<p>পিলখানা হত্যাকাণ্ডে  কারাবন্দি সব বিডিআর সদস্যকে মুক্তি, মামলা বাতিল, চাকরিচ্যুতদের চাকরিতে পুনর্বহাল ও পুনর্বাসন এবং এই মামলায় পুনঃ তদন্ত ও ন্যায়বিচারে আজ বৃহস্পতিবারের মধ্যে ইতিবাচক ইঙ্গিত না পেলে শাহবাগ ব্লকেডে যাবেন বাংলাদেশ বিডিআর পরিবারের সদস্যরা। গতকাল বুধবার প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন থেকে ফিরে এই ঘোষণা দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক সমন্বয়ক মাহিন সরকার।</p> <p>যদিও ২০০৯ সালে ওই পৈচাশিক হত্যকাণ্ডের মামলায় কারাবন্দি বিডিআর সদস্যদের বেশির ভাগই অপরাধী বলে ভুক্তভোগী শহীদ পরিবারের সদস্যদের ধারণা। গত সোমবার এই হত্যাকাণ্ড তদন্তে গঠিত জাতীয় স্বাধীন কমিশনকে তাঁরা তাঁদের এই ধারণার কথা জানান।</p> <p>এদিকে গতকাল ভোরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হন চাকরিচ্যুত ও করাবন্দি বিডিআর পরিবারের সদস্যরা। সেখানে সমাবেশ শেষে তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা অভিমুখে পদযাত্রা শুরু করেন। পদযাত্রাটি শাহবাগ থানার সামনে এলে পুলিশ তাঁদের আটকে দেয়। পরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর মধ্যস্থতায় একটি প্রতিনিধিদল তাদের দাবিদাওয়াসংবলিত একটি স্মারকলিপি নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে যায়। অন্যরা শাহবাগেই অবস্থান করেন।</p> <p>পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘পিলখনায় হত্যাকাণ্ডের পর চাকরিচ্যুত ও কারাগারে থাকা বিডিআর সদস্যদের পরিবারের লোকজন এ আন্দোলন করছেন। তাঁরা শাহবাগে এলে পরিস্থিতি বিবেচনায় ত াঁদের আটকে দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাড়তি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়।</p> <p>২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা, তাঁদের লাশ গুম এবং শহীদ সেনাকর্মকর্তাদের পরিবার-পরিজনের ওপরেও অকথ্য নির্যাতন চালানো  হয়।</p> <p>এই ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা হয়। হত্যা মামলায় খালাস বা সাজা ভোগ শেষে বিস্ফোরক মামলার কারণে ৪৬৮ জনের মুক্তি আটকে আছে। হত্যা মামলায় ৮৫০ জনের বিচার শেষ হয় ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর। তাতে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬০ জনের যাবজ্জীবন ও ২৫৬ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়। খালাস পান ২৭৮ জন।</p> <p>২০১৭ সালের ২৭ নভেম্বর সেই মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের রায়ও হয়ে যায় হাই কোর্টে। তাতে ১৩৯ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখা হয়। যাবজ্জীবন সাজা দেওয়া হয় ১৮৫ জনকে। আরো ২২৮ জনকে দেওয়া হয় বিভিন্ন মেয়াদে সাজা। খালাস পান ২৮৩ জন।</p> <p>হাই কোর্টের রায়ের আগে ১৫ জনসহ সব মিলিয়ে ৫৪ জন আসামির মৃত্যু হয়। হত্যা মামলায় হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে ২২৬ জন আসামি আপিল ও লিভ টু আপিল করেছেন। অন্যদিকে হাই কোর্টে ৮৩ জন আসামির খালাস এবং সাজা কমানোর রায়ের বিরুদ্ধে লিভ টু আপিল করেছে রাষ্ট্রপক্ষ। এসব আপিল ও লিভ টু আপিল এখন শুনানির অপেক্ষায়।</p> <p>গতকাল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সমাবেশে বিডিআর পরিবারের সদস্যদের পক্ষ থেকে বলা হয়, ‘তত্কালীন সরকার প্রধান শেখ হাসিনার নীলনকশার অংশ হিসেবেই ২০০৯ সালে পরীক্ষিত সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়। একই সঙ্গে পরিকল্পিতভাবে ফাঁসানো হয় বিডিআর সদস্যদের। সমাবেশে বিডিআর সদস্যদের বিরুদ্ধে করা বিস্ফোরক মামলায় সবার জামিনের পাশাপাশি ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কারাগারে থাকা সদস্যদের মুক্তির আলটিমেটাম দেওয়া হয়। তাঁদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে সমাবেশে অংশ নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারাও। তাঁরা বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের দিনটিকে সেনাহত্যা দিবস ঘোষণা করতে হবে। জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রে বিডিআর সদস্যদের দাবিগুলোও অন্তর্ভুক্ত করার দাবিও তাঁদের।</p> <p> </p>