<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সম্ভাবনাময় রপ্তানি শিল্প হিসেবে দেশে বড় বাজার তৈরি করতে পারে পাটখড়ির ছাই বা চারকোল। কয়েক বছর ধরে চীনসহ বিভিন্ন দেশে এই পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। তবে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটকালে সম্ভাবনাময় এই রপ্তানিমুখী শিল্পকে খাদের কিনারে ফেলে দিয়েছে আওয়ামীপন্থী সিন্ডিকেট। সরকারের পতন হলেও থামেনি তাদের দোসর হিসেবে পরিচিত ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য। সিন্ডিকেটের থাবায় পণ্য রপ্তানি হুমকির মুখে পড়েছে। ভরা মৌসুমেও জেগেছে শঙ্কা। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">চারকোল ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, আওয়ামী সরকারের পতন ঘটলেও তাদের দোসরদের চারকোলশিল্পে ছড়ি ঘোরানো বন্ধ হয়নি। এই পণ্য রপ্তানিতে নিয়োজিত ট্রেডবডি বাংলাদেশ চারকোল রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিসিএমইএ) সভাপতি ছিলেন সাবেক পাট ও বস্ত্র প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজমের ছোট ভাই মির্জা জিল্লুর রহমান শিপন। সভাপতির অবৈধ চুক্তি এবং কর্তৃত্ববাদের কারণে এই শিল্প ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৫ আগস্ট পালাবদলের পর বৈষম্যবিরোধী চারকোল ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদের মুখে কমিটি ভেঙে যায়। তবে এ খাতের সংকট কাটেনি।  </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ব্যবসায়ীদের দেওয়া তথ্য মতে, দেশে বছরে ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টন পাটখড়ি উৎপাদিত হয়। কিন্তু সে হিসাবে এই খাতের বাজার আশানুরূপ বড় হয়নি। সিন্ডিকেটের কারণে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী ফুলেফেঁপে উঠলেও বড় হয়নি চারকোলশিল্প। ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, দেশে উৎপাদিত পাটখড়ির কমপক্ষে ৬০ শতাংশ ছাইয়ে রূপান্তর করা সম্ভব। তাহলে বছরে প্রায় সাড়ে চার লাখ টন ছাই উৎপন্ন হবে। বিশ্ববাজারে প্রায় ৯০০ থেকে ১১০০ ডলার দরে এর মূল্য দাঁড়ায় অন্তত ৪০ থেকে ৫০ কোটি ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় পাঁচ থেকে ছয় হাজার কোটি টাকা)। ওই বাস্তবতায় চীনের পাশাপাশি ইউরোপেও চারকোলের বড় বাজার তৈরি করা সম্ভব। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">জানা গেছে, চারকোল থেকে কার্বন পেপার, কম্পিউটার ও ফটোকপিয়ারের কালি, আতশবাজি ও ফেসওয়াশের উপকরণ, মোবাইলের ব্যাটারি, প্রসাধনপণ্য, দাঁত পরিষ্কারের ওষুধসহ বিভিন্ন দরকারি পণ্য তৈরি হয়। বর্তমানে এই শিল্পের বাজার প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার আশপাশে। প্রধান আমদানিকারক দেশ চীনে বাংলাদেশি এই পণ্যের চাহিদা বছরে আনুমানিক ১৫ হাজার টন। এ ছাড়া তাইওয়ান, ব্রাজিল, মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, জাপান, তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানিতে এই পণ্যের চাহিদা রয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তবে যতক্ষণ না আওয়ামী সিন্ডিকেট ভাঙা যাচ্ছে, এই সম্ভাবনা স্বপ্নই থেকে যাবে বলে মনে করেন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান কাশেম ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মাসউদুল ইসলাম। ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, ৫ আগস্টের পর বিভিন্ন শিল্প রাহুমুক্ত হলেও চারকোল খাতটি নিয়ে কেউ ভাবছে না। আওয়ামী সরকারের দোসররা এখনো এই শিল্পের নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নাড়ছে। তাদের গড়া সিন্ডিকেটের কারণে সাধারণ রপ্তানিকারকরা সময়মতো শিপিং করতে পারছেন না। এখন চারকোলের মৌসুম। সারা বছর ব্যবসায়ীরা এই সময়টির অপেক্ষায় থাকেন। কিন্তু শিপিং লাইন এবং চীনা ক্রেতাদের সঙ্গে স্বাভাবিক ব্যবসা পরিচালনা করা যাচ্ছে না। আওয়ামীপন্থী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে তাঁরা খুবই অসহায়। এ শিল্পকে বৈষম্যমুক্ত করতে শিল্প মন্ত্রণালয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছেন তাঁরা। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">মাসউদুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, সাবেক সভাপতি দায়িত্ব থেকে সরে গেলেও অদৃশ্যে তাঁর একক নিয়ন্ত্রণ চলছে। তাঁর গড়া সিন্ডিকেটের সদস্যরা দেশে শিপিং জটিলতা সৃষ্টির পাশাপাশি চীনেও সিন্ডিকেট গড়ে দিয়েছেন। ফলে একক বিদেশি বায়ারের হাতে দেশের পুরো চারকোলশিল্পকে তুলে দেওয়ার পাঁয়তারা চলছে। বিভিন্ন শিপিং কম্পানির সঙ্গে যোগসাজশ করে নিজেদের সিন্ডিকেটের বাইরে সাধারণ রপ্তানিকারকদের পণ্য বুকিং দেওয়ার দরজা বন্ধ করে দিয়েছেন। এমনকি দেশে চারকোলের কাঁচামাল পাটখড়ির দামও নিয়ন্ত্রণ করছে সিন্ডিকেটটি। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ফরিদপুরের একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, তিনি ২০১৭ সাল থেকে এই ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। কয়েক বছর ধরে গুটিকয়েক ব্যক্তির সিন্ডিকেটের কবলে এই শিল্পটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দেশে কাঁচামালের মূল্য বৃদ্ধি হলেও চীনে ভালো দর পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ এলাইড কার্বন লিমিটেডের পরিচালক জোবায়ের আহমেদের। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, শুধু সিন্ডিকেটের কারণে এই শিল্পটি আজ খাদের কিনারে চলে গেছে। তিনি আরো বলেন, কয়েকজন অসাধু ব্যবসায়ীর কূটকৌশলের কাছে তাঁরা জিম্মি। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বৈষম্যবিরোধী চারকোল ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন, খুবই কমসংখ্যক সদস্যের একটি অ্যাসোসিয়েশন হলেও এই শিল্পকে কর্তৃত্ব করতে স্বৈরাচারী সিন্ডিকেটের সময়ে বিধিবহির্ভূতভাবে নতুন ভোটার সংযুক্ত করা হয়েছে। ব্যবসার বিসিসিএমইএ-এর নির্বাচন বিধির ধারা-১৪-এর ক অনুযায়ী, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">চারকোল প্রতিষ্ঠান, ফার্ম বা কম্পানির শুধু একজন মালিক ভোটার এবং প্রার্থী হতে পারবেন।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> কিন্তু এই ধারা লঙ্ঘন করে অন্তত আটজন ব্যক্তিকে সদস্য করা হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অভিযোগ রয়েছে, জিনসিং ট্রেডিং কম্পানি, হুমায়ুন ইন্ডাস্ট্রিয়াল ট্রেড কম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ হোংলি লিমিটেড, জং লিয়াং কার্বন ফ্যাক্টরি, চারকোল মিলস বিডি লিমিটেড, ইয়াং বাংলা ম্যানুফ্যাকচারিং ইন্ডাস্ট্রি কম্পানি লিমিটেড, সিনোগ্লোবাল করপোরেশন এবং এআর ইনিশিয়েটিভসের পক্ষে যাঁদের সদস্য করা হয়েছে, তাঁরা কেউই সরাসরি কম্পানির মালিক নন।</span></span></span></span></span></p> <p> </p>