<p>বৈষম্যের কারণে আমরা এক দেশে দুই ধরনের সমাজ তৈরি করেছি বলে জানিয়েছেন অধ্যাপক রেহমান সোবহান। তিনি মোটা দাগে দেশের চারটি বৈষম্য তুলে ধরেন। এগুলো হলো—বাজার বৈষম্য, অসম সমাজ, রাজনৈতিক বৈষম্য এবং রাষ্ট্রীয় বৈষম্য। গতকাল বুধবার ঢাকায় ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটিতে ‘ষষ্ঠ  নেহরীন খান স্মৃতি বক্তৃতা’য় মূল বক্তা হিসেবে তিনি এসব বৈষম্যের কথা তুলে ধরেন। বাংলাদেশে ন্যায়ভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণ শিরোনামে তিনি এই বক্তব্য দেন।</p> <p>রেহমান সোবহান বলেন, দেশের উৎপাদকরা দীর্ঘদিন ধরে বঞ্চিত হয়ে আসছেন। তারা পরিশ্রম করেও ভাগ্য বদল করতে পারছেন না। অথচ মধ্যস্বত্বভোগী কিছু মানুষ পুঁজির দাপটে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এখান থেকে ব্যাপক মুনাফা তুলে নিচ্ছেন। এখানে বাজার ব্যবস্থায় তথ্য, সম্পদ, ঋণ এসব ক্ষেত্রেও প্রচুর বৈষম্য রয়েছে। তিনি বলেন, ‘শিক্ষা, স্বাস্থ্যের মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যাপক বৈষম্য আমাদের এক দেশে দুটি পৃথক সমাজ তৈরি করে ফেলছে। যাদের সামর্থ্য রয়েছে, তারা গুণগত ভালোমানের শিক্ষা-চিকিৎসা পাচ্ছে; অন্যরা বঞ্চিত হচ্ছে।’</p> <p>তিনি সংসদ সদস্যদের উদাহরণ দিয়ে বলেন, রাজনীতিতে শুধু পয়সাওয়ালারা অংশ নিতে পারছেন। সেখানে দুই-তৃতীয়াংশ ব্যবসায়ী এবং পরে বাকিরাও ব্যবসায়ী হয়ে যান। ক্ষমতা তাদের ব্যবসা প্রসারে সহায়তা করে। সর্বোপরি রাষ্ট্রীয়ভাবেই বাংলাদেশ ব্যবসায়ী, আমলা, সামরিক বাহিনীর সদস্য এমন কিছু গ্রুপকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছে। সে জন্য রাষ্ট্রের সুযোগ-সুবিধাগুলো গরিব মানুষের কাছে পৌঁঁছতে পারেনি। </p> <p>তবে রেহমান সোবহান তার বক্তৃতায় কিছু আশার কথা এবং সুপারিশও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দারিদ্র্যকে জাদুঘরে পাঠানোর স্বপ্ন দেখা মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার বৈষম্য দূর করতে বিভিন্ন সংস্কারকাজ শুরু করেছে। তিনি রাষ্ট্রীয়ভাবে বৈষম্য দূর করতে লক্ষ্য নির্ধারণ করতে বলেন। দেশের নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং নারীদের জন্য সমান সুযোগ তৈরির পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ভূমিহীনদের হাতে খাসজমি তুলে দিলে দেশে উৎপাদন বাড়বে, শ্রমিকদের শিল্প-কারখানায় মালিকানার অংশ দিলে উৎপাদন বাড়বে এবং অসন্তোষ দূর হবে। </p> <p>রেহমান সোবহান জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ৫ শতাংশ শিক্ষা খাতে এবং স্বাস্থ্য খাতের জন্য সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিতে সর্বজনীন স্বাস্থ্যবীমা করার পরামর্শ দেন। </p> <p> </p> <p> </p>