<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিনা খরচে কেয়া আক্তার সাথীকে বিদেশ নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দেয় সানভির ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলস। ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পাসপোর্ট ও ভিসা করে তাঁকে দুবাই পাঠিয়ে চার লাখ টাকায় বিক্রি করে দেওয়া হয়। রামপুরা থানায় মামলা করে ভুক্তভোগী পরিবার। তদন্ত শেষে পুলিশ চারজনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়। ঢাকার মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে তাঁদের বিচার শুরু হয়। তবে বিচার চলাকালে ১৮ জন সাক্ষীর মধ্যে শুধু ভুক্তভোগী নিজে সাক্ষ্য দেন। আসামিদের সঙ্গে তাঁর আপস হয় এবং ক্ষতিপূরণ বাবদ এক লাখ টাকা পেয়েছেন বলে জবানবন্দিতে জানান। তাতে লেখেন, আসামিরা খালাস পেলে তাঁর কোনো আপত্তি নেই। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একইভাবে ২০১৯ সালের ১০ মে ভুক্তভোগী রিপনকে অস্ট্রেলিয়া পাঠাতে জে এইচ চৌধুরী ওভারসিসের আসামি রবিউল ইসলাম সুমন ১২ লাখ টাকায় চুক্তি করেন। আট লাখ টাকা নিয়ে তাঁকে ইন্দোনেশিয়ায় পাঠানো হয়। সেখানে তিনি গ্রেপ্তার হয়ে জেলে যান। তাঁকে ছাড়াতে পরে আরো চার লাখ টাকা দিতে হয়। ২০২২ সালের ১৮ মে ভুক্তভোগী পরিবার মামলা করে। ওই বছরের ১০ আগস্ট অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। তবে এ মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ পর্যায়ে ভুক্তভোগী রিপন তাঁর জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, তিনি ১১ লাখ টাকা বুঝে পেয়েছেন। এখন তাঁর অভিযোগ নেই। আসামি জামিন পেলে আপত্তি নেই। শুধু এই দুটি মামলা নয়, এই ট্রাইব্যুনালে নিষ্পত্তি হওয়া ৯৬ শতাংশ মামলার আসামিরা খালাস পেয়েছেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঢাকার মানবপাচার ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর থেকে বর্তমান পর্যন্ত এক হাজার ৪৫০টি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে খালাস পেয়েছেন এক হাজার ১৮৩টি মামলার আসামি। অব্যাহতি পেয়েছেন ২১৩ মামলার আসামিরা। সাজা হয়েছে ৫৪টি মামলার আসামিদের। এই ট্রাইব্যুনালে গত বছরের ২ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০৭টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ১৩০টি মামলায় খালাস ও ৬৬টি মামলায় অব্যাহতি দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ১১টি মামলায় আসামিদের সাজা দেওয়া হয়েছে। ২০২৩ সালে ট্রাইব্যুনালে ২১৮টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন বিচারক। খালাস পেয়েছেন ১৪১টি মামলার আসামিরা। অব্যাহতি দিয়েছেন ৬৪ মামলার আসামিকে। আর সাজা হয়েছে ১৩ মামলার আসামির। ২০২২ সালে ৫৭৬টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন ট্রাইব্যুনাল। ১৪টি মামলায় সাজা হয়েছে। খালাস পেয়েছেন ৫১৪ মামলার আসামিরা। ২০২১ সালে ৪১৩টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। ১৭টির সাজা হয়েছে। খালাস পেয়েছেন ৩৬১ মামলার আসামিরা। ২০২০ সালের ১২ মার্চ থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আদালত ৩৭টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। নিষ্পত্তি হওয়া কোনো মামলায় সাজা হয়নি। সবাই খালাস পেয়েছেন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্তমানে ঢাকার মানবপাচার ট্রাইব্যুনালে ৯৬৪টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে থানার মামলা ৭৮০টি ও পিটিশন বা নালিশি মামলা ১৮৪টি। এই ট্রাইব্যুনালে ৫-১০ বছর ধরে ১৫৯টি মামলা বিচারাধীন। একই সঙ্গে ১০ বছরের অধিক সময় ধরে ২১টি মামলার বিচার ঝুলে রয়েছে। এ ছাড়া উচ্চ আদালত থেকে ৯টি মামলা স্থগিত হয়েছে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে গত জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৯২৮টি মামলা হয়েছে। অক্টোবর শেষে এক হাজার ২০৫টি মামলা তদন্তাধীন এবং বিচারাধীন দুই হাজার ৯৩৬টি মামলা। চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে ৩৩৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি মামলায় সাজা হলেও ৩১৭টি মামলায় খালাস পেয়েছেন আসামিরা। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির নতুন সভাপতি সালমা আলী বলেন, মানবপাচারের মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকেন। পাচারকারীদের অনেক টাকা থাকায় ভুক্তভোগীদের কিনে নেয়। সাক্ষীদের সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় তাঁরা ভয়ে পালিয়ে বেড়ান। এ ছাড়া মামলার বিচারে দীর্ঘসূত্রতা রয়েছে। এই আইনের সঠিক প্রয়োগ ও নজরদারি না থাকায় আসামিরা খালাস পেয়ে যান। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিদেশে লোক পাঠানো নিয়েই বেশির ভাগ মানবপাচারের মামলা হয়। বিদেশে ভালো কাজ না পেয়ে ফিরে এসে মামলা করেন। সত্যিকার অর্থে মানবপাচার কম। তবে ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে তাদের সহযোগীরা মানবপাচারে জড়িত ছিল। তারা প্রভাব বিস্তার করে বাদীকে ভয় দেখাত। এক পর্যায়ে তারা খালাস পেয়ে যেত। যে কারণে এই আইনের মামলায় সাজা কম। আমরা উদ্যোগী হয়ে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় কাজ করব।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চার্জশিটের অভিযোগ প্রমাণে আদালতে সাক্ষীদের ঠিকভাবে উপস্থাপন করতে হবে। বিচারক চার্জশিটের ওপর ভিত্তি করে তো সাজা দিতে পারেন না। বিগত সরকারের আমলে যাঁরা রাষ্ট্রপক্ষের দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা অনেক সময় সাক্ষ্য নিতে সহযোগিতা করেননি। যাঁরা মানবপাচার করেন তাঁরা সচ্ছল।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"> </p>