<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঘরে-বাইরে কোথাও নারীর নিরাপত্তা সেভাবে সুরক্ষিত হচ্ছে না। সব ক্ষেত্রে তারা কমবেশি সহিংসতা ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। কিছু বেসরকারি মানবাধিকার সংগঠন ও সরকারের জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর জরিপ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চার বছরের ব্যবধানে নারী নির্যাতনের বিষয়ে আইনি সহায়তা চেয়ে সারা দেশ থেকে প্রায় দ্বিগুণ কল আসছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নারী নির্যাতনের ধরনের মধ্যে রয়েছে পারিবারিক নির্যাতন, যৌন হয়রানি, ধর্ষণ ও হত্যা, অপহরণ, এসিড নিক্ষেপ, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, গৃহকর্মী নির্যাতন প্রভৃতি। বিভিন্ন সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ঘটনায় পুলিশি মামলা কিংবা আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয় না। এমন পরিস্থিতিতে আজ সোমবার আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালিত হচ্ছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৯৮১ সালে লাতিন আমেরিকায় ২৫ নভেম্বর নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস পালিত হয়। ১৯৯৩ সালে ভিয়েনায় বিশ্ব মানবাধিকার সম্মেলন দিবসটির স্বীকৃতি দেয়। জাতিসংঘ ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর দিবসটির আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়। বাংলাদেশ ১৯৯৭ সাল থেকে দিবসটি পালন করে আসছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও প্রতিবছর নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে ১৬ দিনব্যাপী (২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকারের জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা দেখা গেছে, ২০২১ সালে সংস্থাটিতে নারী নির্যাতনের ১২ হাজার ১৬৯টি কল এসেছে। সে বছর প্রতি মাসে গড়ে এক হাজার ১৫টির মতো কল আসে। সেখানে চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে (জানুয়ারি-অক্টোবর) ২০ হাজার ১৯৫টি কল এসেছে। সে হিসাবে চলতি বছর প্রতি মাসে দুই হাজার ২০টির মতো ঘটনায় কল আসে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) বিভিন্ন থানায় এক হাজার ২১৪টি নারী নির্যাতনের মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ধর্ষণের মামলা প্রায় ৩০ শতাংশ। ডিএমপি সূত্র জানায়, নারী নির্যাতনের ঘটনায় যত মামলা হয় তার চেয়ে কয়েক গুণ বেশি ঘটনা ঘটে। সব ঘটনায় ভুক্তভোগী আইনের দ্বারস্থ হন না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বেসরকারি বিভিন্ন সংগঠনের অভিযোগ, ধর্ষণ বা নির্যাতনের বেশির ভাগ ঘটনায় নারীরা সঠিক বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এসব ক্ষেত্রে মীমাংসার নাম করে মামলা না করার পরামর্শ দেওয়া, সালিসের নাম করে অভিযোগ ওঠা ব্যক্তির পক্ষে রায় দেওয়া, সালিসের ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে জরিমানা করা হলেও সে অর্থ না দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) জরিপের তথ্য বলছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চলতি বছরের প্রথম ১০ মাসে পারিবারিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪২৭ জন নারী। এর মধ্যে ২৫৯টি ঘটনায় কোনো পুলিশি মামলা হয়নি। ৪২৭ নির্যাতনের মধ্যে ১৫৫ জনই স্বামীর হাতে খুন হন। এ ছাড়া স্বামীর পরিবারের হাতে খুন হন ২৮ জন, নিজ পরিবারের সদস্যদের হাতে ৪৭ জন নারী খুন হন। যৌতুকের জন্য নির্যাতনের শিকার হন ৬১ জন, যার মধ্যে ২৫ জন মারা যান এবং ছয়জন আত্মহত্যা করেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একই সময়ে ধর্ষণের শিকার হন ৪৬১ জন নারী। এর মধ্যে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। ধর্ষণের ৯৮টি ঘটনায় কোনো মামলা হয়নি। দুর্বৃত্তের মাধ্যমে ১৮৮ জন নারী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। একই সময়ে ১১ জন নারী এসিড নিক্ষেপের শিকার হন। এর মধ্যে ৯টি ঘটনার কোনো পুলিশি মামলা হয়নি। অন্যদিকে ১৭ জন গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হন আর চারজন মারা যান। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, নারী নির্যাতনের অনেক ঘটনায় মামলা না হওয়ার অন্যতম বড় কারণ ভুক্তভোগীরা আইনের দ্বারস্থ হন না। আবার কিছু মামলা নিয়ে সমালোচনাও থাকে। তবে পুলিশ সব সময় প্রতিটি ঘটনা আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সহায়তায় আইন অনুযায়ী কাজ করার চেষ্টা করে থাকে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নারী নির্যাতন প্রতিরোধের বিষয়ে অপরাধ ও সমাজ বিশ্লেষক অধ্যাপক ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, পুরুষশাসিত সমাজে পুরুষরা নারীর চেয়ে নিজেকে আর্থিক, শারীরিক কিংবা সামাজিকভাবে বেশি সামর্থ্যবান মনে করে যাচ্ছেতাই করার মনমানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। নারীদেরও নারীর প্রতি বিরূপ আচরণ করা বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে আইনের সঠিক প্রয়োগসহ সরকারি-বেসরকারি সংস্থাগুলোর আরো বেশি কাজ করতে হবে।</span></span></span></span></p>