<p>বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেছেন, ৪৬ বছর ধরে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র প্রায় সোয়া দুই কোটি শিক্ষার্থীকে বই পড়িয়েছে। অন্যতম কারণ, অনেক সময় পাঠ্য বইয়ের বাইরে বই পড়ার জন্য শিক্ষকদের কাছ থেকেও সহযোগিতা পায় না শিক্ষার্থীরা। তারা ভাবে, সময় নষ্ট হচ্ছে। অথচ একটা ভালো বই যখন মন খুলে দেয়, তখন পাঠ্যপুস্তককে আরো ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারে শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ঢাকা মহানগরের স্কুল কর্মসূচির পুরস্কার বিতরণ উৎসবে তিনি এসব কথা বলেন। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলেন, ‘স্বপ্ন মানে গন্তব্য। আমি কোথায় যেতে চাই, এর জন্য যে কাজ, সেটাই স্বপ্ন। তোমরা বড় হলে বাংলাদেশ বড় হবে। তাই নিজেকে বড় করার স্বপ্ন দেখতে হবে।’</p> <p>সকালে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করা হয়। দুই দিনের আয়োজনের উদ্বোধনী পর্বে ছিল আলোচনা অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণ। আলোচনার পর দেওয়া হয় সেরা পাঠক পুরস্কার।</p> <p>অনুষ্ঠানে গ্রামীণফোনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসির আজমান বলেন, বইয়ের মূল্য এর গায়ে লেখা দাম নয়, বইটি থেকে পাঠক কী পেলেন, সেটি। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এই আয়োজনের সঙ্গে গ্রামীণফোন দুই দশক ধরে আছে উল্লেখ করে তিনি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, এখানে উপস্থিত সবাই আলোকিত মানুষ হওয়ার পথের যাত্রায় বিজয়ী।</p> <p>দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম বলেন, অনেক বইয়ের মধ্য থেকে হয়তো একটি বই বদলে দিতে পারে সব ভাবনা। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র যেভাবে বিশ্বের ভাণ্ডার সামনে এনে দেয়, এর মূল্যায়ন করা অসম্ভব। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, নিজেকে বিকশিত করার স্বপ্ন দেখতে হবে। তোমরা এখন বিশ্বনাগরিক। একজন মানুষের জন্য ভালো কাজ করতে পারাও হতে পারে সমাজে তোমাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা।</p> <p>বিশ্বসাহিত্যের পাঠ শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্য বইয়ের বাইরে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি তৈরি করে বলে মন্তব্য করেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক শামিম আল মামুন।</p> <p>সমাজসেবক ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি পারভিন মাহমুদ বলেন, ‘আমরা একটা নতুন বাংলাদেশ দেখছি, যেখানে নিজেকে বিকশিত হওয়ার আরো সুযোগ পাবে শিক্ষার্থীরা।’</p> <p>লেখক, গবেষক ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, ‘আমাদের সময় এত ভালো আয়োজন ছিল না বই পড়ার। একটি ভালো বইয়ের জন্য বহুদূর গিয়ে দীর্ঘ অপেক্ষা করতে হতো। এখন সেই সুযোগ আছে। তাই শিক্ষার্থীদের বইয়ের মাধ্যমে তৈরি করতে হবে নতুন নতুন জগৎ।’ বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এই বইপড়া কর্মসূচিতে সারা দেশে প্রায় এক হাজার ৭০০ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দুই লাখ ৫০ হাজার ছাত্রছাত্রী অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ২০২৩ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল মহানগরের ৩১৫টি স্কুলের প্রায় ৫০ হাজার ছাত্রছাত্রী বইপড়া কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছে। এসব স্কুলের ১৮ হাজার ৮২৬ জন ছাত্রছাত্রী মূল্যায়ন পর্বে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছে। তাদের পুরস্কার দিতে গ্রামীণফোনের সহযোগিতায় পাঁচটি মহানগরে পুরস্কার বিতরণ উৎসবের আয়োজন করেছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র। সম্প্রতি রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল মহানগরে হয়েছে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত আট পর্বে দেওয়া হবে ঢাকা মহানগরের ৬২টি স্কুলের পাঁচ হাজার ১৩৭ জন শিক্ষার্থীকে বই পড়ার পুরস্কার।</p>