একই রাতে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় ধানখালী ইউনিয়নে কাতারপ্রবাসীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। উপজেলার ধানখালী গ্রামে এই ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা টাকা ও স্বর্ণালংকার লুটে নেয়।
একই দিন রাত ৮টায় সাভারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সিঅ্যান্ডবি এলাকায় চলন্ত বাসে যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এর আগে সোমবার সন্ধ্যায় নরসিংদীর মনোহরদীতে সড়কে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতরা বেসরকারি নেসলে কম্পানির পিকআপ ভ্যান আটকে প্রায় তিন লাখ টাকা লুটে নেয়।
হাইওয়ে পুলিশের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশের মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় এক হাজার ৪০০ জনের একটি তালিকা করা হয়েছে। ২০০৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ২০ বছরে মহাসড়কে ডাকাতির বিভিন্ন ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিরা এই তালিকায় রয়েছে। তালিকায় থাকা প্রত্যেকের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি-অপারেশন) শফিকুল ইসলাম।
গবেষণা ও সচেতনতামূলক প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য রোডের তথ্য মতে, গত আট মাসে সড়ক, রেল ও নৌপথে চার হাজার ৫০৫টি ছিনতাই এবং ২৫৫টি ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে শুধু সড়কপথে এক হাজার ৮৬৮টি ছিনতাই আর ১১৩টি ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় আহত হন ১৬৮ জন। এ ছাড়া ফুটপাত বা চলার পথে দুই হাজার ৪৩২টি ছিনতাই ও ৩৫টি ডাকাতির ঘটনায় এক হাজার ১৭ জন আহত এবং একজন নারীসহ দুজন নিহত হয়েছেন।
সড়ক পরিবহন মালিক সমিতি সূত্র জানায়, ঈদ ঘিরে রাজধানী থেকে বিভিন্ন জেলায় একটি বাস দিনে অন্তত তিনটি করে ট্রিপ দিচ্ছে। এবার ডাকাত আতঙ্ক নিয়েই যাত্রীসেবা দিতে হবে। এ অবস্থায় সড়ক পরিবহন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কে, বিশেষ করে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে নিরাপত্তা যথেষ্ট বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে সড়ক-মহাসড়ক, সেতু ও রেলপথের যাত্রীদের যাতায়াত নিরাপদ ও নির্বিঘ্ন করতে সম্প্রতি আয়োজিত এক আন্ত মন্ত্রণালয় সভায় মহাসড়কে ডাকাতির বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
ওই সভায় জানানো হয়, মহাসড়কে সবচেয়ে বেশি ডাকাতি হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-আরিচা, ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে; বিশেষ করে প্রবাসী যাত্রীরা যেসব বাসে ওঠেন, ওই বাসগুলো বেশি মাত্রায় ডাকাতির কবলে পড়ে।
বাস মালিক সমিতি বলছে, যাত্রীবেশে ডাকাতরা বাসে উঠে চালক, সহকারী, সুপারভাইজারসহ যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-রাজশাহীসহ দূরপাল্লার বিভিন্ন রুটে রাতের বেলা যাত্রী কমে গেছে।
পরিবহন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতির কারণে স্বাভাবিকভাবেই গণপরিবহনে ডাকাতির ভয় রয়েছে। শুধু যে মহাসড়কে ডাকাতির ভয়, বিষয়টি এমন নয়। জেলা-উপজেলা পর্যায়ে আঞ্চলিক সড়কেও গণপরিবহনে ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এভাবে চলতে থাকলে যাত্রীরা নিরাপত্তাহীনতায় পড়বেন।’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব সাইফুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘হাইওয়ে পুলিশসহ আমরা কাজ করছি, কিভাবে ঈদ যাত্রা নিরাপদ করা যায়। যাত্রীদেরও সচেতন থাকতে হবে। আশপাশের কোনো যাত্রীকে সন্দেহজনক মনে হলে আগে থেকেই হাইওয়ে পুলিশকে তথ্য দেওয়া অথবা কৌশলে চালক বা সহকারীকে তথ্য দিলে সুযোগমতো টহল পুলিশের সামনে বাস দাঁড় করিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে।’
হাইওয়ে পুলিশের প্রধান ও অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মহাসড়কে ডাকাতি-দস্যুতা ও ছিনতাই প্রতিরোধে আমরা তৎপর রয়েছি। নতুন করে ৭০০ ফোর্স বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তাব্যবস্থা সাজানো হয়েছে। একটি অ্যাপসের মাধ্যমে টহল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। তিন হাজার ৯০০ কিলোমিটার মহাসড়কে সাড়ে তিন শতাধিক টহলদল কাজ করছে।’
২৬ থেকে ২৯ মার্চ মহাসড়কে চাপ বেশি থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘মহাসড়কের নিরাপত্তা ও নিরাপদ যান চলাচল নিশ্চিত করতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে এক হাজার ৪০০ ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। এক হাজার ৩৫০ ক্যামেরা চালু আছে। ঢাকা-মাওয়া সড়কে সড়ক কর্তৃপক্ষের স্থাপিত ক্যামেরার সার্ভারে কানেকশন নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।’
রাজধানীতে ডাকাতিসহ নানা অপরাধ বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, অপরাধ নিয়ন্ত্রণে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী তৎপর রয়েছে। বিশেষ করে ঈদ ঘিরে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থনে রয়েছে পুলিশ।