<p>মহান মুক্তিযুদ্ধ ও গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে নতুন যুক্তফ্রন্ট গঠনের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) নেতারা বলেছেন, জনগণ অন্তর্বর্তী সরকারের অন্তরের কথা বুঝতে পারছে না, ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছে। রাজনীতির বাইরে কোনো খেলা চলবে না। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে দ্রুত নির্বাচন দিতে হবে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ পরিচালনা করতে হবে।</p> <p>গতকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ঢাকা সমাবেশ’ থেকে এই আহ্বান জানানো হয়। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার, আহতদের সুচিকিৎসা ও হতাহতদের পরিবারের পুনর্বাসন, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা, বাজারব্যবস্থার সংস্কার, নিত্যপণ্যের দাম কমানো, রেশন ও ন্যায্য মূল্যের দোকান চালু, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত, দখলদারি ও চাঁদাবাজি বন্ধ, মুক্তিযুদ্ধ ও ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণ, শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের দাবি পূরণে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, লুটপাট-সাম্প্রদায়িকতা-আধিপত্যবাদ-সাম্রাজ্যবাদ রুখে দাঁড়ানোর দাবিতে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম।</p> <p>বক্তব্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা শাহ আলম বলেন, সরকারের সংস্কার প্রস্তাব নিয়ে এরই মধ্যে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে। সংস্কার আগে, না নির্বাচন আগে—এ নিয়ে অহেতুক বিতর্ক সৃষ্টি করা হচ্ছে। সংস্কার ও নির্বাচন সাংঘর্ষিক নয়, এটা পরস্পরের পরিপূরক। সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, বাহাত্তরের সংবিধান ও জাতীয় চার মূলনীতি বাতিলের দাবি এবং জাতীয় সংগীত নিয়ে বিতর্ক সামনে এনে জাতীয় ঐক্যের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা হয়েছে। ভিন্নমত পোষণ করলেই আগের মতো স্বৈরাচারের দোসর বলে ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে জঙ্গি ও নৈরাজ্যবাদী শক্তির পথকে প্রশস্ত করা হচ্ছে।</p> <p>সিপিবির সাবেক সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণ-অভ্যুত্থানের জন-আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নের জন্য ব্যবস্থা বদল করতে হবে। সেই লক্ষ্য অর্জনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির বাইরে থাকা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সব শক্তি মিলে একটি ‘নয়া যুক্তফ্রন্ট’ গঠন করতে হবে। তিনি দ্রুত প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে নির্বাচন দেওয়ার দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘যদি কেউ আওয়ামী লীগের কারণে মুক্তিযুদ্ধকে কবর দিতে আসেন, তাহলে আমরা আরেকবার যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত আছি।’</p> <p>সিপিবির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ছলে-বলে-কৌশলে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় থাকার অপচেষ্টা বাদ দিয়ে জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। এই সরকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করতে পারেনি। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হওয়ায় জনজীবনে সংকট বেড়েছে। পতিত আওয়ামী সরকারের সিন্ডিকেট বহাল রেখে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ হবে না। তাই রাজপথে দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলনের পাশাপাশি ক্ষমতা দখলের লড়াই এগিয়ে নিতে হবে।</p> <p>মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র প্রতিহত করার আহ্বান জানিয়ে প্রিন্স বলেন, ‘একাত্তরের পরাজিত সাম্প্রদায়িক শক্তি ও ঘাতক চক্র বাহাত্তরের সংবিধানকে ছুড়ে ফেলতে চায়। কিন্তু আমরা সাম্প্রদায়িকতাকে প্রতিহত করব এবং বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তুলব। এ জন্য বিকল্প শক্তি সমাবেশ গড়ে তুলতে হবে।’</p> <p>কর্মসূচি : সমাবেশ থেকে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—বৃহত্তর ঐক্য গড়ে তুলতে আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তির সঙ্গে মতবিনিময়, ২০ জানুয়ারি পল্টন হত্যা দিবসে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া শপথ গ্রহণ এবং ২১ থেকে ২৭ জানুয়ারি গণতন্ত্রের অভিযাত্রা কর্মসূচি ও হাজার কিলোমিটার পদযাত্রা।</p> <p> </p>