<p>যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে হিন্দু ভোটারদের ভোট পেতে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রসঙ্গ তুলেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে ট্রাম্পের স্ট্যাটাস নিয়ে বিবিসি বাংলার বিশ্লেষণে এ কথা বলা হয়েছে। </p> <p>ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বাংলাদেশ ও মিয়ানমার বিষয়ক জ্যেষ্ঠ পরামর্শক টম কিন ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক্স বার্তা প্রসঙ্গে বিবিসি বাংলাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। তবে এগুলো মূলত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছিল।’</p> <p>ট্রাম্প বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কতটা অবগত, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে টম কিন আরো বলেন, ‘ভারতের কিছু ডানপন্থী মিডিয়া ও রাজনীতিবিদ এই ঘটনাগুলোকে অতিরঞ্জিতভাবে উপস্থাপন করেছেন। তাই এটি রাজনৈতিক চাল হতে পারে। অথবা তিনি ভুল তথ্য পেয়েছেন এবং তা বিশ্বাস করেছেন।’</p> <p>যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত এম হুমায়ুন কবিরও মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘ফিড করা হয়েছে’। অর্থাৎ তাঁকে এটি বোঝানো হয়েছে। নয়তো তাঁর এই ধরনের কথা বলার কথা নয়, কিন্তু বাংলাদেশের বিষয়ে যেসব শব্দ ব্যবহার করেছেন, সেগুলো খুবই কড়া।</p> <p>ভারতের ওপি জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত স্বীকার করেন, ভারতীয় গণমাধ্যমে এই ঘটনাগুলো অতিরঞ্জিতভাবে প্রচার করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর আক্রমণের ঘটনা যে ঘটেছিল, সেটিও মনে করিয়ে দেন তিনি।</p> <p>যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির সরকার ও রাজনীতির অধ্যাপক এবং অন্তর্বর্তী সরকারের সংবিধান সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান আলী রীয়াজ বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর ভারতীয় গণমাধ্যম ‘ছোট ঘটনাকে বড় করে’ বলে আসছে যে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ার জন্য ধর্মকে কিভাবে ব্যবহার করা হয়, ট্রাম্পের টুইট তার সুস্পষ্ট প্রমাণ। হিন্দু ধর্মাবলম্বী, প্রধানত ভারতীয়দের ভোট নিশ্চিত করা ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য।’</p> <p>ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা অজানা নয়। এর আগেরবার ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারে নরেন্দ্র মোদি সমর্থন করেছিলেন। এখন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে সেই বন্ধুত্বকেই কাজে লাগাচ্ছেন ট্রাম্প। এ বিষয়ে টম কিন বলেন, মোদির ‘কর্তৃত্ববাদী ধরনের জন্য’ ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে কিছুটা পছন্দ করেন এবং আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ‘আমেরিকান হিন্দুদের’ ভোট পেতে এটি হয়তো ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারের অংশ।</p> <p>শ্রীরাধা দত্ত বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও নরেন্দ্র মোদির মধ্যকার সম্পর্ক সব সময়ই ভালো। রিপাবলিকান পার্টির সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক খুব ভালো থাকে। তিনি বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প দীপাবলির শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এর মানে হিন্দু ভোটারদের ভোট পেতেই এটা করেছেন তিনি। কিন্তু আমেরিকায় একটা বিশালসংখ্যক আওয়ামী লীগ সমর্থকও রয়েছেন। তাঁরাও ট্রাম্পের এই বক্তব্য পছন্দ করবেন। কারণ আওয়ামী লীগ সব সময় মনে করে, তারা হিন্দুদের পক্ষে।</p> <p>সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবিরও মনে করেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প নির্বাচনী ফলকে তাঁর পক্ষে নেওয়ার জন্য এটি করেছেন। ট্রাম্পের ওই বার্তা কি ইউনূস সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল—বিবিসি বাংলার এই প্রশ্নের জবাবে আলী রীয়াজ বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় লবি বাংলাদেশের পরিবর্তনের বিরুদ্ধে কাজ করছে। তারা যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে, অন্তর্বর্তী সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলছে।’ তিনি বলেন, ‘এটি (ট্রাম্পের এক্স বার্তা) পরোক্ষভাবে শেখ হাসিনাকে সমর্থন, স্পষ্টত মোদিকে সমর্থন করে। মোদিকে তো স্বৈরাচার ছাড়া আর কিছুই বলার সুযোগ নেই।’ শ্রীরাধা দত্ত ট্রাম্পের ওই বার্তাকে ইউনূসবিরোধী নয়, বরং কমলা হ্যারিসবিরোধী (যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী) বা হিন্দুপন্থী প্রচার হিসেবে দেখছেন। অন্যদিকে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির মনে করেন, এখানে ইউনূস সরকারকে চাপে ফেলার একটি বিষয় আছে।</p> <p> </p>