রাজধানীর পাশেই টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে ৫৮তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্বের প্রথম ধাপের আখেরি মোনাজাত আজ রবিবার। সকাল ৯টায় তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের শীর্ষ মুরব্বি মাওলানা জুবায়ের আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বলে জানিয়েছে ইজতেমা আয়োজক কমিটি।
তাবলিগ জামাতের দেশি-বিদেশি শীর্ষ মুরব্বি, আলেমদের গুরুত্বপূর্ণ বয়ান, নফল নামাজ, তাসবিহ-তাহলিল, জিকির-আজকারের মধ্য দিয়ে গতকাল শনিবার প্রথম ধাপের দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত করেছেন ইজতেমায় আগত ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।
ইজতেমার ইতিহাসে এবারই প্রথম তিন পর্বে তিনটি আখেরি মোনাজাত হচ্ছে।
দুই পক্ষের বিরোধের কারণে প্রশাসন এই ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রথম দুই পর্বে অংশ নেবেন শুরায়ে নেজামের তত্ত্বাবধানে মাওলানা জুবায়েরের অনুসারী মুসল্লিরা। শেষ পর্বে অংশ নেবেন মাওলানা সা’দ আহমাদ কান্ধলভীপন্থী মুসল্লিরা।
জানা গেছে, আজ আখেরি মোনাজাত শেষে আগত মুসল্লিরা ময়দান ত্যাগ করবেন।
পরে ৩ থেকে ৫ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে একই পক্ষের অবশিষ্ট মুসল্লিদের দ্বিতীয় ধাপের ইজতেমা। এরপর মাওলানা সা’দ আহমাদের অনুসারীরা ময়দানে প্রবেশ করে ১৪ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় পর্বের ইজতেমায় অংশ নেবেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি তাঁদের আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে বিশ্ব ইজতেমার ৫৮তম আসর।
মুসল্লিদের উদ্দেশে বয়ান : গতকাল শনিবার বাদ ফজর বয়ান করেন পাকিস্তানের মাওলানা খোরশেদ।
সকাল ১০টায় খিত্তায় খিত্তায় তালিম হয়। ওলামাদের উদ্দেশে বিশেষ বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। মাদরাসার ছাত্রদের উদ্দেশে নামাজের মিম্বারে বয়ান করেন ভারতের মাওলানা আকবর শরিফ। বাদ জোহর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইসমাঈল গোদরা এবং বাদ আসর বয়ান করেন ভারতের মাওলানা জুহায়ের।
তারপর বাদ মাগরিব বয়ান করেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা।
আজ রবিবার বাদ ফজর ভারতের মাওলানা আব্দুর রহমান বয়ান করবেন বলে আয়োজক কমিটি সূত্রে জানা গেছে। এরপর হেদায়েতি বা নসিহতমূলক বয়ান করবেন ভারতের মাওলানা ইব্রাহিম দেওলা। সব শেষে আখেরি মোনাজাত পরিচালনা করবেন বাংলাদেশের মাওলানা জুবায়ের।
মূল বয়ানগুলো উর্দু বা হিন্দি ভাষায় হলেও বাংলা, ইংরেজি, আরবি, তামিল, মালয়, তুর্কি ও ফরাসি ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ করা হচ্ছে। তাঁদের মধ্যে একজন মুরব্বি মূল বয়ানকে তাৎক্ষণিক অনুবাদ করে শোনান।
মাওলানা মামুনুল হক ও হাসনাত আবদুল্লাহর আগমন : বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ গতকালই ইজতেমা ময়দানে উপস্থিত হন। বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটে বিদেশি মেহমানদের গেট-২ দিয়ে প্রবেশ করেন তাঁরা। ময়দানে তাঁদের অভ্যর্থনা জানান বিশ্ব ইজতেমার শুরায়ে নেজামের আয়োজক কমিটির মুরব্বি প্রকৌশলী মাহফুজ হান্নান।
ময়দানে প্রবেশের পর তাঁরা মুসল্লিদের সঙ্গে খাওয়াদাওয়া করেন। এরপর তাঁরা ইজতেমা ময়দান ঘুরে দেখেন।
চিকিৎসাসেবা : টঙ্গী শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে গতকাল বিকেল ৫টা পর্যন্ত প্রায় ১৭০ জন মুসল্লি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। এঁদের মধ্যে ৯ জনকে ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে এবং ১৪ জনকে টঙ্গীতেই ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়া ইজতেমাস্থলের আশপাশে ২২টি ফ্রি মেডিক্যাল ক্যাম্পে কয়েক হাজার মুসল্লি বিভিন্ন রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে।
বিদেশি মুসল্লিদের অংশগ্রহণ : ইজতেমার প্রথম পর্বে গতকাল পর্যন্ত ভারত, পাকিস্তান, কুয়েত, সৌদি আরব, আফগানিস্তান, জাপান, ওমান, কানাডা, মোজাম্বিক, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, সিঙ্গাপুর, জর্দান, যুক্তরাজ্য, ভুটান, নেপাল, মালদ্বীপ, ইরান, সৌদি আরব, কানাডা, স্পেন, ইন্দোনেশিয়া, কাতার, বাহরাইন, দুবাইসহ প্রায় অর্ধশত দেশের দুই হাজারেরও বেশি মেহমান ময়দানে হাজির হয়েছেন। এ তথ্য জানিয়েছেন শুরায়ে নেজামের মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।
যৌতুকবিহীন বিয়ে : গতকাল বাদ আসর ৬৩ জোড়া বর-কনের যৌতুকবিহীন বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিয়ে পড়ান ভারতের মাওলানা জুহায়েরুল হাসান। ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য ও মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। পারস্পরিক সম্মতিতে বরেরা মূল বয়ান মঞ্চের সামনে উপস্থিত হন আর কনেরা নিজেদের গৃহে অবস্থান করেন। বিয়ে শেষে উপস্থিত মুসল্লিদের মধ্যে খুরমা-খেজুর বিতরণ ও দোয়া করা হয়।
আরো ২ মুসল্লির মৃত্যু : গতকাল শনিবার বিকেল পর্যন্ত বিশ্ব ইজতেমায় আগত আরো দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। তাঁরা হলেন হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল থানার ইয়াকুব আলী (৬০) এবং একই জেলার সদর থানার রামনগর গ্রামের মোহাম্মদ রমিজ উদ্দিন (৫৫)। এ নিয়ে ইজতেমায় প্রথম পর্বে মোট পাঁচজন মুসল্লির মৃত্যু হলো।