ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপ

জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা বন্ধের প্রস্তাবে সম্মত পুতিন

কালের কণ্ঠ ডেস্ক
কালের কণ্ঠ ডেস্ক
শেয়ার
জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা বন্ধের প্রস্তাবে সম্মত পুতিন

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন গতকাল মঙ্গলবার রাতে দেড় ঘণ্টা ফোনে কথা বলেছেন। ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কোন্নয়ন, কৃষ্ণসাগরে যুদ্ধবিরতি, মধ্যপ্রাচ্য, কৌশলগত অস্ত্রের বিস্তার ঠেকানো এবং ইরানকে নিয়ে আলোচনা করেছেন তাঁরা। ক্রেমলিন জানিয়েছে, জ্বালানি অবকাঠামোতে আগামী ৩০ দিন রাশিয়া ও ইউক্রেনের হামলা বন্ধ রাখার প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন পুতিন।

হোয়াইট হাউস এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ও প্রেসিডেন্ট পুতিন ইউক্রেন যুদ্ধের অবসান এবং যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেছেন।

এই সংঘাতের সমাপ্তি স্থায়ী শান্তির মাধ্যমে হওয়া উচিত বলে সম্মত হয়েছেন তাঁরা। একই সঙ্গে রাশিয়া ও ইউক্রেন এই যুদ্ধে যে রক্ত ও সম্পদ ব্যয় করেছে, তা দুই দেশের জনগণের প্রয়োজনে আরো ভালোভাবে ব্যয় করা উচিত বলে মত দিয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তার জোর দিয়েছেন উভয় নেতা।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, এই সংঘাত কখনোই শুরু হওয়া উচিত ছিল না এবং আন্তরিক ও সদিচ্ছায় শান্তি প্রচেষ্টার মাধ্যমে অনেক আগেই এর অবসান ঘটানো উচিত ছিল।

তাঁরা একমত হয়েছেন যে জ্বালানি অবকাঠামোতে যুদ্ধবিরতি এবং কৃষ্ণসাগরে একটি সামুদ্রিক যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন, পূর্ণ যুদ্ধবিরতি ও স্থায়ী শান্তির আলোচনার মাধ্যমে শান্তির প্রচেষ্টা শুরু হবে। মধ্যপ্রাচ্যে অবিলম্বে এই আলোচনা শুরু হবে।

ভবিষ্যত্ সংঘাত প্রতিরোধে সম্ভাব্য সহযোগিতার অঞ্চল হিসেবে মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে বিশদ আলোচনা করেছেন দুই নেতা। তাঁরা কৌশলগত অস্ত্রের বিস্তার ঠেকানোর প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলাপ করেছেন এবং এর বাস্তবায়ন নিশ্চিতে অন্যদের সঙ্গেও যোগাযোগ করবেন।

এ ছাড়া ইরানের কখনোই ইসরায়েলকে ধ্বংস করার অবস্থানে থাকা উচিত নয় বলে মত দিয়েছেন তাঁরা।

ট্রাম্প ও পুতিন একমত হয়েছেন যে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে উন্নত দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ফলে ভবিষ্যতে অনেক লাভ হবে। শান্তি অর্জনের পর বিশাল অর্থনৈতিক চুক্তি এবং ভূ-রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা এর মধ্যে অন্যতম।

এদিকে ক্রেমলিন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের আগামী ৩০ দিন জ্বালানি অবকাঠামোতে হামলা বন্ধ রাখার প্রস্তাবে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। তিনি অবিলম্বে রুশ সামরিক বাহিনীকে এসংক্রান্ত আদেশ দিয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কৃষ্ণসাগরে জাহাজের নিরাপদ যাতায়াত নিশ্চিতের প্রস্তাবে পুতিন গঠনমূলক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এবং এ ধরনের চুক্তির সুনির্দিষ্ট বিবরণ নিয়ে আরো বিশদ আলোচনা শুরু করতে সম্মত হয়েছেন।

পুতিন ট্রাম্পকে জানিয়েছেন, আজ বুধবার রাশিয়া ও ইউক্রেন ১৭৫ জন বন্দি বিনিময় করবে। রাশিয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন গুরুতর আহত ২৩ জন ইউক্রেনীয় সেনাকে মুক্তি দেবে মস্কো।

বিবৃতিতে বলা হয়, আলোচনা চালিয়ে যেতে রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষজ্ঞদল তৈরি করা হচ্ছে। পুতিন ইঙ্গিত দিয়েছেন যে সংঘাতের তীব্রতা রোধ এবং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক উপায়ে এর সমাধানের মূল শর্ত হলো বিদেশি সামরিক সহায়তা সম্পূর্ণ বন্ধ করা এবং কিয়েভকে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ না করা।

জ্বালানি অবকাঠামোতে আগামী ৩০ দিন হামলা বন্ধের বিষয়ে পুতিনের সম্মত হওয়ার বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কি বা অন্য কোনো কর্মকর্তার তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি। সূত্র : আলজাজিরা, বিবিসি

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

যাত্রী পরিবহন

শেয়ার
যাত্রী পরিবহন
কয়েক দিনের মধ্যেই বহু মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি যাবে প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদ করতে। এসব যাত্রী পরিবহনের জন্য পুরনো বাসে রং করছে অনেক কম্পানি। গতকাল রাজধানীর মাতুয়াইল থেকে তোলা। ছবি : ফোকাস বাংলা
মন্তব্য
সাবেক সেনা কর্মকর্তা আমলাদের উদ্যোগ

‘জনতার দল’ আত্মপ্রকাশ করছে আজ

সাইদ শাহীন
সাইদ শাহীন
শেয়ার
‘জনতার দল’ আত্মপ্রকাশ করছে আজ

নতুন বাংলাদেশের অঙ্গীকার নিয়ে আসছে আরেকটি নতুন রাজনৈতিক দল। নাম জনতার দল। দলের স্লোগান হবে ইনসাফ জিন্দাবাদ। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর খামারবাড়িতে আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে দলটি।

দলটি গড়ার পেছনে রয়েছেন সাবেক সামরিক ও সাবেক সরকারি কর্মকর্তারা। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও এই দলে যোগ দেবেন। কৌশলগত কারণে সবার নাম প্রকাশ করছে না দলটি।

দলটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নিচ্ছেন অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. শামীম কামাল।

দলের মুখপাত্র হবেন জাতিসংঘে কাজ করে আসা সাবেক সেনা কর্মকর্তা এবং ভূ-রাজনৈতিক ও নিরাপত্তাবিষয়ক লেখক ডেল এইচ খান। নতুন দলটিতে নবীন-প্রবীণের সমন্বয় কমিটি গঠন করা হবে। মধ্যমপন্থা হিসেবে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদ ধারণ করেই বাংলাদেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবে নতুন এই রাজনৈতিক দল।

জানা গেছে, কয়েক মাস ধরে এই রাজনৈতিক দলের গঠনপ্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে ব্যক্তিগত ও সামষ্টিকভাবে বেশ কয়েকটি বৈঠক ও আলোচনাসভা করেছেন প্রস্তাবিত এই দলের চেয়ারম্যান মো. শামীম কামালসহ অন্যরা।

দল গঠন ও পরিচালনার জন্য বেশ কয়েকটি কমিটি কাজ করছে। এর মধ্যে রয়েছে থিংকট্যাংক ও গঠনতন্ত্র প্রণয়ন কমিটি, উপদেষ্টা কমিটি, সংসদ সদস্য বাছাই কমিটি ও সাংগঠনিক পরিচালনা কমিটি। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সুধীসমাজের প্রতিনিধিদের কাছে আমন্ত্রণপত্র দিয়েছে দলটি।

এই দলে কারা যোগদান করছেনএমন প্রশ্নের জবাবে জনতার দলের মুখপাত্র ডেল এইচ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, আমরা এই মুহূর্তে সবার নাম প্রকাশ করতে পারছি না। তবে সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ও সৈনিকদের পাশাপাশি দেশের সব ধরনের শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি, মাদরাসাছাত্রদের সংগঠন প্রতিনিধি, এনজিওদের জোট, নারী সংগঠনের প্রতিনিধি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সংগঠন প্রতিনিধি, দেশের শীর্ষস্থানীয় বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের প্রতিনিধি, প্রবাসের বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ এই দলে যোগ দেবেন।

আমরা খুব শিগগির দেশব্যাপী সদস্য সংগ্রহ কার্যক্রম পরিচালনা করব।

জানা গেছে, দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলোর বেশ কয়েকজন নেতা জনতার দলে যোগ দিতে পারেন। সাবেক সামরিক কর্মকর্তা ছাড়াও সাবেক মন্ত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক আমলা, সাংবাদিক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, আইনজীবী নতুন এই রাজনৈতিক দলে যোগদানে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

এ ছাড়া দেশের শীর্ষ ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন উদ্যোক্তা এই দলে যোগ দিতে পারেন। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নেতৃত্ব দেওয়া কয়েকজন ব্যবসায়ীর এই দলে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দলের গঠনপ্রক্রিয়া শেষ না হওয়ার কারণে সবার নামের তালিকা প্রকাশ করছে না দলটি। আইনগতভাবে গঠনপ্রক্রিয়া শেষে পূর্ণাঙ্গ কমিটিসহ তালিকা প্রকাশ করা হবে।

বড় সম্মেলনের মাধ্যমে জাতীয় নির্বাহী কমিটি ঘোষণা করবে দলটি। দেশের ও প্রবাসের আপামর মানুষের জনতার দলে যোগ দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত অনেক সদস্য এই রাজনৈতিক দলে যুক্ত হতে পারেন। পাশাপাশি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সংগঠন থেকেও এই রাজনৈতিক দলে অনেকে যোগ দেবেন।

দল গঠনে সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয় করছেন মেজর জেনারেল (অব.) মাহবুব, মেজর জেনারেল (অব.) ইসমাইল ফারুক চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) ইবনে ফজল সায়েখুজ্জামান, লে. জেনারেল (অব.) সাব্বির আহমেদ, মেজর জেনারেল (অব.) এফ এম জাহিদ হোসেন ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. আবুল হাসেম।

দলের চেয়ারম্যান ব্র্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মো. শামীম কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ন্যায্যতাভিত্তিক বাংলাদেশ গঠনের উদ্দেশ্যে সত্, শিক্ষিত, দেশপ্রেমিক, নিঃস্বার্থ ভালো মানুষকে নিয়ে বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের আদর্শের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দলটি পরিচালিত হবে। আমরা একেবারেই প্রান্তিক পর্যায়ের মানুষের সমন্বয়ে দলটি গঠন করতে চাই, যেখানে সত্ ও দক্ষ মানুষ নেতৃত্ব দেবেন। গত ৫৩ বছরের বিতর্কিত রাজনীতিকে পেছনে ফেলে স্বচ্ছ রাজনীতি করতে চাই আমরা।

নির্বাচনের জন্য বিভিন্ন এলাকায় আঞ্চলিক কমিটির মাধ্যমে সত্ ও যোগ্য প্রার্থী খুঁজে বের করতে চায় দলটি। তবে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়াই তাদের মূল লক্ষ্য নয়। প্রাথমিকভাবে সামরিক সদস্য সমর্থিত হলেও এখানে সব পেশাজীবীর সমন্বয় থাকবে। এই দলের বড় অংশজুড়ে নেতৃত্ব দেবেন সমাজের তরুণ ও ছাত্ররা।

কেন এই রাজনৈতিক দলএমন প্রশ্নের জবাবে দলের চেয়ারম্যান বলেন, ইতিহাস বলছে, অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় নিয়ে ক্ষমতায় আসে। কিন্তু কিছুদিন পর তারা ভূমিছাড়া হয়ে যান। আমরা সেখান থেকে ব্যতিক্রম হয়ে দলটি এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। মীমাংসিত ঐতিহাসিক কোনো বিষয়ে আমরা বিতর্ক করব না। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর কিংবা ভূ-রাজনৈতিক পক্ষভুক্ত হবে না দলটি।

মন্তব্য

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনে তথ্য দিলেন সাবেক সেনাপ্রধান আইকেবি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনে তথ্য দিলেন সাবেক সেনাপ্রধান আইকেবি

গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের আহ্বানে তাদের গুলশান কার্যালয়ে গিয়েছিলেন সাবেক সেনাপ্রধান ইকবাল করিম ভূঁইয়া (আইকেবি)। প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা তিনি গুমসংক্রান্ত বিষয়ে কমিশনের প্রশ্নের জবাব দেন এবং নিজের স্মৃতিতে থাকা বিষয়গুলোও জানান।

গতকাল বুধবার নিজের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি বিষয়টি জানান এবং গুম ও অপহরণ সংক্রান্ত যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ দেশে সংঘটিত হয়েছে, এর সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে যে যেখানে যতটুকুই জানেন তা কমিশনকে জানাতে আহ্বান জানান। 

এর আগে এই সাবেক সেনাপ্রধান তাঁর লেখায় চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য তুলে ধরেন।

দীর্ঘ সময় র‌্যাবে দায়িত্ব পালনকারী জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে অপহরণ, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। জিয়াউল বর্তমানে কারাবন্দি এবং তাঁর অপরাধের বিচারপ্রক্রিয়া চলমান। 

সাবেক এই সেনাপ্রধান তাঁর পোস্টে লিখেছেন, আমার কর্ম অভিজ্ঞতায় সঞ্চিত কিছু লেখা সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ায় তা রাষ্ট্র, সমাজ ও সংস্থার বিভিন্ন অংশের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সেই পটভূমিতে অনেক ব্যক্তি, গোষ্ঠী ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এর বিভিন্ন দিক ও বিষয়ে জানার আগ্রহ জন্মেছে।

সেই পরিপ্রেক্ষিতে গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশন আজ ১৯ মার্চ বুধবার বেলা ১১টায় গুলশানে অবস্থিত তাদের কার্যালয়ে আমাকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল। তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে আমি যথাসময়ে সেখানে যাই এবং মহামান্য কমিশন বিভিন্ন বিষয়ে আমার কাছে আরো বিস্তারিত জানতে চায়। আমার স্মৃতিতে থাকা বিষয়গুলো তাদের জানাই এবং উনাদের নানা প্রশ্নের জবাব দিই। জাতীয় প্রয়োজনে গঠিত গুরুত্বপূর্ণ এই কমিশনের কার্যক্রম অধিকতর ফলপ্রসূ করার লক্ষ্যে আমার সঙ্গে উনাদের আলোচনা তিন ঘণ্টা ২৩ মিনিট স্থায়ী হয়ে বেলা ২টা ২৩-এ শেষ হয়।

তিনি আরো লেখেন, বিগত বছরগুলোতে জ্ঞাত বা অজ্ঞাত স্থানে বলপূর্বক গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান ও তাঁদের শনাক্ত করা এবং কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিলেন তা নির্ধারণ করা প্রয়োজন। সেই উদ্দেশ্যে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যসহ কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের নিকট থাকা তথ্য ও প্রমাণাদি সরবরাহ করে গুমসংক্রান্ত কমিশনের কার্যক্রমকে বেগবান করা আমাদের সবার দায়িত্ব ও কর্তব্য। আর তা যথাযথভাবে পালন করা গেলেই কেবল ভবিষ্যতে মানবতাবিরোধী অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে।

তাঁর বক্তব্য, একজন নাগরিক হিসেবে আমি বিশ্বাস করি, গুমসংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের এমন গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহযোগিতা করার জন্য এ কাজে জড়িত সব পক্ষ, ব্যক্তি ও চাকরিরত বা অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসা উচিত। গুম ও অপহরণ সংক্রান্ত যেসব মানবতাবিরোধী অপরাধ দেশে সংঘটিত হয়েছে, এর সঙ্গে জড়িতদের সম্পর্কে যে যেখানে যতটুকুই জানেন তা এই কমিশনকে অবহিত করা দরকার।

 

 

মন্তব্য

সব মামলা থেকে খালাস বাবর

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
সব মামলা থেকে খালাস বাবর

অস্ত্র মামলায় ১৭ বছরের কারাদণ্ড থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুত্ফুজ্জামান বাবরকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেছেন, অস্ত্র উদ্ধার, আটক এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলার পুরো বিষয়টি ছিল কারসাজি। আর এই কারসাজির প্রধান ভিকটিম (ভুক্তভোগী) হলেন লুত্ফুজ্জামান বাবর।

বিচারিক আদালতের সাজার বিরুদ্ধে বাবরের আপিল মঞ্জুর করে বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরীন আক্তারের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল বুধবার এই রায় দেন।

হাইকোর্টে বাবরের আপিলের শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সুলতানা আক্তার রুবী।

রায়ের পর আইনজীবী শিশির মনির সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে লুত্ফুজ্জামান বাবরের বিরুদ্ধে আর কোনো সাজা থাকল না।

নির্বাচন থেকে শুরু করে সব কিছুর জন্য তিনি এখন আইনগতভাবে উপযুক্ত। আমরা আশা করব, দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষাকে সামনে রেখে তিনি পরবর্তী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবেন।

মামলার প্রক্রিয়া নিয়ে রায়ের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে এই আইনজীবী বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে রাজি না হওয়ায় এই মামলা করা হয়েছিল। তাঁকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পর তাঁর বাড়ি থেকে অস্ত্র উদ্ধারের নাটক সাজানো হয়েছিল।

যেদিন তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়, তার সাত দিন পর মামলা করা হয়েছে। এই জন্য হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, এই মামলাটি করার যে প্রক্রিয়া সেই প্রক্রিয়াই ছিল অবৈধ। এ জন্য মামলার প্রক্রিয়াটিই অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। আর যেসব সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বাবরকে সাজা দেওয়া হয়েছে, সেসব সাক্ষ্য-প্রমাণ বিশ্লেষণ করে হাইকোর্ট রায়ে বলেছেন, একজনের সাক্ষ্যের সঙ্গে আরেকজনের সাক্ষ্যের কোনো মিল নেই। এগুলোর সবই ছিল এক-এগারো সরকারের কারসাজি।
এই কারসাজির প্রধানতম ভিকটিম (ভুক্তভোগী) ছিলেন লুত্ফুজ্জামান বাবর। এই মামলায় বাবরের আটকাদেশকে হাইকোর্ট অবৈধ ঘোষণা করেছেন বলেও জানান আইনজীবী শিশির মনির।

মামলার বিবরণীতে বলা হয়েছে, ২০০৭ সালের ২৭ মে যৌথ বাহিনী লুত্ফুজ্জামান বাবরকে বাসা থেকে আটক করে। পরদিন তাঁকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়। গ্রেপ্তারের সাত দিন পর অর্থাত্ ৩ জুন বাবরের বিরুদ্ধে গুলশান থানায় অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ও ১৯(চ) ধারায় একটি মামলা করেন গুলশান থানার এসআই হেলাল উদ্দিন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারের দিন রাত সাড়ে ৯টায় যৌথ বাহিনী ও গুলশান থানা পুলিশ বাবরের বাসায় তল্লাশি চালায়। ওই তল্লাশি অভিযানে রিভলভার, পিস্তল, রাইফেল ও শটগান জব্দ করা হয়। এসব অস্ত্রের লাইসেন্সের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে তাঁর স্ত্রী তিনটি অস্ত্রের লাইসেন্স দেখালেও রিভলভারেরটি দেখাতে পারেননি। এর ২০ দিন পর ২০০৭ সালের ২৩ জুন তদন্তকারী কর্মকর্তা বাবরের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেন। অভিযোগ গঠনের পর বিচার শুরু হলে আদালত রাষ্ট্রপক্ষের অভিযোগ প্রমাণে ১৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেন। সাক্ষ্যগ্রহণ ও যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে ২০০৭ সালের ৩০ অক্টোবর ঢাকার মেট্রোপলিটন স্পেশাল ট্রাইব্যুনাল-৯ বাবরকে অস্ত্র আইনের ১৯(ক) ধারায় ১০ বছর এবং ১৯(চ) ধারায় সাত বছর সর্বমোট ১৭ বছরের সাজা ঘোষণা করে রায় দেন। এই রায়ের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালেই হাইকোর্টে আপিল করেন বাবর, যার ওপর শুনানি শেষে খালাসের রায় দিলেন উচ্চ আদালত।

গত বছর ১ ডিসেম্বর ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মামলা থেকে বাবরকে খালাস দেন হাইকোর্ট। এই মামলায় তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছিলেন বিচারিক আদালত। এরপর গত ১৮ ডিসেম্বর বহুল আলোচিত ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনের মামলা থেকেও তাঁকে খালাস দেওয়া হয়। এই মামলায়ও তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। আর ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় অস্ত্র আইনের আরেক মামলায় গত ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্ট তাঁকে খালাস দেন। এই মামলায় বিচারিক আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।

 

 

 

 

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ