<p>যশোরের চৌগাছায় দুগ্ধখামারিদের জন্য বরাদ্দ দুই কোটি টাকার ঋণ নিষিদ্ধঘোষিত ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিতরণের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করে উপজেলা সমবায় অফিস। চলতি নভেম্বর মাসে ঋণ বিতরণের কথা। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় এখন কর্তৃপক্ষ তালিকা সংশোধনে বাধ্য হচ্ছে।</p> <p>অভিযোগ রয়েছে, আগের সরকারের প্রভাবশালী নেতাদের সুপারিশে উপজেলা সমবায় অফিসার এই তালিকা চূড়ান্ত করেন। এখন বিষয়টি জানাজানি হওয়ায় চাপের মুখে তিনি তালিকা সংশোধনে উদ্যোগী হলেও অনিয়মের কথা অস্বীকার করছেন।</p> <p>জানা গেছে, দুগ্ধ ঘাটতি উপজেলায় দুধের চাহিদা পূরণে ৩৮ জেলার ৫০টি উপজেলায় দুটি করে দুগ্ধজাত খামার প্রকল্প বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয় ২০২২ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৬ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় ৫০ উপজেলায় ১০০টি দুগ্ধখামার সমবায় সমিতি গঠন করা হবে। যার পাঁচ হাজার সদস্যের প্রত্যেককে নামমাত্র ৩ শতাংশ সুদে দেওয়া হবে দুই লাখ টাকা করে। প্রথম বছর গ্রেস পিরিয়ড। পরের ৩০ মাসে ৩০ কিস্তিতে এই ঋণ পরিশোধ করতে হবে।</p> <p>জানা গেছে, প্রকল্পের আওতায় যশোরের চৌগাছা উপজেলায় ‘কয়ারপাড়া দুগ্ধ সমবায় সমিতি লিমিটেড’ এবং ‘মাকাপুর দুগ্ধ সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে দুটি সমবায় সমিতি নিবন্ধন করানো হয়। দুটি সমিতির মোট সদস্য ১০০। এদের মধ্যে বিতরণ করার কথা দুই কোটি টাকা। নীতিমালা অনুযায়ী যাদের পাকা গোয়ালঘর এবং ঘাসের জমি আছে শুধু তারাই ঋণ পাওয়ার যোগ্য।</p> <p>তালিকা ঘেঁটে দেখা গেছে, প্রকল্প এলাকার বাসিন্দা না হওয়া সত্ত্বেও উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হাসান রেজা, যুগ্ম আহ্বায়ক আকরামুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক ফিরোজ হোসেন, সদস্য রানা মিশ্রের নাম রয়েছে সুবিধাভোগীর তালিকায়। এ ছাড়া রয়েছে উপজেলা ছাত্রলীগের বিগত কমিটির সভাপতি ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম হোসেনের স্ত্রী ইয়াসমিন খাতুনের নাম।</p> <p>কয়ারপাড়া সমিতির সুবিধাভোগীর তালিকায় রয়েছেন চৌগাছা সদর ইউনিয়নের চার নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি নাজিম উদ্দিনের স্ত্রী মোছা. ছায়বী, দুই নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সেক্রেটারি রফিকুল ইসলামের বোন রাশিদা খাতুন, দুই নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ পারভেজ সোহাগ, দুই নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য শান্ত ইসলাম, তিন নম্বর ওয়ার্ড ইউপি সদস্য ও যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান, নারী ইউপি সদস্য মুসলিমা খাতুনের স্বামী আল মামুন, দুই নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাবেক সেক্রেটারি রফিকুল ইসলামের ভাই তরিকুল ইসলাম, তিন নম্বর ওয়ার্ড সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান, এক নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমান, একই ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী মাসুদ চৌধুরীর আত্মীয় হাসানুর রহমানের স্ত্রী শাবানা খাতুন, আমেরিকাপ্রবাসীর পরিবারের মফিজুর রহমান ছাড়াও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কাশেমের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী হাসানের স্ত্রী শাপলা খাতুন, হাসানের বোন বুলবুলি বেগম প্রমুখের নাম। অন্য সদস্যরাও চৌগাছা সদর, সিংহঝুলী ও ধুলিয়ানী ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগের পদধারী নেতা।</p> <p>একইভাবে মাকাপুর দুগ্ধ সমবায় সমিতির সদস্য করা হয়েছে সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কলেজ শিক্ষক মহিদুল ইসলামের স্ত্রী ইয়াসমিন আক্তার, উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য অনিক কুমার মিত্র, স্বরূপদহ ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের ইউপি সদস্য যুবলীগ নেতা মন্টু ছাড়াও সুখপুকুরিয়া ও স্বরূপদহ ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও আওয়ামী লীগের পদধারী নেতাদের।</p> <p> </p>