<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রমজান মাসের বিকেল মানে শহর থেকে গ্রাম পর্যন্ত ঘরে ঘরে ব্যস্ততা। এই ব্যস্ততা ইফতার আয়োজন ঘিরে। বাজার থেকে পরিবারের পুরুষরা নানা উপকরণ নিয়ে আসার পর সেসব উপকরণ দিয়ে ইফতারি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন নারীরা। এটিই রমজানের ইফতারের প্রচলিত দৃশ্য। তবে এর ব্যতিক্রম চিত্র দেখা গেছে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুলচারা গ্রামে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কুলচারা গ্রামের সব মুসলিম পরিবারের নারী-পুরুষ রমজান মাসের বিকেলটা বিশ্রামে কাটান। ইফতার আয়োজন নিয়ে তাঁদের বাড়তি ব্যস্ততা নেই। কারণ ওই গ্রামের বাসিন্দারা জানেন, ইফতারের আগমুহূর্তে গ্রামটির প্রতিটি ঘরে পৌঁছে যাবে প্রয়োজনীয় ইফতারি। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার কুলচারা গ্রামে রমজান মাসের শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত ঘরে ঘরে গরম ইফতারি পৌঁছে দেওয়ার রীতি শুরু হয় ছয় বছর আগে। গ্রামের মুরব্বিদের পরামর্শ নিয়ে যুবকরা এ উদ্যোগ শুরু করেন। গ্রামটির নির্দিষ্ট একটি স্থানে যুবকরা মিলে গ্রামবাসীর জন্য ইফতারি তৈরি করেন। তাঁদের তৈরি করা ইফতারের আইটেমে রয়েছে চপ, পিঁয়াজু, ঘুঘনি ইত্যাদি। এসব আইটেমের সঙ্গে আরো যা যা প্রয়োজন সেগুলো দিয়ে প্রস্তুত করা হয় ইফতারির প্যাকেট। পরিবারের সদস্য হিসাব করে পরিমাণমতো এসব প্যাকেট পৌঁছে দেওয়া হয় গ্রামটির ঘরে ঘরে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গ্রামবাসীও প্রতিদিন ইফতারি তৈরি করা যুবকদের জানিয়ে দেয় ওই দিন কার ঘরে কয়জনের ইফতারি দিতে হবে। সেই হিসাবে বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয় ইফতারি। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">২০২০ সালে কুলচারা গ্রামের কয়েকজন যুবক ওই গ্রামের মুরব্বিদের পরামর্শ নিয়ে ইফতারি তৈরির এই সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত হয়, গ্রামের কোনো বাড়িতে আলাদা করে আর ইফতারি তৈরির প্রয়োজন নেই। গ্রামের একটি নির্দিষ্ট স্থানে ইফতারি তৈরির পর তা বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে। এর জন্য যে খরচ হবে, তা গ্রামের প্রতিটি পরিবার সদস্য হিসাব করে দিয়ে দেবেন। তবে কোনো পরিবার যদি দিতে সমর্থ না হয়, তাতেও সমস্যা নেই। এর জন্য সচ্ছল পরিবারগুলো ইচ্ছা করলে বাড়তি কিছু টাকা দিতে পারবে। শুরুটা এভাবে শুরু হলেও ছয় বছর ধরে কুলচারা গ্রামে এটি ইফতারের রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ছয় বছর আগে শুরু হওয়া ইফতারের এই আয়োজন নির্বিঘ্নে অব্যাহত আছে। এ নিয়ে কখনো কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি। বরং একসঙ্গে গ্রামটির সবার ইফতারি তৈরি হওয়ায় গ্রামবাসীর মধ্যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি আরো অটুট হয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রমজানের পুরো মাস বাড়ি বাড়ি যেমন ইফতারি পৌঁছে দেওয়া হয়, আবার ছুটির দিন কিংবা সুবিধাজনক দিনে নির্দিষ্ট একটি স্থানে গ্রামবাসী একত্র হয়ে একসঙ্গে ইফতার করেন। মাঠে বিছানা পেতে তার ওপর ইফতারি সাজিয়ে পাশাপাশি বসে ইফতার করে কুলচারা গ্রামের বাসিন্দারা। এই সময় পরস্পরের প্রতি সৌহার্দ্যের অনন্য নজির তৈরি হয়।  </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গ্রামবাসীর অনেকে জানায়, এই আয়োজনের বেশ কিছু ভালো দিক রয়েছে। এতে গ্রামবাসীর মধ্যে সুসম্পর্ক অটুট হয়েছে। আর রমজান মাসজুড়ে গ্রামটির ধনী-গরিব সবার বাড়িতে একই ধরনের ইফতার করা হয়। এই আয়োজনের ফলে ইফতারির জন্য গ্রামবাসীকে বাড়তি কোনো ভাবনাও করতে হয় না। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কুলচারা গ্রামে ১৩০টি পরিবার রয়েছে। এবার এসব পরিবারে রোজাদারের সংখ্যা চার শতাধিক। ফলে এবার রমজানে প্রতিদিন চার শতাধিক ইফতারির প্যাকেট প্রস্তুত করতে হচ্ছে। এ কাজে নিয়োজিত যুবকরা মাগরিবের আজানের আগেই যে বাড়িতে যতজন রোজাদার আছেন, সে বাড়িতে ততগুলো ইফতারির প্যাকেট পৌঁছে দিয়ে আসেন। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গ্রামবাসী জানান, ২০২০ সালে করোনাকালে ওই গ্রামের আকবর আলী বিশ্বাস, হাফিজুর রহমান, প্রয়াত রিচার্ড রহমানসহ বেশ কজন বসে রমজান মাসে প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি ইফতার পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নেন। সেই উদ্যোগ এখন গ্রামটির রীতি হয়ে গেছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">২০২০ সাল থেকে কুলচারা গ্রামে রমজান মাসের বিকেল মানে গ্রামের যুবকরা একটি নির্দিষ্ট স্থানে ইফতার তৈরির পর সেসব ইফতার বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ায় ভীষণ ব্যস্ত। বেশ কটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গ্রামের যুবকরা ইফতারির প্যাকেট বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিতরণ করেন। রমজান মাসের প্রতিদিন বিকেলে সৌহার্দ্যের অপূর্ব এক পরিবেশ তৈরি হয় গ্রামটিতে।  </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গ্রামবাসী জানান, এই আয়োজনে ইফতারির ব্যয়ও কমেছে। প্রতি বাড়িতে আলাদাভাবে ইফতারি তৈরি করতে যে খরচ হয় সম্মিলিত এই আয়োজনে তা অনেক কমে গেছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কুলচারা গ্রামের অনেকে দেশের কোনো না কোনো শহরে বড় চাকরি বা ব্যবসা করছেন। আবার অনেকে প্রবাসী। তাঁরাও এই আয়োজনে অর্থ সহায়তা দেওয়ায় আয়োজনটি অনেক সহজ হয়ে গেছে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কুলচারা গ্রামের একজন গৃহবধূ বলেন, সবচেয়ে বেশি সুবিধা হলো, এই গ্রামের নারীদের দুপুরের পর আর তেমন কোনো কাজ থাকে না। এই সময়টায় নারীরা বিশ্রাম নিতে পারেন। ইফতারি জোগাড় করার পরিশ্রম এই গ্রামের নারীদের করতে হয় না। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কুলচারা গ্রামের রেফাউল ইসলাম বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এ বছর নিয়ে ছয় বছর চলছে এই আয়োজন। ইফতারের এই আয়োজন যুবকদের জন্য বেশ আনন্দের। তাঁরা আনন্দ নিয়ে প্রতিদিন বিকেলে ইফতারি তৈরির কাজ করেন। দেশের প্রতিটি গ্রামে এমন আয়োজন করা যেতে পারে। এতে পারস্পরিক সম্পর্ক অটুট হয়ে হানাহানি কমবে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>
