<p>কুড়িগ্রামের চিলমারীতে দারিদ্র্যমুক্ত বহুমুখী সমবায় সমিতি নামে এক‌টি বেসরকা‌রি সংস্থার বিরুদ্ধে গ্রাহক‌দের প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা আত্মসা‌তের অ‌ভি‌যোগ উঠেছে। এ অবস্থায় প্রায় দুই হাজার গ্রাহক বিপা‌কে প‌ড়ে‌ছেন। গত ৫ আগ‌স্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গাঢাকা দেন সমি‌তির লোকজন।</p> <p>জানা গে‌ছে, গত ২০০৭ সা‌লে উপজেলার রমনা মডেল ইউনিয়নের জোড়গাছ বাজার এলাকায় ‘দারিদ্র্যমুক্ত বহুমুখী সমবায় সমিতি’ না‌মে এক‌টি প্রতিষ্ঠান চালু করা হয়। অসাধু কর্মকর্তা‌দের যোগসাজ‌শে ওই বছরই উপজেলা সমবায় অফিস থেকে রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত হয় সমিতিটি। অ‌ধিক সু‌বিধার প্রলোভন দে‌খি‌য়ে প্রায় দুই হাজার সদস্য নিয়ে লোক-দেখানো ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রম শুরু করে ওই প্রতিষ্ঠান।</p> <p>ভুক্ত‌ভোগীরা জানান, সমিতির পক্ষ থেকে ব্যাংকের তুলনায় লভ্যাংশ বেশি দেওয়ার আশ্বাস ও যেকোনো সময় জমা করা টাকা উত্তোলনের সুযোগ রাখার ঘোষণা দেওয়া হয়। এতে খুব সহজেই ফাঁদে পড়েন এলাকার মানুষ। প্রথম দিকে সমিতির কার্যক্রম ঠিকঠাক থাকলেও চল‌তি বছর সমিতির সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।</p> <p>সমিতিতে এক লাখ টাকায় প্রতি মাসে এক হাজার টাকা লভ্যাংশ প্রদানের শর্তে বিভিন্ন মেয়াদে অন্তত দুই শতাধিক সদস্য প্রায় প্রায় কোটি টাকা জমা রাখেন। এ ছাড়া এসব সদস্য প্রতি মাসে সঞ্চয়ের টাকাও জমা দিতেন। সব মিলিয়ে প্রায় সাড়ে তিন কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় ব‌লে জানান ভুক্তভোগীরা।</p> <p>সমিতির অফিসে গিয়ে দেখা যায়, অফিসটিতে সাইনবোর্ড থাকলেও গত মাস থেকে অ‌ফি‌সের ভেতর একটি নুরানি মাদরাসার কার্যক্রম প‌রিচা‌লিত হ‌য়ে আসছে।</p> <p>ভুক্ত‌ভোগী জামাল উদ্দিন নামে অবসরপ্রাপ্ত এক বিজিবি সদস্য বলেন, ‘আমি বিজিবিতে ৩৭ বছর চাকরি করেছি। বর্তমানে আমার শারী‌রিক অবস্থা ভা‌লো না। আমার পেনশনের চার লাখ টাকা এই সমিতিতে রাখি। তারা প্রতি লাখে এক হাজার টাকা লাভ দেবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয়। তবে এক বছর থেকে লভ্যাংশ তো নেই, জমা টাকা পাওয়াও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।’</p> <p>বিলকিস বেগম নামে আরেক ভুক্ত‌ভোগী বলেন, ‘দুই মেয়ের নামে সাড়ে তিন লাখ টাকা জমা রাখি। এ ছাড়া প্রতি মাসে দুই হাজার ক‌রে টাকা সঞ্চয় রাখছিলাম। কিন্তু বছরখানেক ধরে টাকা চাইতে গেলে দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তারা টালবাহানা করছেন। এখন তো তাঁরা পলাতক।’</p> <p>সমিতির সাধারণ সম্পাদক নুর আলম বলেন, ‘সমিতির সব ধরনের লেনদেনসহ যাবতীয় কাজ করতেন পরিচালক আনিছুর রহমান আনিছ। আনিছসহ সে সময় আওয়ামী লীগের থানাহাট ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মিলনসহ কয়েকজন সমিতির টাকা আত্মসাৎ করেছেন। আমি নিজেই বাদী হয়ে আনিছের নামে টাকা আত্মসাতের মামলা করেছি।’</p> <p>টাকা আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মিলন বলেন, ‘আমি কোনো দিন তাদের ওখানে যাইনি, জানিও না।’</p> <p>উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান জানান, সমবায় বিধি মোতাবেক হিসাব-নিকাশ জমা না দেওয়ায় গত বছর ওই সমিতির নিবন্ধন বাতিল করা হয়েছে।</p> <p>চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সবুজ কুমার বসাক বলেন, ‘বিষয়‌টি শু‌নে‌ছি।</p> <p> </p> <p> </p>