স্মার্ট মিটার বাণিজ্যে আবার সক্রিয় বিপুর ভাই-বন্ধু চক্র

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
স্মার্ট মিটার বাণিজ্যে আবার সক্রিয় বিপুর ভাই-বন্ধু চক্র

বিদ্যুৎ খাতের নানা অনিয়ম-অপচয় ও বকেয়া বিল ঠেকাতে প্রি-পেইড মিটার সংযোজনের উদ্যোগ নিয়েছিল বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। বিদ্যুৎ খাতে সাড়ে চার কোটির বেশি গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটার দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছিল। তবে মিটার কেনায় প্রক্রিয়ার শুরু থেকেই অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এই প্রি-পেইড মিটার আমদানির মাধ্যমে কয়েক হাজার কোটি টাকা বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি হয়।

এই বাণিজ্যের পুরোটাই নিয়ন্ত্রণে নেয় সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের ভাই-বন্ধু চক্র।

জানা গেছে, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী আরপিসিএলের তৎকালীন এমডি সবুর খান এবং ওজোপাডিকোর তৎকালীন এমডি সেলিম আবেদের নেতৃত্বে ডিপিএম বাণিজ্যের কার্যক্রম পরিচালিত হতো। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার থাকা সত্ত্বেও একই চক্র আবার সক্রিয় হয়েছে। পল্লী বিদ্যুৎ ও ওজোপাডিকোর কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার সহায়তায় বিপুর ভাই-বন্ধু চক্রকে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা চলছে।

দেশে প্রি-পেইড মিটার নিয়ে চলমান অব্যবস্থাপনার পরিপ্রেক্ষিতে জনগণের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার কার্যকর সমাধান হতে পারে। স্মার্ট মিটারের সঙ্গে এমডিএমএস (মিটার ডাটা ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার), এইচইএস (হেড অ্যান্ড সিস্টেম সফটওয়্যার), আরএফ (রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি) এবং পিএলসি কমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক রয়েছে।

বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোর অ্যাডভান্সড মিটারিং ইনফ্রাস্ট্রাকচার (এএমআই) প্রকল্পের আওতায় বিল আদায়ে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহি নিশ্চিত করতে স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার সংস্থাপনের কাজ শুরু হয়।

এই প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে কেন্দ্রীয় ডাটা পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে বিদ্যুৎ চুরি রোধ সম্ভব হবে। তবে এর সূচনালগ্নেই একশ্রেণির অসাধু ও স্বার্থান্বেষী মহলের অশুভ আঁতাতের কারণে এটি ব্যর্থ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। বর্তমানে অন্তর্বর্তী সরকার এই প্রক্রিয়াকে স্বচ্ছ রাখার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিলেও স্মার্ট মিটার বাস্তবায়নে বেশ কিছু জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তবে বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাগুলোতে স্মার্ট মিটার ক্রয়ের ডিপিএম বাণিজ্যের সঙ্গে অসাধু কর্মকাণ্ড সরাসরি সম্পৃক্ত। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের প্রি-পেইড মিটার এবং স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার ক্রয়ের ক্ষেত্রে ডিপিএম বাণিজ্যের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির চিত্র উঠে আসে।
বিদ্যুৎ বিতরণ প্রতিষ্ঠান ওজোপাডিকোতে চীনের প্রতিষ্ঠান হেক্সিং ইলেকট্রিক্যালের মাধ্যমে কোটি টাকার জালিয়াতি দুদকের তদন্তে প্রকাশিত হলেও পরবর্তী সময়ে তৎকালীন প্রতিমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে অভিযুক্তরা বেকসুর খালাস পান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ডিপিএম প্রক্রিয়ায় টেন্ডার দেওয়ার জন্য ফের জোর তদবির চালানো হচ্ছে। মিটার সংযোজন প্রক্রিয়া সহজ করার নামে কোনো দরপত্র ছাড়া সরাসরি সরবরাহের জন্য দুটি সরকারি কম্পানি তৈরি করা হয়। এর মধ্যে বাংলাদেশ স্মার্ট ইলেকট্রিক্যাল কম্পানি লিমিটেড (বেসিকো) ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে নিবন্ধিত হয়। বেসিকোতে ওজোপাডিকোর ৫১ শতাংশ এবং চীনের হেক্সিং ইলেকট্রিক্যাল কম্পানির ৪৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

এ ছাড়া স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার তৈরির জন্য বাংলাদেশ পাওয়ার ইক্যুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং কম্পানি লিমিটেড (বিপিইএমসি) নামে আরেকটি কম্পানি তৈরি করা হয়। রুরাল পাওয়ার কম্পানি লিমিটেডের (আরপিসিএল) ৫১ শতাংশ এবং চীনের সেনজেন স্টার ইনস্ট্রুমেন্ট কম্পানি লিমিটেডের ৪৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে এই কম্পানিতে। সেনজেন স্টারের নেপথ্যে রয়েছেন নসরুল হামিদের স্ত্রীর ভাই মাহবুব রহমান। এসব কার্যক্রমের মাধ্যমে স্মার্ট মিটার প্রকল্পের স্বচ্ছতা নিশ্চিত হওয়া নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বর্তমান সরকারের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে জনগণের স্বার্থ রক্ষা করা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা গেছে, এই দুটি প্রতিষ্ঠানের মিটার উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় কোনো মেশিনারিজ নেই। তারা শুধু সংযোজনের জন্য কিছু টেস্ট মেশিন ব্যবহার করে। প্রকৃতপক্ষে উৎপাদন না করে নামমাত্র সংযোজনের মাধ্যমে মিটার সরবরাহ করছে। এর পাশাপাশি বাজারদরের তুলনায় অনেক বেশি আমদানি মূল্য দেখিয়ে তারা বিদেশে অর্থ পাচার করেছে। দরপত্র ছাড়াই বিভিন্ন সংস্থায় সরাসরি মিটার সরবরাহের সুযোগ পেয়েছে। কার্যাদেশের মূল্যের প্রায় ৯০ শতাংশ আমদানি খরচ হিসেবে দেখিয়ে তারা চীনা অংশীদারি প্রতিষ্ঠানকে অর্থ দিয়েছে, আর নিজেরা মাত্র ৬-৭ শতাংশ মুনাফা দেখিয়েছে।

প্রি-পেইড মিটার সরবরাহের ব্যবসায় জড়িত স্বার্থান্বেষী একটি প্রভাবশালী ভাই-বন্ধু চক্র সরকারের কিছু প্রতিষ্ঠানের ছত্রছায়ায় থেকে সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ার আওতায় বিইএসসিও এবং বিপিইএমসি থেকে পুনরায় এক লাখ স্মার্ট প্রি-পেইড মিটার ক্রয়ের পরিকল্পনা করছে। বিআরইবি এই মিটার ক্রয়ের জন্য মোটা অঙ্কের আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে ডিপিএম দরপত্র আহ্বানের প্রক্রিয়া এরই মধ্যে চূড়ান্ত করেছে। অথচ ডব্লিউজেডপিডিসিএর সম্প্রতি আহ্বান করা দুটি ওটিএম পদ্ধতির দরপত্রে চীনা প্রতিষ্ঠান দুটি তাদের ডিপিএম ব্যবসা নিশ্চিত করতে দেশীয় অংশীদার বিইএসসিও বা বিপিইএমসিকে অংশগ্রহণ করায়নি। বরং এই দুটি দরপত্রে সরাসরি অংশগ্রহণ করেছে তাদের চীনা অংশীদার হেক্সিং ও সেনজিন স্টার।

এভাবে হেক্সিং ও সেনজিন স্টার সরকারি বৈদ্যুতিক সংস্থা থেকে ডিপিএম পদ্ধতিতে কাজ নেওয়ার জন্য তাদের দেশীয় অংশীদারি প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে এবং অন্যদিকে ওটিএম পদ্ধতির দরপত্রে নিজেরা সরাসরি অংশগ্রহণ করে। ফলে লাভের পুরো অংশই চীনা এই প্রতিষ্ঠানগুলো নিচ্ছে। যেখানে দেশীয় অংশীদার প্রতিষ্ঠান বিদ্যমান, সেখানে তাদের উপেক্ষা করে চীনা প্রতিষ্ঠানগুলোর সরাসরি দরপত্রে অংশগ্রহণ স্পষ্টতই অনৈতিক এবং জাতীয় স্বার্থবিরোধী। তাই অবিলম্বে চীনা প্রতিষ্ঠান দুটিকে সরাসরি দরপত্রে অংশগ্রহণ বন্ধ করতে এবং দেশীয় অংশীদারদের মাধ্যমে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নির্দেশ দেওয়া প্রয়োজন বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন।

এই ক্রয়প্রক্রিয়া দ্রুততর করার জন্য সরাসরি ক্রয় প্রক্রিয়ার বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সরবরাহকারীরা মন্ত্রণালয়ে জোর তদবির ও প্রভাব বিস্তারে তৎপর রয়েছে। তাদের এই অশুভ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের ফলে বিআরইবির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই প্রক্রিয়াটি দ্রুততর করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বইয়ের দোকানে ভাঙচুর

দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

বিশেষ প্রতিনিধি
বিশেষ প্রতিনিধি
শেয়ার
দোষীদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় বইয়ের দোকান ভাঙচুরের তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গতকাল সোমবার রাতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানায়।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, এই হামলা বাংলাদেশের নাগরিকদের অধিকার এবং দেশের আইনের প্রতি অবজ্ঞার পরিচয় দেয়। এ ধরনের সহিংসতা এই মহান বাংলাদেশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উন্মুক্ত মনের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করে, যা ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষার সমর্থনে জীবন উৎসর্গকারী ভাষাশহীদদের স্মরণ করে।

বিবৃতিতে বলা হয়, অন্তর্বর্তী সরকার পুলিশ ও বাংলা একাডেমিকে এই ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশকে মেলায় নিরাপত্তা জোরদার করার এবং এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যেন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তা নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সরকার সংশ্লিষ্ট নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে দেশে যেকোনো ধরনের গণসহিংসতার ঘটনা বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছে।

এর আগে সন্ধ্যায় ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সেক্রেটারি বলেন, বিষয়টি নিয়ে বাংলা একাডেমির সঙ্গে কথা বলেছি।

তাদের দ্রুত ঘটনা জানাতে বলেছি, কারণ পুরো ঘটনা এখনো জানি না। বইমেলা খুবই পবিত্র জায়গা, তার পবিত্রতা আমরা রাখতে চাই।

মন্তব্য
ধানমণ্ডি ৩২ নম্বর

হাড়গোড়ের আলামত সংগ্রহ, সিআইডির ল্যাবে হবে পরীক্ষা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
হাড়গোড়ের আলামত সংগ্রহ, সিআইডির ল্যাবে হবে পরীক্ষা

রাজধানীর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে অর্ধেকের বেশি গুঁড়িয়ে দেওয়া শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি থেকে কিছু হাড়গোড় পাওয়ার কথা জানিয়েছে অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল সোমবার সকাল পৌনে ৮টার দিকে ধানমণ্ডি থানা পুলিশের উপস্থিতিতে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট এসে আলামত সংগ্রহ  করে।

ধানমণ্ডি থানার ওসি আলী আহমেদ মাসুদ বলেন, ৩২ নম্বরে কিছু হাড়গোড় পাওয়া গেছে। সেগুলো মানুষের নাকি অন্য কোনো প্রাণীর, সেটি নিশ্চিত করতে সিআইডির ক্রাইম সিন ইউনিট এসে আলামত সংগ্রহ করেছে।

আলামত সংগ্রহ শেষে সকাল সোয়া ১০টার দিকে সিআইডির টিম চলে গেছে বলে জানান ওসি মাসুদ।

সিআইডির মুখপাত্র বিশেষ পুলিশ সুপার জসীম উদ্দিন খান কালের কণ্ঠকে বলেন, সিআইডির ক্রাইম সিন অপরাধের আলামত সংগ্রহ করেছে। ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর এ বিষয়ে বলা যাবে। এই মুহূর্তে এর বেশি কিছু বলা যাবে না।

কবে নাগাদ পরীক্ষা হবে এবং কখন রেজাল্ট মিলতে পারে, সেটিও তিনি জানাতে পারেননি।

এর আগে রবিবার আয়নাঘর (গোপন বন্দিশালা) আছে কি নাএমন সন্দেহে ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে পানি সরায় ফায়ার সার্ভিস। পানি সেচ শেষে সেখানে কিছুই পায়নি বলে জানায় তারা।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করার পর ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।

ওই ঘটনার ছয় মাস পূর্তির দিন গত বুধবার ৩২ নম্বরের বাড়িটি ভাঙা শুরু হয়।

 

মন্তব্য
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী সীমান্ত

শূন্য রেখায় বিএসএফের সিসি ক্যামেরা স্থাপন বিজিবির প্রতিবাদ

ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
ভূরুঙ্গামারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
শেয়ার
শূন্য রেখায় বিএসএফের সিসি ক্যামেরা স্থাপন বিজিবির প্রতিবাদ

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে সীমান্তের শূন্য রেখায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছে। গত রবিবার রাতে উপজেলার সীমান্তবর্তী পাথরডুবী ইউনিয়নের দক্ষিণ বাঁশজানির ঝাকুয়াটারী এলাকায় মসজিদের সামনে একটি গাছে এই সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়। এ ঘটনায় কড়া প্রতিবাদ জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

জানা গেছে, দক্ষিণ বাঁশজানি সীমান্তের আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ৯এস-এর ৯৭৮ নম্বর সীমানা পিলারের পাশে শূন্য রেখায় একটি গাছে গত রবিবার রাতে বাংলাদেশের দিকে তাক করে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেন বিএসএফের ছোট গাড়ল ঝড়া ক্যাম্পের সদস্যরা।

সোমবার সকালে স্থানীয়রা বিষয়টি বিজিবিকে জানায়। বিএসএফকে ডেকে এই ঘটনার কড়া প্রতিবাদ জানায় বিজিবি এবং সিসি ক্যামেরাটি অপসারণ করতে বলা হয়। তবে সোমবার রাত পৌনে ৯টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সিসি ক্যামেরাটি খুলে নিয়ে যায়নি বিএসএফ।

কুড়িগ্রাম ২২ বিজিবির পরিচালক লে. কর্নেল মাসুদুর রহমান বলেন, শূন্য রেখায় সিসি ক্যামেরা স্থাপনের বিষয়ে বিএসএফকে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

এ নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তারা ক্যামেরা অপসারণের আশ্বাস দিয়েছে।

স্থানীয়রা বলে, দক্ষিণ বাঁশজানির ঝাকুয়াটারী সীমান্তের শূন্য রেখায় অবস্থিত ২০০ বছরের পুরনো একটি মসজিদের পুনর্নির্মাণকাজ চলছে। এই মসজিদের সামনে একটি গাছে রাতের আঁধারে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করেছে বিএসএফ, যা আমাদের নিরাপত্তার সংকট সৃষ্টি করেছে।

দক্ষিণ বাঁশজানির ঝাকুয়াটারী জামে মসজিদের মুয়াজ্জিন আলমগীর হোসেন বলেন, এই মসজিদে বাংলাদেশ ও ভারতের মুসল্লিরা নামাজ পড়েন। মসজিদটি আমাদের পূর্বপুরুষরা স্থাপন করেছেন। দেশভাগের সময় গ্রামের মাঝ দিয়ে সীমান্তরেখা টানা হলেও আমাদের সম্পর্ক ভাগ হয়নি। তখন থেকে আমরা একসঙ্গে এই মসজিদে নামাজ পড়ি। মসজিদের পুনর্নির্মাণকাজ চলছে।

এতে বিএসএফ বাধা দেয়। তাদের বাধায় দুই বছর ধরে মসজিদের কাজ বন্ধ রয়েছে। এখন রাতের আঁধারে তারা সিসি ক্যামেরা লাগিয়ে গেছে। এতে আমাদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে।

 

মন্তব্য

রমজানের আগে ন্যায্যমূল্যে ৪৪৫ টাকায় পাঁচ পণ্য দিচ্ছে টিসিবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
রমজানের আগে ন্যায্যমূল্যে ৪৪৫ টাকায় পাঁচ পণ্য দিচ্ছে টিসিবি
পবিত্র রমজান উপলক্ষে গতকাল থেকে শুরু হয়েছে টিসিবি পণ্য বিক্রি। রাজধানীর শান্তিনগর এলাকায় ক্রেতাদের ভিড়। ছবি : কালের কণ্ঠ

আসন্ন শবেবরাত ও রোজার আগে ন্যায্যমূল্যে ট্রাকসেল কার্যক্রম শুরু করল সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। পাঁচটি পণ্য মিলবে মাত্র ৪৪৫ টাকায়। প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ১০০ টাকায়, এক কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা, প্রতি কেজি চিনি ৭০ টাকা, প্রতি কেজি ছোলা ৬০ টাকা এবং আধা কেজি খেজুর ১৫৫ টাকায় বিক্রি শুরু করেছে টিসিবি। গতকাল সোমবার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পণ্য বিক্রি শুরু হয়।

জানা গেছে, গতকাল থেকে ঢাকা ও চট্টগ্রামে এ কার্যক্রম শুরু  হয়েছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ তথ্য কর্মকর্তা কামাল হোসেন বলেন, সোমবার সকাল ১০টা থেকেই টিসিবির ট্রাকসেল শুরু হয়। আজ মঙ্গলবার খুলনায় বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন বিক্রি কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন।

টিসিবির ট্রাক থেকে একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ দুই লিটার ভোজ্যতেল, দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারবে।

এর মধ্যে প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম ঠিক করা হয়েছে ১০০ টাকা। প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা, চিনি ৭০ টাকা, ছোলা ৬০ টাকা এবং আধা কেজি খেজুর ১৫৫ টাকা।

নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ অক্টোবর থেকে ঢাকা মহানগরের ৫০টি ও চট্টগ্রাম মহানগরের ২০টি স্থানে ট্রাকের মাধ্যমে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে টিসিবি। গত ৩১ ডিসেম্বরের পর এ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এর ৪০ দিন বাদে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিপণন শুরু করল টিসিবি।

টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির  বলেন, স্মার্ট কার্ডধারী নিম্ন আয়ের পরিবারের মাঝে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য (ভোজ্যতেল ও ডাল) বিপণন কার্যক্রম চলছে। আর যাদের কার্ড নেই, তারা ট্রাকসেল থেকে পণ্য কিনতে পারবে। স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডধারী পরিবারের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্যাদি সাশ্রয়ী মূল্যে বিক্রি চলমান। এর পাশাপাশি এখন থেকে সাধারণ ভোক্তার কাছে ঢাকা ও চট্টগ্রামে ভ্রাম্যমাণ ট্রাকের মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হবে।

এর মধ্যে রয়েছে তেল, ডাল, চিনি, ছোলা ও খেজুর। ঢাকার ৫০ পয়েন্টে এবং চট্টগ্রামের ২০টি পয়েন্টে এই কার্যক্রম পরিচালনা করেছে টিসিবি।

একই সঙ্গে চট্টগ্রামে এক মাস বন্ধ থাকার পর সোমবার থেকে পুনরায় ট্রাকসেলে ভোগ্যপণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে। সরকার সারা দেশে টিসিবির স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ডের মাধ্যমে ভোক্তাদের মাঝে ন্যায্যমূল্যের নিত্যপণ্য বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড অ্যাক্টিভ না হওয়ায় জানুয়ারি মাসে চট্টগ্রাম নগরী ও জেলার কোথাও টিসিবির পণ্য বেচা যায়নি। অবশেষে স্মার্ট ফ্যামিলি কার্ড ছাড়াই সোমবার থেকে নগরীতে উন্মুক্ত ট্রাকসেলের মাধ্যমে টিসিবির নিত্যপণ্য বিক্রি শুরু হয়েছে।

টিসিবি জানিয়েছে, যে কেউ লাইনে দাঁড়িয়ে ন্যায্যমূল্যের এসব পণ্য নিতে পারবে। নগরীর ৪১টি ওয়ার্ডে টিসিবির পণ্য বিক্রির জন্য ৬০টি পয়েন্ট নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ২০টি পয়েন্টে প্রতিদিন ট্রাকসেলের মাধ্যমে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হবে। প্রতি ট্রাক থেকে ২০০ জন ভোক্তা পণ্য কিনতে পারবে।

 

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ