স্মার্ট মিটার বাণিজ্যে আবার সক্রিয় বিপুর ভাই-বন্ধু চক্র

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
স্মার্ট মিটার বাণিজ্যে আবার সক্রিয় বিপুর ভাই-বন্ধু চক্র

বিদ্যুৎ খাতের নানা অনিয়ম-অপচয় ও বকেয়া বিল ঠেকাতে প্রি-পেইড মিটার সংযোজনের উদ্যোগ নিয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। বিদ্যুৎ খাতে সাড়ে চার কোটির বেশি গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটার দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। তবে মিটার কেনায় প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এই প্রি-পেইড মিটার আমদানির মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি হয়।

এই বাণিজ্যের পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে নেয় সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের ভাই-বন্ধু চক্র।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আরপিসিএলের তৎকালীন এমডি সবুর খান এবং ওজোপাডিকোর তৎকালীন এমডি সেলিম আবেদের নেতৃত্বে ডিপিএম বাণিজ্যের কার্যক্রম পরিচালিত হতো। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার থাকা সত্ত্বেও একই চক্র আবার সক্রিয় হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ ও ওজোপাডিকোর কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সহায়তায় বিপুর ভাই-বন্ধু চক্রকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চলছে।

দেশে প্রি-পেইড মিটার নিয়ে চলমান অব্যবস্থাপনার পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার কার্যকর সমাধান হতে পারে। স্মার্ট মিটারের সঙ্গে এমডিএমএস (মিটার ডাটা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার), এইচইএস (হেড অ্যান্ড সিস্টেম সফটওয়্যার), আরএফ (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি) এবং পিএলসি কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক রয়েছে।

বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোর অ্যাডভান্সড মিটারিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার (এএমআই) প্রকল্পের আওতায় বিল আদায়ে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার সংস্থাপনের কাজ শুরু হয়।

এই প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে কেন্দ্রীয় ডাটা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ চুরি রোধ সম্ভব হবে। তবে এর সূচনালগ্নেই একশ্রেণির অসাধু ও স্বার্থান্বেষী মহলের অশুভ আঁতাতের কারণে এটি ব্যর্থ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার এই প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও স্মার্ট মিটার বাস্তবায়নে বেশ কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোতে স্মার্ট মিটার ক্রয়ের ডিপিএম বাণিজ্যের সঙ্গে অসাধু কর্মকাণ্ড সরাসরি সম্পৃক্ত। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রি-পেইড মিটার এবং স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার ক্রয়ের ক্ষেত্রে ডিপিএম বাণিজ্যের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির চিত্র উঠে আসে।
বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠান ওজোপাডিকোতে চীনের প্রতিষ্ঠান হেক্সিং ইলেকট্রিক্যালের মাধ্যমে কোটি টাকার জালিয়াতি দুদকের তদন্তে প্রকাশিত হলেও পরবর্তী সময়ে তৎকালীন প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস পান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিপিএম প্রক্রিয়ায় টেন্ডার দেওয়ার জন্য ফের জোর তদবির চালানো হচ্ছে। মিটার সংযোজন প্রক্রিয়া সহজ করার নামে কোনো দরপত্র ছাড়া সরাসরি সরবরাহের জন্য দুটি সরকারি কম্পানি তৈরি করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ স্মার্ট ইলেকট্রিক্যাল কম্পানি লিমিটেড (বেসিকো) ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নিবন্ধিত হয়। বেসিকোতে ওজোপাডিকোর ৫১ শতাংশ এবং চীনের হেক্সিং ইলেকট্রিক্যাল কম্পানির ৪৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

এ ছাড়া স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার তৈরির জন্য বাংলাদেশ পাওয়ার ইক্যুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং কম্পানি লিমিটেড (বিপিইএমসি) নামে আরেকটি কম্পানি তৈরি করা হয়। রুরাল পাওয়ার কম্পানি লিমিটেডের (আরপিসিএল) ৫১ শতাংশ এবং চীনের সেনজেন স্টার ইনস্ট্রুমেন্ট কম্পানি লিমিটেডের ৪৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে এই কম্পানিতে। সেনজেন স্টারের নেপথ্যে রয়েছেন নসরুল হামিদের স্ত্রীর ভাই মাহবুব রহমান। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে স্মার্ট মিটার প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমান সরকারের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা গেছে, এই দুটি প্রতিষ্ঠানের মিটার উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো মেশিনারিজ নেই। তারা শুধু সংযোজনের জন্য কিছু টেস্ট মেশিন ব্যবহার করে। প্রকৃতপক্ষে উৎপাদন না করে নামমাত্র সংযোজনের মাধ্যমে মিটার সরবরাহ করছে। এর পাশাপাশি বাজারদরের তুলনায় অনেক বেশি আমদানি মূল্য দেখিয়ে তারা বিদেশে অর্থ পাচার করেছে। দরপত্র ছাড়াই বিভিন্ন সংস্থায় সরাসরি মিটার সরবরাহের সুযোগ পেয়েছে। কার্যাদেশের মূল্যের প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানি খরচ হিসেবে দেখিয়ে তারা চীনা অংশীদারি প্রতিষ্ঠানকে অর্থ দিয়েছে, আর নিজেরা মাত্র ৬-৭ শতাংশ মুনাফা দেখিয়েছে।

প্রি-পেইড মিটার সরবরাহের ব্যবসায় জড়িত স্বার্থান্বেষী একটি প্রভাবশালী ভাই-বন্ধু চক্র সরকারের কিছু প্রতিষ্ঠানের ছত্রছায়ায় থেকে সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ার আওতায় বিইএসসিও এবং বিপিইএমসি থেকে পুনরায় এক লাখ স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার ক্রয়ের পরিকল্পনা করছে। বিআরইবি এই মিটার ক্রয়ের জন্য মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ডিপিএম দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া এরই মধ্যে চূড়ান্ত করেছে। অথচ ডব্লিউজেডপিডিসিএর সম্প্রতি আহ্বান করা দুটি ওটিএম পদ্ধতির দরপত্রে চীনা প্রতিষ্ঠান দুটি তাদের ডিপিএম ব্যবসা নিশ্চিত করতে দেশীয় অংশীদার বিইএসসিও বা বিপিইএমসিকে অংশগ্রহণ করায়নি। বরং এই দুটি দরপত্রে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে তাদের চীনা অংশীদার হেক্সিং ও সেনজিন স্টার।

এভাবে হেক্সিং ও সেনজিন স্টার সরকারি বৈদ্যুতিক সংস্থা থেকে ডিপিএম পদ্ধতিতে কাজ নেওয়ার জন্য তাদের দেশীয় অংশীদারি প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে এবং অন্যদিকে ওটিএম পদ্ধতির দরপত্রে নিজেরা সরাসরি অংশগ্রহণ করে। ফলে লাভের পুরো অংশই চীনা এই প্রতিষ্ঠানগুলো নিচ্ছে। যেখানে দেশীয় অংশীদার প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান, সেখানে তাদের উপেক্ষা করে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর সরাসরি দরপত্রে অংশগ্রহণ স্পষ্টতই অনৈতিক এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী। তাই অবিলম্বে চীনা প্রতিষ্ঠান দুটিকে সরাসরি দরপত্রে অংশগ্রহণ বন্ধ করতে এবং দেশীয় অংশীদারদের মাধ্যমে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন।

এই ক্রয়প্রক্রিয়া দ্রুততর করার জন্য সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ার বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সরবরাহকারীরা মন্ত্রণালয়ে জোর তদবির ও প্রভাব বিস্তারে তৎপর রয়েছে। তাদের এই অশুভ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে বিআরইবির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই প্রক্রিয়াটি দ্রুততর করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

জনপ্রশাসনের প্রজ্ঞাপন জারি

বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তার আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ মর্যাদা ফেরত

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
বঞ্চিত ৭৬৪ কর্মকর্তার আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ মর্যাদা ফেরত

আওয়ামী লীগ আমলে বঞ্চিত দাবি করে আবেদন করা দেড় হাজার কর্মকর্তার (অবসরপ্রাপ্ত) মধ্যে ৭৬৪ জনকে সামাজিক মর্যাদা ফেরত দিল সরকার। পাশাপাশি তাঁদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। গতকাল রবিবার শেখ হাসিনার আমলে বঞ্চিত এসব কর্মকর্তাকে উপসচিব, যুগ্ম সচিব, অতিরিক্ত সচিব, গ্রেড-১ ও সচিব পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

আলাদাভাবে জারি করা মোট পাঁচটি প্রজ্ঞাপনে সচিব পদে ১১৯, গ্রেড-১ পদে ৪১, অতিরিক্ত সচিব পদে ৫২৮, যুগ্ম সচিব পদে ৭২ এবং উপসচিব পদে চারজনকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দেওয়া হয়।

ভূতাপেক্ষ পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন মন্ত্রিপরিষদসচিব ও বিসিএস ১৯৮২ নিয়মিত ব্যাচের মেধাতালিকায় প্রথম হওয়া ড. শেখ আবদুর রশীদ, প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মোখলেস উর রহমান, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. নাসিমুল গনি, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য (সিনিয়র সচিব) এম এ আকমল হোসেন আজাদ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব এহছানুল হক, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের, ভূমি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. এ এস এম সালেহ আহমেদ, ড. নেয়ামত উল্যা ভুঁইয়া, মমতাজ আহমেদ প্রমুখ।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কর্মকর্তারা এক বা একাধিক পদে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির তারিখ থেকে বিধি মোতাবেক প্রাপ্যতা অনুযায়ী সব আর্থিক সুবিধা পাবেন। বর্তমান অর্থবছরে তাঁদের বকেয়া পাওনার ৫০ শতাংশ দেওয়া হবে। অবশিষ্ট ৫০ শতাংশ দেওয়া হবে পরবর্তী অর্থবছরে।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বয়স ৫৭ বা ৫৯ বছর পূর্তি পর্যন্ত সর্বশেষ পদোন্নতিপ্রাপ্ত পদে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে চাকরিতে বহাল ছিলেন বলে বিবেচিত হবেন। অবসরোত্তর ছুটি বা অবসর প্রস্তুতি ছুটি শেষে অবসরের জন্য নির্ধারিত তারিখে সরকারি চাকরি থেকে অবসরে গেছেন মর্মে বিবেচিত হবেন। কর্মকর্তারা বিধি মোতাবেক তাঁদের প্রাপ্যতা অনুযায়ী বকেয়া বেতন-ভাতা ও পেনশন সমন্বয়পূর্বক আর্থিক সুবিধা পাবেন।

পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের এর আগে জারীকৃত পিআরএল বা এলপিআর আদেশ বাতিল করা হয়েছে।

বেতন নির্ধারণের সময় অবসরোত্তর ছুটি বা অবসর প্রস্তুতি ছুটি সমন্বয় করা হবে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানান, এই ৭৬৪ জন বঞ্চিত কর্মকর্তা শুধু সামাজিক মর্যাদা এবং তাঁদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেলেন। যে পদেই তাঁরা ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি পান না কেন, তাঁরা কিন্তু প্রশাসনে নিয়োগ পাবেন না। তাঁদের নিয়োগ দিতে হলে আলাদাভাবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হবে। সেটা সরকার চাইলে যে কাউকেই দিতে পারেন।

এর আগে আওয়ামী লীগ আমলে অবসরে যাওয়া বঞ্চিত ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি দিয়ে আর্থিক সুবিধা দেওয়ার সুপারিশ করে বঞ্চনা নিরসন কমিটি গত ১০ ডিসেম্বর প্রধান উপদেষ্টার কাছে তাদের প্রতিবেদন দেয়। এরপর বিষয়টি অনুমোদনের জন্য উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়। বিস্তারিত আলোচনা শেষে পরিষদ সিদ্ধান্ত দেয়, উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত বিভিন্ন স্তরে এসব কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতিও দেওয়া হবে। তবে সরকারি চাকরিতে তাঁদের পুনর্বহাল করা হবে না বা তাঁরা কখনো এই দাবি করতে পারবেন না।

আর্থিক কৃচ্ছ্রসাধনের কারণে প্রথম দফায় শুধু বকেয়া বেতন পাবেন বঞ্চিত এসব কর্মকর্তা। এ জন্য ২১ কোটি টাকা ছাড় করার অনুমোদন দেয় উপদেষ্টা পরিষদ। পর্যায়ক্রমে এসব কর্মকর্তার আনুতোষিক ও পেনশন বাবদ অর্থ ছাড় করা হবে। গত বছর ২৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে এ নিয়ে নাম প্রকাশ করে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক উপদেষ্টা কালের কণ্ঠকে জানান, উপদেষ্টা পরিষদে তাঁদের ভূতাপেক্ষ পদোন্নতি ও আর্থিক সুবিধা দেওয়ার বিষয়টি অনুমোদন করা হয়েছে। সরকারের ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে প্রথম দফায় বঞ্চিত কর্মকর্তাদের বকেয়া বেতন বাবদ অন্তত ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দিতে অর্থ বিভাগকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাকি পাওনা টাকা দেওয়া হবে।

জানা গেছে, যোগ্যতা থাকার পরও রাজনৈতিক তকমা দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরে প্রশাসনে হাজারো কর্মকর্তাকে বঞ্চিত করা হয়েছে। এই কর্মকর্তাদের বছরের পর বছর ফেলে রাখা হয়েছে গুরুত্বহীন পদে। মেধাবী, দক্ষ ও যোগ্য অনেক কর্মকর্তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করে ফেলে রাখা হয়েছিল দীর্ঘদিন। কাউকে কাউকে দেওয়া হয়েছিল বাধ্যতামূলক অবসর।

গত বছর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নেয়। সেই থেকে প্রশাসনে আমূল পরিবর্তন আসতে শুরু করে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে চুক্তিতে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ বাতিল করে অবসরে থাকা বঞ্চিত যোগ্য কর্মকর্তাদের প্রশাসনে নিয়োগ দেওয়া হয়। আর পদোন্নতিবঞ্চিত প্রশাসনে কর্মরত প্রায় ৭০০ কর্মকর্তাকে দেওয়া হয় পদোন্নতি।

 

মন্তব্য
বসুন্ধরা সিটি শপিং মল

‘ক্লিয়ারেন্স সেল’ ক্যাম্পেইনের সময় বাড়ল আরো ৪ দিন

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
‘ক্লিয়ারেন্স সেল’ ক্যাম্পেইনের সময় বাড়ল আরো ৪ দিন

বসন্তের আগমন উপলক্ষে কেনাকাটায় জমজমাট অফার নিয়ে বসুন্ধরা সিটি শপিং মলের ক্লিয়ারেন্স সেল ক্যাম্পেইনের মেয়াদ আরো চার দিন বাড়ানো হয়েছে। ক্রেতাদের আগ্রহের জন্য বসুন্ধরা সিটি শপিং মল কর্তৃপক্ষ ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে শুরু হওয়া ক্লিয়ারেন্স সেল ক্যাম্পেইনের মেয়াদ আগামীকাল ১১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বাড়িয়েছে।

এই আয়োজনে অংশ নিচ্ছে দেশসেরা আটটি অ্যাপারেল ব্র্যান্ড। অংশগ্রহণকারী ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে মেনস ওয়ার্ল্ড, ক্লাবহাউস, ক্যাপশন, স্প্ল্যাশ, ফ্রিল্যান্ড, ভোগ বাই প্রিন্স, কিউরিয়াস ও ইনফিনিটি।

বসুন্ধরা সিটির লেভেল-১-এ অ্যাট্রিয়ামে ক্লিয়ারেন্স সেল চলবে আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত।

 

মন্তব্য
ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর

আন্ডারগ্রাউন্ডের পানি সেচে কিছুই মেলেনি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
আন্ডারগ্রাউন্ডের পানি সেচে কিছুই মেলেনি

রাজধানীর ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির রহস্যজনক আন্ডারগ্রাউন্ডে জমে থাকা পানি নিষ্কাশন করেছে ফায়ার সার্ভিস। তবে সেখানে সন্দেহজনক কোনো কিছুই মেলেনি। গতকাল রবিবার সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হয়ে দুপুর ২টার দিকে এই সেচ কাজ শেষ হয়। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের নিচ থেকে সেচযন্ত্রের মাধ্যমে পানি তোলার পর আন্ডারগ্রাউন্ডে নোংরা আবর্জনা ও ভাঙা ইটের টুকরা পড়ে আছে। ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট একটি সেচযন্ত্রের মাধ্যমে এই পানি তোলে। ধানমণ্ডি লেকে ফেলা হয় পানি। পানি সেচের সময় সেখানে ভিড় জমায় উত্সুক জনতা।

ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলেন, বৃষ্টির পানি নিচে গিয়ে জমে থাকতে পারে।

সম্প্রতি ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও পাশের দুটি ভবনে ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। এ ঘটনার পর পাশের একটি ভবনের নিচে একাধিক ফ্লোরের সন্ধান মেলে। অনেকে এই আন্ডারগ্রাউন্ডে আয়নাঘর আছে বলে সন্দেহ করে।

সেই রহস্য উন্মোচনে ভবনের নিচে জমে থাকা পানি তুলে ফেলার কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস।

টানা ৩৬ দিন কোটা সংস্কারের তীব্র গণ-আন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে আশ্রয় নেন। ওই দিন গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে হাজার হাজার মানুষ।

ওই দিন রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর বিকেলে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। একই সময় জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ভবনের সামনের দিকে শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশে রাখা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিও।

গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর ভবনের গেট ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর শুরু করে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা। পরে এক পর্যায়ে নির্মীয়মাণ এই ভবনের নিচে আন্ডারগ্রাউন্ড ফ্লোরের সন্ধান পাওয়া যায়।

মন্তব্য
দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন

গুলশানে বিলাসবহুল ভবন ছিল টিউলিপের স্থায়ী ঠিকানা

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
গুলশানে বিলাসবহুল ভবন ছিল টিউলিপের স্থায়ী ঠিকানা
টিউলিপ সিদ্দিক

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক অবৈধ সম্পত্তি ভোগের অভিযোগ উঠেছে। সর্বশেষ ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ দাবি করেছে, টিউলিপ সিদ্দিক ঢাকায় তাঁর পরিবারের নামে নির্মিত এক বিলাসবহুল ১০ তলা ভবনের বাসিন্দা ছিলেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার কর্মকর্তারা ২০১৪ সালে অনুমান করেছিলেন, টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটেনের উত্তর লন্ডনের ক্যামডেনের কাউন্সিলর থাকা অবস্থায় তাঁর ‘স্থায়ী ঠিকানা’ ছিল অভিজাত অ্যাপার্টমেন্ট কমপ্লেক্স ‘সিদ্দিকস’।

উল্লেখ্য, টিউলিপের পারিবারিক পদবি ‘সিদ্দিক’।

গুলশানের ওই ভবনটি যে এলাকায় অবস্থিত, তা মূলত বিদেশি কূটনৈতিক মিশন ও বড়

করপোরেট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যলায়ের জন্য বিখ্যাত। আদালতের নথি ও সংবাদ প্রতিবেদনের সূত্রে বাংলাদেশে টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে যুক্ত ‘পঞ্চম প্রপার্টি’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

তবে লেবার পার্টির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশে টিউলিপের কোনো সম্পত্তি নেই এবং যে ঠিকানাগুলো তাঁর নয়, সেগুলো নিয়ে তাঁকে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে না।

তবে নগরমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগের এক মাস পেরিয়ে গেলেও টিউলিপ সিদ্দিক এখনো তাঁর সম্পত্তিসংক্রান্ত বিষয় ও বাংলাদেশে তাঁর খালা শেখ হাসিনার ক্ষমতাবাদী শাসনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নিয়ে প্রশ্নের মুখে আছেন।

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর নৈতিকতা বিষয়ক উপদেষ্টা স্যার লরি ম্যাগনাস তদন্ত করে দেখেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তির দেওয়া একটি ফ্ল্যাট নিয়ে টিউলিপ অনিচ্ছাকৃতভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছিলেন। এসংক্রান্ত অভিযোগ ওঠার পর টিউলিপ মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন। বাংলাদেশের দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) গাজীপুরের কানাইয়ায় একটি পারিবারিক অবকাশ কেন্দ্র খুঁজে পায় শেখ পরিবারের সংশ্লিষ্ট।

এই বাড়ির মধ্যে ‘টিউলিপস টেরিটরি’ নামে একটি প্লট রয়েছে। দুদক সেটির তদন্ত করছে বলে খবর প্রকাশের এক দিন পরই দ্য টেলিগ্রাফ টিউলিপ সিদ্দিকের সঙ্গে বাংলাদেশের আরো একটি প্রপার্টির তথ্য প্রকাশ করে।

পুরনো সরকারি নথি থেকে দেখা গেছে, ওই সম্পত্তিকে টিউলিপের ‘বর্তমান’ ও ‘স্থায়ী’ ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল। নথিটি ২০১৪ সালের মে মাসে ক্যামডেন কাউন্সিলরের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর তিন সপ্তাহ পরের তারিখে লিপিবদ্ধ করা হয়।

রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানে অবস্থিত ১০ তলা ভবনটি ২০১০ সালের দিকে নির্মিত।

ভবনটি টিউলিপ সিদ্দিকের বাবা শফিক আহমেদ সিদ্দিক, তাঁর দাদা বা পুরো পরিবারকে উদ্দেশ্য করে নামকরণ করা হয়েছে কি না তা স্পষ্ট নয়। এই ভবনটির মালিকানার বিষয়ে অবগত এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য টেলিগ্রাফকে বলেন, এটি পরিবারের এক সদস্যের মালিকানাধীন জমির ওপর নির্মিত হয়। তবে পরিবারটি এখনো ওই ভবনের কোনো ফ্ল্যাটের মালিক কি না বা ভবনটির নামকরণ কার নামে হয়েছে এ বিষয়ে লেবার পার্টি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

টিউলিপ সিদ্দিকের বাবা শফিক আহমেদ সিদ্দিক ‘সামপ্রতিক সময়’ পর্যন্ত ওই ভবনে বসবাস করতেন বলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে তাঁর বায়োতে লেখা ছিল। শফিক আহমেদ শেখ রেহানার স্বামী।

 

টিউলিপ সিদ্দিকের সম্পদের তথ্য চেয়ে ১২ দেশে দুদকের চিঠি

শেখ হাসিনার ভাতিজি ও ব্রিটিশ মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করা টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিকের সম্পদের তথ্য চেয়ে যুক্তরাজ্যসহ বিশ্বের ১২টি দেশে চিঠি পাঠিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বাংলাদেশ অ্যাটর্নি জেনারেলের দপ্তর থেকে মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিক্যুয়েস্টের (এমএলএআর) মাধ্যমে তথ্য চেয়ে এসব চিঠি পাঠানো হয়।

গতকাল রবিবার রাজধানী ঢাকার সেগুনবাগিচায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশনের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘কোনো ব্যক্তিকে আমরা ফোকাস করতে চাই না। বিশ্বের যেসব দেশে অর্থ পাচার হয়েছে বলে তথ্য রয়েছে, সেসব দেশ থেকে পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য আমাদের টিম কাজ করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশের ল এজেন্সিগুলো পাচারকৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারে আমাদের আশ্বস্ত করেছে। এর আগে তাদের সঙ্গে আমাদের একাধিক মিটিং হয়েছে। এ ক্ষেত্রেও (টিউলিপ সিদ্দিকের অনুসন্ধান) দুদকের অনুসন্ধান টিম কাজ করছে এবং অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও কাজ করছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ দেশের পাচারকৃত অর্থ পুনরুদ্ধারের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী।’

তিনি আরো বলেন, টিউলিপ সিদ্দিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট দেশেগুলোতে তথ্য চেয়ে এমএলএআর পাঠানো হয়েছে। শুধু যুক্তরাজ্যেই নয়, ১০ থেকে ১২টি দেশে টিউলিপের সম্পদের তথ্য চেয়ে এসব চিঠি পাঠানো হয়েছে।

গত ১৩ জানুয়ারি রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে শেখ হাসিনার বোন শেখ রেহানা, শেখ রেহানার ছেলে রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক (ববি) ও মেয়ে আজমিনা সিদ্দিককে প্রধান আসামি করে তিনটি মামলা করা হয়। প্রতিটি মামলায় শেখ হাসিনা ও টিউলিপ সিদ্দিককে সহযোগী আসামি করা হয়েছে।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ