<p>থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ। শয্যার বিপরীতে রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় অনেকের ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালে মেঝে ও করিডরে। আক্রান্ত রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে রাজধানীর হাসপাতালগুলো। গতকাল বুধবার ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।</p> <p>হাসপাতালে ভর্তি রোগী, রোগীর স্বজন, নার্স ও পরিচালকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডেঙ্গু আক্রান্ত ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। ১২ থেকে ৩০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে আক্রান্তের হার সবচেয়ে বেশি। বেশির ভাগই আসছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকা, যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, খিলগাঁও, লালবাগ, কামরাঙ্গীর চর, মিরপুর ও নারায়ণগঞ্জ থেকে।</p> <p>বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ডেঙ্গুর মৌসুমে নেই মশক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম। এতে এডিস মশা একদিকে বাড়ছে, অন্যদিকে ভাইরাস বহনকারী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ হতে পারে। কীটতত্ত্ববিদ ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কবিরুল বাশার বলেন, ‘শুধু ঢাকা নয়, ঢাকার বাইরেও এডিস মশার ঘনত্ব বাড়ছে। মাঠ পর্যায়ে ডেঙ্গুর বাহক মশার যে ঘনত্ব পাচ্ছি, অন্যান্য বছরের তুলনায় তা বেশি। কারণ গত দুই মাস মশক নিয়ন্ত্রণে কোনো কাজই হয়নি।’</p> <p>মৃত্যুর ৩২ শতাংশই ঢাকা মেডিক্যালে : চলতি বছরে ডেঙ্গুতে যত মৃত্যু হয়েছে তার তিন ভাগের এক ভাগ হয়েছে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য মতে, এ পর্যন্ত চিকিৎসা নিয়েছে এক হাজার ৭২ জন, মারা গেছে ২৭ জন। গতকাল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, মেডিসিন বিভাগের চতুর্থ তলায় শুধু পুরুষ রোগীদের ডেঙ্গু ওয়ার্ড করা হয়েছে। এই ওয়ার্ডে শয্যার বাইরে বারান্দায় সিঁড়ি কোটায়, মেঝেতে অনেক রোগী ভর্তি আছে। রোগীদের জন্য কোনো মশারির ব্যবস্থা করা হয়নি। এদের একজন রহমত উল্লাহ (১৮)। তিনি কামরাঙ্গীর চরের পূর্ব রসুলপুর এলাকার বাসিন্দা। রহমত উল্লাহ জানান, ১০ দিন ধরে জ্বরে ভুগছিলেন। ফার্মেসি থেকে ওষুধ খেয়ে জ্বর না সারায় হাসপাতালে আসেন ডেঙ্গু পরীক্ষার জন্য। পরীক্ষায় পজিটিভ এলে এখানেই ভর্তি হন।</p> <p>২০ শতাংশ রোগীর চিকিৎসা মুগদা হাসপাতালে : ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি এক হাজার ৮৯৩ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছে মুগদা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে, যা ঢাকায় ডেঙ্গু আক্রান্তের ১৯.৯৯ শতাংশ। হাসপাতালটিতে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ১৮ জনের।</p> <p>পাঁচ দিনে ১৬ জনের মৃত্যু : এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় আরো ছয়জন মারা গেছে। এই সময়ে দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে আরো ৮৬৫ জন। গতকাল বুধবার দেশের ডেঙ্গু পরিস্থিতির এমন তথ্য জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এ নিয়ে গত পাঁচ দিনে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে তিন হাজার ৩৮ জন এবং মৃত্যু হয়েছে ১৬ জনের।</p> <p> </p>
