<p>দেশে কিডনির কোনো না কোনো রোগে ভুগছে এমন মানুষের অনুমিত সংখ্যা তিন কোটি ৮০ লাখ। তাদের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষের কিডনি বিকল। তারা ডায়ালিসিস নিয়ে বেঁচে আছে। এমন পরিস্থিতিতে কিডনি রোগীদের জন্য বীমা চালুর ব্যাপারে উদ্যোগী হতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।</p> <p>গতকাল শনিবার সকালে রাজধানীতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক গোলটেবিল বৈঠকে সরকারি কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসব কথা জানিয়েছেন। ‘সবার জন্য কিডনি স্বাস্থ্য, কিডনি চিকিৎসায় সম-অধিকার : অর্জনে করণীয়’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে বেসরকারি সংগঠন কিডনি অ্যাওয়্যারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস)।</p> <p>বৈঠকে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাম্পসের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ। তিনি বলেন, ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুসারে, ২০৪০ সালের মধ্যে ৫০ লাখের বেশি কিডনি বিকল রোগী সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসার অভাবে মারা যাবে। বর্তমানে ৮৫ কোটির অধিক লোক দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে আক্রান্ত। দুঃখজনক হলেও সত্যি, তাদের মধ্যে ৭৫ কোটি রোগী জানে না যে মারণঘাতী কিডনি রোগ নীরবে তাদের কিডনি নষ্ট করে চলেছে। প্রতিবছর এক কোটি ৩০ লাখ লোক আকস্মিক কিডনি বিকল রোগে আক্রান্ত হয়, যার ৮৫ শতাংশই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে। উন্নত দেশে কিডনি বিকলের চিকিৎসা করতে গিয়ে সরকার হিমশিম খাচ্ছে।’</p> <p>অধ্যাপক ডা. এম এ সামাদ বলেন, ‘বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগীর হার ১৬ থেকে ১৮ শতাংশ। কিডনি রোগের শেষ পরিণতি কিডনি বিকল। একবার কিডনি বিকল হয়ে গেলে বেঁচে থাকার একমাত্র উপায় কিডনি সংযোজন অথবা ডায়ালিসিস। কিন্তু এই চিকিৎসা এতটাই ব্যয়বহুল যে ১০ শতাংশ কিডনি বিকল রোগীও তা বহন করতে পারে না। তাই আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে প্রায় ৯০ শতাংশ রোগী বিনা চিকিৎসায় অথবা আংশিক চিকিৎসায় মারা যায়।’</p> <p>জাতীয় অধ্যাপক ও ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এ কে আজাদ খান বলেন, ‘কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে অনেক বছর ধরে বলা হচ্ছে, প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। কিন্তু মানুষ তা শুনছে না। কারণ ঠিকভাবে মানুষের কাছে তা বলা হচ্ছে না। কিভাবে বললে মানুষ শুনবে, গ্রহণ করবে তা নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার আছে।’</p> <p>কিডনি ফাউন্ডেশনের সভাপতি অধ্যাপক হারুন-উর-রশিদ বলেন, ‘৫০ শতাংশ মানুষ জানেন না যে তাঁর ডায়াবেটিকস আছে, ৬০ শতাংশ রোগী জানেন না যে তাঁর উচ্চ রক্তচাপের রোগ রয়েছে এবং ৪০ শতাংশ মানুষ জানেন না যে তিনি কিডনি রোগে ভুগছেন। ৪০ বছরের বেশি বয়সী মানুষের নিয়মিত কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত। কারণ গুরুতর দিকে কিডনি রোগের কোনো উপসর্গ থাকে না। ৮০ থেকে ৮৫ শতাংশ কিডনি নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর উপসর্গ দেখা দেয়।’</p> <p>প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘কিডনি রোগ হয়ে গেলে সমস্যা, সুতরাং এই রোগ যেন না হয়, সে বিষয়ে বিশেষ জোর দিতে হবে। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ থেকে কিডনির সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা প্রবল এবং এসবই নীরব ঘাতক, অথচ একটু সচেতন হয়ে এই রোগগুলোর সবই প্রতিরোধ করা সম্ভব।’</p> <p>বছর দুই আগের একটি গবেষণা প্রবন্ধের তথ্য উদ্ধৃত করে সরকারের অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক রোবেদ আমিন বলেন, ‘কোনো না কোনো কিডনি রোগে ভুগছে এমন মানুষের সংখ্যা তিন কোটি ৮০ লাখ। তাদের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষের কিডনি বিকল।’</p> <p>আলোচনায় অংশ নিয়ে শিশু কিডনি রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দেশে ১৬.২ শতাংশ শিশুর জন্ম হয় সময়ের আগে। সময়ের আগে জন্ম নেওয়া শিশুদের কিডনি রোগের ঝুঁকি বেশি। ঝুঁকি এড়াতে তাদের বিশেষ যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।’</p> <p>বৈঠকে স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক হারিসুল হক। এ ছাড়া জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক গাজী আশরাফ হোসেন এবং বাংলাদেশ রেনাল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক নিজামউদ্দিন চৌধুরীও বক্তব্য দেন।</p> <p> </p> <p> </p>