<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কৃষি খাতে উৎপাদন বৃদ্ধি, অর্থনৈতিক ও জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন, পদ্মার পানি সংরক্ষণ, খরা মৌসুমে সেচ সুবিধা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, লবণাক্ততা রোধ এবং ভূগর্ভস্থ পানি আয়ত্তে রাখার উদ্দেশ্যে কুষ্টিয়ায় পদ্মা নদীতে গঙ্গাবাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গঙ্গাবাঁধ নির্মাণের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল ৪৪ বছর পরও সরকারের আন্তরিকতার অভাবে সেই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। এই অভিযোগ করেছেন গঙ্গাবাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির নেতারা।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ভেড়ামারার বাহিরচর গ্রামের পদ্মা নদীর পারে যে স্থানে প্রকল্পটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়েছিল সে স্থানটি এখন গোচারণভূমিতে পরিণত হয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত না হওয়ায় প্রতিবছর ৬৫ লাখ একর জমি সেচ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলেও এ অঞ্চলের কৃষকরা জানিয়েছেন। পাশাপাশি খরাজনিত কারণেও নষ্ট হচ্ছে লাখ লাখ একর জমির ফসল। ১৯৮০ সালের ২৭ ডিসেম্বর গঙ্গাবাঁধ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও নির্মাণকাজ আর শুরু হয়নি।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, পঞ্চাশের দশকে কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচর এলাকায় ওই সময়েই প্রস্তাবিত এই প্রকল্পটি একজন বিদেশি বিশেষজ্ঞ দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হয়েছিল। সেটিকে ক্রুক মিশনের মতামত বলা হয়ে থাকে। পরে ক্রুক মিশনের সুপারিশে ১৯৫৯ সালে ইস্ট পাকিস্তান পাওয়ার অ্যান্ড ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট অথরিটি গঠন করা হয় এবং ১৯৬১ সালে সাবেক ওয়াপদা গঙ্গাবাঁধ বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেয়। এরপর ১৯৬৩ সালে মার্কিন প্রতিষ্ঠান ঠ্যামস, ১৯৬৪ সালে আরেকটি মার্কিন প্রতিষ্ঠান আইকো এবং ১৯৬৮ সালে স্থানীয় কারিগরি প্রতিষ্ঠান অ্যাসোসিয়েটেড কনসাল্টিং ইঞ্জিনিয়ার্স গঙ্গাবাঁধ প্রকল্পের চূড়ান্ত কারিগরি পরীক্ষা সম্পন্ন করে। পরে ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে গঙ্গাবাঁধ প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু তখন পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের জন্য তা স্থগিত হয়ে যায়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানা গেছে, বৃহত্তর কুষ্টিয়াসহ আশপাশের জেলাগুলোর মানুষের বছরে তিনটি ফসল উৎপাদনের নিশ্চয়তার লক্ষ্যে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ৯ বছর পর ১৯৮০ সালে ওই প্রকল্পটি পুনরুজ্জীবিত করেন এবং ওই বছরের ২৭ ডিসেম্বর তৎকালীন বন্যা ও পানিসম্পদ মন্ত্রী কাজী আনোয়ারুল হক কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহিরচরে পদ্মার তীরে গঙ্গাবাঁধ প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। কিন্তু ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর গঙ্গাবাঁধ প্রকল্পের কাজ আর অগ্রসর হয়নি; বরং ১৯৯৩ সালের ৫ এপ্রিল ১৯৮১ সালে কেনা বিভিন্ন নির্মাণসামগ্রী গোপন নিলামে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দেওয়া হয়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কুষ্টিয়ার বিত্তিপাড়া গ্রামের কৃষক হায়দার আলী বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পদ্মা নদীতে গঙ্গাবাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় পানির অভাবে ঠিকমতো ফসল উৎপাদন হচ্ছে না। প্রতিবছর খরা মৌসুমে জিকে প্রকল্প পদ্মায় পানি অভাবে আমাদের সেচের পানি দিতে পারে না। পাশাপাশি গোটা দক্ষিণাঞ্চলে মরুকরণসহ পরিবেশ বিপর্যয় হয়। ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্যে অবিলম্বে গঙ্গাবাঁধ নির্মাণ করা জরুরি।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা জানান, সমপূর্ণ পদ্মা নদীর পানির ওপর নির্ভরশীল দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্প গঙ্গা কপোতাক্ষ (জিকে) প্রকল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে গঙ্গাবাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতেই হবে। কুষ্টিয়াবাসীর প্রাণের দাবি এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সুবিধাবঞ্চিত এ অঞ্চলের ৬৫ লাখ একর জমি সেচ সুবিধার আওতায় আসবে এবং কৃষকের উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে লবণাক্ততা রোধ, ভূর্গস্থ পানি আয়ত্তে রেখে বছরে তিনটি ফসল উৎপাদনের নিশ্চয়তা পাওয়া যাবে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গঙ্গাবাঁধ বাস্তবায়ন কমিটির তৎকালীন সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য সোহরাব উদ্দিন বলেন, গোটা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রকল্প গঙ্গাবাঁধ বাস্তবায়ন না হলে গোটা দক্ষিণাঞ্চল মরুকরণ ও পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে। অবিলম্বে প্রস্তাবিত গঙ্গাবাঁধ প্রকল্প বাস্তবায়ন ছাড়া কোনো উপায় নেই।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনা এবং পানির অভাবে পদ্মা ও গড়াই নদ ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার জন্য যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ ওয়াটার পার্টনারশিপ এবং ফোকলোর রিসার্চ ইনস্টিটিউট। ফোকলোরের সভাপতি ড. আনোয়ারুল করিম জানান, গঙ্গাবাঁধ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হওয়ায় এ অঞ্চলের পাঁচ কোটি মানুষ ও পরিবেশ আজ বিপন্ন হয়ে পড়েছে। পানির অভাবে নদ-নদীগুলো মৃত হয়ে পড়ায় মিঠা পানিতে লবণাক্ততা বাড়ছে এবং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল মারাত্মক মরুকরণ শুরু হয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>