চাঁদা দাবির অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগরের সদ্য অব্যাহতি পাওয়া মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করা হয়েছে। রংপুরের গঙ্গাচড়া থানার অধীন গ্রিন সিটি ইকো পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতিকুল ইসলাম ভূঁইয়া বাদী হয়ে গত শুক্রবার মামলাটি করেন। গতকাল রবিবার দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গঙ্গাচড়া মডেল থানার ওসি আল এমরান।
এদিকে নারায়ণগঞ্জ শহরের খানপুরের ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের স্টাফদের হুমকি-ধমকি দেওয়াসহ অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির এক সংগঠকসহ দুজনকে গতকাল আটক করেছে যৌথ বাহিনী।
এ সময় তাঁদের কাছ থেকে চার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
গঙ্গাচড়া মডেল থানার ওসি জানান, মামলায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদ হাসান খন্দকারের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরো সাত-আট জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারে এক লাখ টাকা এবং প্রতিদিন ২০ হাজার টাকা করে চাঁদা দাবির অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে মামলার বাদী আতিকুল ইসলাম ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, গঙ্গাচড়ার খলেয়া ইউনিয়নে তিনি ও তাঁর এক বোন গ্রিন সিটি ইকো পার্ক নির্মাণের কাজ শুরু করেন। পার্ক নির্মাণে পুকুর থেকে বালু উত্তোলনের প্রয়োজন দেখা দেয়। এই বালু উত্তোলনকে কেন্দ্র করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা নাহিদ হাসান খন্দকার চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। এ ঘটনায় নাহিদ হাসানের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা সাত-আটজনকে আসামি করে গঙ্গাচড়া মডেল থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
এদিকে মামলার এক দিন পর শনিবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের আহ্বায়ক ইমতিয়াজ আহম্মদ ইমতি ও সদস্যসচিব রহমত আলীর স্বাক্ষর করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নাহিদ হাসান খন্দকারকে সংগঠনটির মুখপাত্রের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।
এর আগে চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠায় শনিবার রাতে নাহিদকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশে স্বাক্ষর করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রংপুর মহানগর শাখার মুখ্য সংগঠক আলী মিলন।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি নাহিদ হাসান খন্দকারের এক লাখ টাকা চাঁদা দাবির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় শুরু হয়। তবে নাহিদ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
ভিডিওতে দেখা যায়, একটি পুকুর খনন করে বালু উত্তোলন ও পার্ক নির্মাণের বিষয়ে নাহিদের সঙ্গে কথা হচ্ছিল সেখানে থাকা এক ব্যক্তির (ভিডিওতে দেখা যায়নি)। নাহিদ ওই ব্যক্তির উদ্দেশে বলেন, ‘ব্যবসা আপনি বন্ধ করবেন কেন, ব্যবসা আপনিই চালান। আমি বলছি না আজকেই দিতে হবে। ভাইয়ের সাথে কথা বলেন। প্রয়োজনে সময় নেন। আপনি তো দেখছেন বিষয়টি কোথায় গেছে। ইউএনও-ডিসিকে সামলাতে হচ্ছে। যদি মনে হয় কিছু কমাবেন, তাহলে ভাইয়ের সাথে কথা বলেন। আমি চাই না আপনাদের কোনো সমস্যা হোক। জানেন তো, সংগঠন চালাতে হলে কী কী করতে হয়।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠকসহ দুজন আটক
নারায়ণগঞ্জে আটক হওয়া দুজন হলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিটির সংগঠক মো. জিদান হোসেন ও তাঁর সহযোগী ইকবাল হোসেন।
পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে মো. জিদান হোসেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা পরিচয় দিয়ে হাসপাতালের স্টাফদের হুমকি-ধমকিসহ বিভিন্নভাবে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে আসছিলেন। তিনি হাসপাতালের ভেতরে ইয়াবা সেবনসহ বিক্রিও করতেন। এ বিষয়ে কয়েকজন ভুক্তভোগী সেনাবাহিনীর কাছে অভিযোগ জানান। পরে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল দুপুরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ অভিযানে হাসপাতালের অভ্যন্তর থেকে জিদান ও ইকবাল হোসেনকে আটক করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা কমিটির আহ্বায়ক নিরব রায়হান বলেন, ‘মো. জিদান হোসেন জেলা কমিটির সংগঠক ছিলেন। তাঁকে আটকের বিষয়টি আমরাও জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে তাঁর বিরুদ্ধে আমরা সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।’
নারায়ণগঞ্জ ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক (সুপার) ডা. এম এ বাশার বলেন, যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করে নিয়ে গেছে। তাঁদের মধ্যে একজন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক বলে জানতে পেরেছি।
নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি নাসির উদ্দিন জানান, মো. জিদান আগে রংমিস্ত্রি হিসেবে ইন্টেরিয়রের কাজ করতেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি পিঠে ছররা গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন। এর পর থেকে তিনি সমন্বয়ক বনে যান। তিনি নিজে ইয়াবা সেবন করতেন ও বিক্রি করতেন। খানপুরের ৩০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে দালালিও করতেন। জিদান ও ইকবালকে আটক করার সময় তাঁদের কাছ থেকে চার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ বিষয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।