<p>শহরের চেয়ে গ্রামের মানুষ বাতজনিত রোগে বেশি ভুগছে। আক্রান্তদের বেশির ভাগই নারী। শিশু, বৃদ্ধ বা তরুণ সব বয়সেই মানুষ বাতের ব্যথায় আক্রান্ত হতে পারে।</p> <p>চিকিৎসকের ভাষায়, এই বাতকে আর্থ্রাইটিস বলা হয়। রোগীর প্রধান লক্ষণ হলো শরীরের বিভিন্ন হাড়, জয়েন্ট অথবা শরীরের বিভিন্ন অংশ যেমন—ঘাড়, কোমর, হাঁটু, কনুই, কবজি, রগ বা মাংশপেশির ব্যথা।</p> <p>নারীদের বেশি বাত ব্যথায় আক্রান্ত হওয়ার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দীর্ঘ সময় একইভাবে বসে কাজ করা এবং বেশি ওজন বহন করায় গ্রামের নারীদের এই রোগ বেশি হয়। একই সঙ্গে পুষ্টিহীনতায় ভোগেন তাঁরা। ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-ডি, আয়রন ও সিলিকনসমৃদ্ধ খাবার তাঁরা কম খান। এসব কারণে তাঁদের হাড় দুর্বল হচ্ছে।</p> <p>সাধারণত বাতের রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে থাকেন রিউমাটোলজিস্টরা। সরকারি হাসপাতালে বহির্বিভাগে রিউমাটোলজি বিভাগের সেবা দেওয়া হলেও বাত রোগীর চিকিৎসা এখনো ঢাকাকেন্দ্রিক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) ছাড়া অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে রিউমাটোলজিতে মাস্টার অব মেডিসিন (এমডি) কোর্স করারও সুযোগ নেই।</p> <p>এমন পরিস্থিতিতে আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব আর্থ্রাইটিস দিবস। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘লিভিং উইথ এন আরএমডি অ্যাট স্ট্যাজেস অব লাইফ’।</p> <p>সমীক্ষায় দেখা গেছে, বিশ্বজুড়ে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষের জীবনের কোনো না কোনো সময় কোমর ব্যথা হয়েছে বা হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। এতে যেমন কর্মক্ষমতা লোপ পায়, তেমনি নষ্ট হয় কর্মের সময়ও। পাশাপাশি রয়েছে মানসিক বিপর্যয় ও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার দিক। আর চিকিৎসা বাবদ যে অর্থ ব্যয় হয়, তা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক।</p> <p>বিএসএমএমইউর ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন বিভাগের অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মোজাফফর আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, প্রদাহজনিত বাতরোগ পুরোপুরি সুস্থ হয় না। তবে চিকিৎসা নিলে দীর্ঘ সময় ভালো রাখা যায়। বিভিন্ন বয়সে নানা কারণে এই রোগ হতে পারে। প্রথমত, ব্যথার কারণ হলো আর্থ্রাইটিস। এতে শরীরের বিভিন্ন জয়েন্ট ফুলে যায়। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা না নিলে একসময় জয়েন্টগুলো নষ্ট হয়ে যায় এবং মানুষ কর্মক্ষম হয়ে পড়ে। এটি বেশি হয়ে থাকে নারীদের ক্ষেত্রে।</p> <p>ডা. সৈয়দ মোজাফফর বলেন, পুরুষদের ক্ষেত্রে কোমরে ব্যথা হয়। দীর্ঘ সময় কাজ করলে, বাঁকা হয়ে একই অবস্থানে থাকলে এবং ওজন বহন করলে এটা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিশ্রাম নিলে বা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ সেবনে ভালো হয়ে যায়। কিন্তু প্রদাহজনিত বাতরোগ সম্পূর্ণ সুস্থ হয় না। অনেক সময় চিকিৎসার পর আবার এটি হতে পারে, বিশেষ করে অস্টিওপরোসিস বয়সজনিত কারণে হয়ে থাকে। হাড় দুর্বল হয়ে ভেঙে যায়। পঞ্চাশোর্ধ্ব বয়সী মানুষের এটি বেশি হয়। এই বয়সে প্রতি তিনজনে একজন নারীর এ সমস্যা হয়ে থাকে।</p> <p><strong>শিশুদের অস্থিসন্ধি প্রদাহের কারণ</strong></p> <p>বিএসএমএমইউর শিশু বিভাগের চেয়ারম্যান ও শিশু রিউমাটোলজি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মানিক কুমার তালুকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, শতকরা ১০ থেকে ২০ ভাগ শিশু মাংসপেশি, হাড় ও অস্থিসন্ধির রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুদের এই সমস্যাগুলো বর্তমানে ক্রমবর্ধমান।</p> <p>তিনি বলেন, অস্থিসন্ধির প্রদাহ বলতে বোঝায় ফুলে যাওয়া, তরল পদার্থ নিঃসরণজনিত অবস্থা অথবা নিচের যেকোনো দুই বা ততোধিক অবস্থা। যেমন—অস্থিসন্ধি নাড়াতে না পারা। নাড়ানোর সময় ব্যথা অনুভূত হওয়া, অস্থিসন্ধি গরম হয়ে যাওয়া। অস্থিসন্ধি প্রদাহের ৮০ শতাংশ রোগ নির্ণয় হয়ে থাকে রোগের ইতিহাস থেকে, ১৫ শতাংশ শারীরিক লক্ষণ এবং মাত্র ৫ শতাংশ বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে। একক কোনো পরীক্ষা এ ধরনের রোগ নিশ্চিত করতে পারে না। অস্থিসন্ধি প্রদাহজনিত রোগ সম্পর্কে সচেতনতা, দ্রুততার সঙ্গে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু করা গেলে সুস্থভাবে জীবন যাপন করা সম্ভব।</p>