের কাছে নেই। আমরা বলতে পারব না। আমার মনে হয় না ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ভ্যাট দেয়। বড় রেস্তোরাঁ যেগুলো আছে, সেগুলো ভ্যাটের আওতায় আছে। বাকিগুলো নেই। যেগুলো নেই, সেগুলো এনবিআর অফিসারদের চাঁদাবাজির জায়গা। তাঁরা গিয়ে চাঁদাবাজি করেন। অফিসাররা গিয়ে বলেন ঠিক আছে, আমাকে ২০ হাজার টাকা দাও।</p> <p>৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ করায় রাজস্ব আহরণ বাড়বে না কমবে?</p> <p><strong>ইমরান হাসান :</strong> সামান্য কিছু বাড়তে পারে। কিন্তু সেটা ফায়দা হবে না। বহু মানুষ ভ্যাটের আওতার বাইরে চলে যাবে। বহু ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে, যারা ভ্যাট দেয়।</p> <p>ভ্যাট কমানোর ক্ষেত্রে সরকারের কাছে কোনো ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পেয়েছেন কি না?</p> <p><strong>ইমরান হাসান :</strong> সরকারের সঙ্গে আমাদের কোনো যোগাযোগ হয়নি। প্রধান উপদেষ্টা, অর্থ মন্ত্রণালয় বা এনবিআর থেকে আমাদের ঢাকা হয়নি।</p> <p> </p> <p> </p>