যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে মাঝ আকাশে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ ও সামরিক হেলিকপ্টারের সংঘর্ষের পর নদীতে বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় কমপক্ষে ২৮ জনের মরদেহ নদী থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রে ১৫ বছর পর কোনো যাত্রীবাহী বিমান দুর্ঘটনার শিকার হলো। দুর্ঘটনার শিকার উড়োজাহাজের ৬৪ আরোহী ও হেলিকপ্টারের তিন সেনার কেউই বেঁচে নেই বলে মনে করা হচ্ছে।
বুধবার রাতে রোনাল্ড রিগ্যান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল এয়ারপোর্টের কাছে মাঝ আকাশে আমেরিকান এয়ারলাইনসের একটি অভ্যন্তরীণ যাত্রীবাহী উড়োজাহাজের সঙ্গে মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি ব্ল্যাক হক হেলিকপ্টারের সংঘর্ষ হয়।
পরে উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টারটি হিমশীতল পটোম্যাক নদীতে বিধ্বস্ত হয়।
আমেরিকান এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে, উড়োজাহাজটিতে ৬৪ জন আরোহী ছিলেন। এর মধ্যে ৬০ জন যাত্রী ও চারজন ক্রু। আর এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, হেলিকপ্টারটিতে তিন সেনা ছিলেন।
সামরিক হেলিকপ্টারটি প্রশিক্ষণ ফ্লাইট ছিল।
২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারির পর যুক্তরাষ্ট্রে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজে কোনো প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটেনি। এর আগে ১৯৮২ সালে পটোম্যাক নদীর ওপর ফোরটিনথ স্ট্রিট ব্রিজে এয়ার ফ্লোরিডা ফ্লাইট ৯০ বিধ্বস্ত হয়েছিল। এই ঘটনায় ৭০ জন যাত্রী এবং চারজন ক্রু নিহত হন।
শুধু চার যাত্রী এবং একজন ক্রু বেঁচে গিয়েছিলেন।
হেলিকপ্টারটিকে বার্তা পাঠানো হয়েছিল
সংঘর্ষ হওয়ার আগে হেলিকপ্টারটিকে সতর্কবার্তা পাঠানো হয়েছিল। এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণকক্ষের কর্মকর্তারা হেলিকপ্টারের পাইলটের কাছে জানতে চেয়েছিলেন যে আমেরিকান এয়ারলাইনসের উড়োজাহাজটিকে দেখা যাচ্ছে কি না। নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে হেলিকপ্টারের পাইলটের উদ্দেশে বলা হয়, ‘পিএটি টু-ফাইভ, আপনি কি সিআরজে উড়োজাহাজটিকে দেখতে পাচ্ছেন?’ এরপর নিয়ন্ত্রণকক্ষ থেকে আবারও বলা হয়, ‘পিএটি টু-ফাইভ, সিআরজে উড়োজাহাজের পেছন দিক দিয়ে পার হোন।’
সংঘর্ষের আগ মুহূর্তে নিয়ন্ত্রণকক্ষের আরেকটি অডিওতে হেলিকপ্টারের পাইলটকে বলতে শোনা যায় ‘উড়োজাহাজটিকে দেখতে পেয়েছি পিএটি টু-ফাইভ, ভিজ্যুয়াল সেপারেশনের অনুরোধ জানাচ্ছি।
’ এরপর ১৩ সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে অডিওতে হাঁপানোর মতো কিছু শব্দ শোনা যায়। জোরে ‘ওহ’ বলে একটি শব্দও শোনা গেছে। বিধ্বস্ত হওয়ার সময় ওই শব্দগুলো ধারণ হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অডিওটিতে অন্য একটি উড়োজাহাজের পাইলটের কথাও শোনা গেছে, যিনি ওই সংঘর্ষ ও বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনাটি দেখেছেন এবং নিয়ন্ত্রণকক্ষকে নিশ্চিত করেছেন। আরেক পাইলটকে বলতে শোনা গেছে, ‘হ্যাঁ, আমরা রানওয়ের কাছে ছিলাম এবং পটোম্যাক নদীর অপর পাশে আগুনের শিখা দেখেছি।’
ওয়াশিংটনের প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা
মোমবাতির ঝলকানির মতো কিছু একটা আকাশে দেখেছিলেন অ্যারি শুলম্যান। জর্জ ওয়াশিংটন পার্কওয়ে ধরে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। রিগ্যান ওয়াশিংটন ন্যাশনাল বিমানবন্দরের পাশ দিয়ে গেছে এই রাস্তা।
শুলম্যান বলেন, ‘দেখে সব কিছু স্বাভাবিকই মনে হচ্ছিল। উড়োজাহাজটি ঠিকমতো নেমে আসছিল, কোনো ত্রুটি ছিল না।’ কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই পেছনে ফিরে চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় শুলম্যানের। তিনি বলেন, ‘আমি পেছনে ফিরে দেখি কিছুই আর ঠিকঠাক নেই। উড়োজাহাজটি দেখে মনে হচ্ছিল সেটি ডানদিকে বেঁকে যাচ্ছে। সম্ভবত ৯০ ডিগ্রি। আমি উড়োজাহাজের নিচের অংশ দেখতে পাচ্ছিলাম। বাইরে খুব, খুবই অন্ধকার ছিল। তাই উড়োজাহাজের নিচের অংশ ভালোমতো দেখতে পাওয়ার কথা না।’ তিনি আরো বলেন, ‘উড়োজাহাজটির নিচের অংশে উজ্জ্বল হলুদ আলো দেখা যাচ্ছিল। নিচ থেকে স্ফূলিঙ্গ বেরিয়ে আসছিল।’ সূত্র : সিবিএস, রয়টার্স, সিএনএন