<p>বিমানবন্দরের ফায়ার অপারেটর পদে চাকরি করতেন দীনেশ চন্দ্র বিশ্বাস। অভিযোগ রয়েছে তাঁর দেওয়া তথ্যে বিদেশফেরত দুই প্রবাসীর স্বর্ণসহ অর্ধকোটি টাকার মালপত্র লুট করেছে ডাকাতচক্র। এ ঘটনায় ২০২৩ সালের ৩ এপ্রিল বিমানবন্দর থানায় ডাকাতির মামলা হয়।</p> <p>মামলায় গ্রেপ্তারের পর তাঁকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। আদালতে পুলিশের জমা দেওয়া অভিযোগপত্রেও তাঁকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা বিচারাধীন। তবে তথ্য দিয়ে ডাকাতিতে সহযোগিতা করে লাভবান না হয়ে তিনিও প্রতারিত হয়েছেন। মামলার অভিযোগপত্রে এমন তথ্য উঠে এসেছে।</p> <p>জানা গেছে, গত বছরের ৪ মে বিমানবন্দর এলাকায় অভিযান চালিয়ে দীনেশ চন্দ্র বিশ্বাসকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তাঁকে চাকরিচ্যুত করে। গ্রেপ্তারের পর ৫ মে আদালত তাঁর দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। পরে তিনি দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেন। ওই বছরের ১৩ জুলাই তিনি জামিন পান।</p> <p>বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের ফায়ার অফিসার মো. আলী আকবার কালের কণ্ঠকে বলেন, ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার হন দীনেশ চন্দ্র বিশ্বাস। এ ঘটনার পর তাঁকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাঁর  বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছিল, তবে তা এখনো শেষ হয়নি।</p> <p>২০২৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি দুবাই থেকে দেশে ফেরেন মো. জাকির হোসেন ও দ্বীন ইসলাম। রাত সাড়ে ১১টার দিকে একটি সিএনজি ভাড়া করে গুলিস্তানের উদ্দেশে রওনা দেন। পরে পুলিশের পোশাক পরিহিত তিনজনসহ পাঁচজন মিলে ব্যাগসহ ওই দুজনকে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। তাঁদের কাছে থেকে চারটি স্বর্ণের টিটি বার, ১২টি স্বর্ণের চুড়ি, দুটি ল্যাপটপ, দুটি পিক্সেল ফোন এবং এক কার্টন চকোলেট, বাদাম ও সিগারেট লুট করে নিয়ে যায়। যার বাজারমূল্য ৫১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। এ ঘটনায় ওই বছরের ৩ এপ্রিল জাকির হোসেন বাদী হয়ে বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন।</p> <p>সম্প্রতি তদন্ত শেষে তিন পুলিশ সদস্যসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বিমানবন্দর থানার উপপরিদর্শক মোশারফ হোসেন। গতকাল ৮ অক্টোবর এ মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণের বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা ছিল। মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, দীনেশের কাছে বিদেশফেরত যাত্রীদের স্বর্ণ ও মূল্যবান মালপত্রের তথ্য চেয়ে ফোন করেন মিঠুন বসু। তথ্য দিলে তাঁকে পুরস্কার দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন। পুরস্কারের আশায় বিদেশফেরত দুজনের তথ্য দেন তিনি।</p> <p>আসামিরা হলেন পুলিশ কনস্টেবল মো. আব্দুর রাজ্জাক, মো. এনামুল মোল্লা, মো. ইমরান হোসেন রাসেল এবং বিমানবন্দরের ফায়ার অপারেটর দীনেশ চন্দ্র বিশ্বাস, জামাল শেখ মিন্টু, শ্রী মিঠুন বসু, বিচিত্র মজুমদার, লিংকন মণ্ডল ও প্রদীপ বালা। এঁদের মধ্যে বিচিত্র, লিংকন ও প্রদীপ পলাতক থাকায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির আবেদন করা হয়েছে। এ ছাড়া সুনির্দিষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় আসামি রবিউল বেপারী, শহিদুল ইসলাম জীবন ও পুলিশ তরিকুল ইসলামকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে।</p> <p>মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদেশ থেকে আসা যাত্রীদের টার্গেট করে এ চক্রটি বিভিন্ন সময়ে ডাকাতি করত। তদন্ত শেষে তিন পুলিশ সদস্য, বিমানবন্দরের এক কর্মচারীসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছি।’</p> <p>দীনেশ চন্দ্র বিশ্বাসের আইনজীবী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘এ মামলায় তথ্যগত ভুলের কারণে দীনেশ বালার স্থলে দীনেশ চন্দ্রকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। আমরা অভিযোগপত্র গ্রহণের দিন এ বিষয়ে আদালতকে অবগত করব। প্রকৃতপক্ষে তিনি নির্দোষ।’</p> <p>মামলার বাদী প্রবাসী মো. জাকির হোসেন বলেন, ‘আমি চাই আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক। যাতে আমাদের মতো আর কোনো প্রবাসী এমন ঘটনার সম্মুখীন না হন।’</p> <p> </p> <p> </p>