<p>রাজধানীর পুরান ঢাকার বাবুবাজার সেতুর নিচের সড়কটি সব সময় ব্যস্ত থাকে। পণ্যবাহী শত শত ট্রাক প্রতিদিন এই সড়ক ব্যবহার করে চকবাজার ও বাদামতলীর পাইকারি বাজারে যায়। চকবাজারের পাশের ইসলামপুরের কাপড় ব্যবসায়ীরাও তাঁদের পণ্য আনা-নেওয়ায় এই সড়কের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। পুরান ঢাকার একাংশের বাসিন্দারাও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে যান এই সড়ক দিয়ে।</p> <p>সড়কটি বুড়িগঙ্গার পার থেকে গুলিস্তানের দিকে যেতে বাবুবাজার সেতুর নিচের গুরুত্বপূর্ণ (সেতু যেখানে শেষ হয়েছে) অংশে চলছে ড্রেনেজ কাজ। প্রায় তিন মাসের বেশি সময় ধরে চলা উন্নয়ন কাজের কারণে সড়কটির এক পাশ (বাঁ-পাশ) বন্ধ। এতে করে ভোগান্তিতে পড়ছেন স্থানীয় বাসিন্দা এবং দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ব্যবসায়ীরা।</p> <p>গতকাল শুক্রবার সকালে সরেজমিনে দেখা যায়, বাবুবাজার সেতুর নিচের ৬৫০ মিটার দীর্ঘ ব্যস্ত সড়কটির এক পাশ বন্ধ। তাই অপর পাশের সড়ক (গুলিস্তান থেকে বাবুবাজারের দিকে যেতে) দিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। ড্রেনেজ কাজের জন্য সড়কে গর্ত করায় কিছু অংশের ফুটপাত দিয়েও চলাচল করা যাচ্ছে না।</p> <p>জাইমা নিদাত জাফরা আহমেদ বাওয়ানী একাডেমির সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী। তার মা সানজিদা হক মেয়েকে নিয়ে বাবুবাজারের এই রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন। তিনি জানান, সড়কের মধ্যে গর্ত হওয়ায় এই সড়ক এমনকি পাশের ফুটপাত দিয়ে চলাও ঝুঁকিপূর্ণ।</p> <p>পুরান ঢাকার লক্ষ্মীবাজারের ওষুধ ব্যবসায়ী মোতালেব হোসেন বলেন, ‘দোকানের জন্য ওষুধ নিতে প্রায়ই এখানে আসতে হয়। ইসলামপুরের রাস্তায় সব সময় যানজট থাকে। তাই এই বড় সড়ক দিয়ে আসতে হয়। গত কয়েক মাস ধরে দেখছি রাস্তায় খোঁড়াখুঁড়ির কাজ চলছে। এখনো শেষ হয়নি। একদিকে সড়ক কাটা, অন্যদিকে ধুলা। সব মিলিয়ে ভোগান্তি একটু বেশিই।’</p> <p>ইসলামপুরের বাসিন্দা জাহিদুর রহমান বলেন, ‘এমনিতেই রাস্তাটি খানাখন্দে ভরা। মাঝে মধ্যে ঠিক করলেও বেশিদিন টেকে না। টেকসইভাবে ঠিক না করে এভাবে কয়েক দিন পর পর একবার ড্রেন, একবার বিদ্যুৎ বিভিন্ন কারণে কাটলে রাস্তা ঠিক করার সময় কিভাবে হবে?’</p> <p>সিটি করপোরেশন সূত্র বলেছে, বর্তমান মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস দায়িত্ব নেওয়ার পর গত সাড়ে তিন বছরে সড়ক সংস্কার ও উন্নয়নে খরচ হয়েছে প্রায় ২৪৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে ২০২০-২১ অর্থবছরে সড়ক রক্ষণাবেক্ষণ ও উন্নয়নে ব্যয় হয়েছে ২৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে ব্যয় হয়েছে ১১১ কোটি ১২ লাখ টাকা। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে সড়ক সংস্কারে ব্যয় হয় ১০৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরে সড়কের উন্নয়নে ২৬৩ কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি। নগর বিশেষজ্ঞ আদিল মোহাম্মদ খান বলেন, ‘সময়ের সঙ্গে উন্নয়ন হতে থাকবে। তবে যেকোনো উন্নয়নে সমন্বয় গুরুত্বপূর্ণ। সেটি না করা গেলে একদিকে অর্থ অপচয় হবে, অন্যদিকে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি লাঘব হবে না।’</p> <p>ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আ. মান্নান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বংশাল, তাঁতিবাজার হয়ে ড্রেনেজটি বুড়িগঙ্গায় গিয়ে শেষ হবে। এখন বাবুবাজার সেতুর নিচের অংশের কাজ চলছে। ব্যস্ত সড়কটিতে উন্নয়নকাজ চলমান থাকায় সাময়িক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে ড্রেনেজের কাজটা শেষ হয়ে গেলে পুরান ঢাকাবাসী জলাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাবে। আশা করছি আগামী দুই মাসের মধ্যে কাজ শেষ হয়ে যাবে।’</p> <p>ডিএসসিসি অঞ্চল-৪-এর আঞ্চলিক কর্মকর্তা মো. আতাহার মিয়া বলেন, ‘রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব পাওয়াতে ব্যস্ততার মধ্যে আছি। কবে শেষ হবে এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। তিন মাস আগে কাজ শুরু হয়েছে। নির্বাচন সামনে থাকায় দ্রুত কাজ শেষ করার চেষ্টা করা হয়েছে। তবে অগ্রগতি সেভাবে করা যায়নি।’</p>