বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ‘এ-গ্রেড’ ক্যাটাগারির ২৩ নম্বরে অবস্থান রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। পর্যাপ্ত গবেষণা, গবেষণাবিষয়ক প্রকাশনী, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনুপাত, মাস্টার্স ও পিএইচডির শিক্ষার্থীসংখ্যাসহ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের প্রয়োজনীয় অনেক শর্তই বিশ্ববিদ্যালয়টির রয়েছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠার ২৫ বছরেও আন্তর্জাতিক র্যাংকিংয়ের জন্য আবেদন করা হয়নি। তাই তালিকাভুক্ত হয়নি বিশ্ব মানদণ্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ে।
এর জন্য প্রশাসনের উদাসীনতা বা ব্যর্থতাকে দায়ী করেন সংশ্লিষ্ট অনেকে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচবারের বেশি প্রশাসনিক দায়িত্বের পালাবদল হয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে ভালো অবস্থানের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি বিগত সময়ের কোনো প্রশাসনকে। প্রয়োজনীয় সব তথ্যকে সমন্বয় করে বিশ্ববিদ্যালয় ওয়েবসাইটে প্রকাশ এবং আন্তর্জাতিক র্যাংক প্রাপ্তির জন্য বিভিন্ন শিক্ষা ও গবেষণাবিষয়ক সংস্থায় সরবরাহ করার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি।
এ ছাড়া পর্যাপ্ত ল্যাব সুবিধা সৃষ্টি, শিক্ষার্থীদের বিপরীতে প্রয়োজনীয় ক্লাসরুম, গবেষণার জমির অভাব এবং বিদেশি শিক্ষার্থী কমে যাওয়াসহ বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে বিগত প্রশাসনিক আমলগুলোতে পদক্ষেপ গ্রহণে ছিল মন্থরতা। আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পিছিয়ে থাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংক না পাওয়ার জন্য এসব কারণকে দায়ী করছে দায়িত্বরত বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান প্রশাসন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়টির কোয়ালিটি অ্যাশিউর্যান্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. মো. রজব আলী বলেন, ‘দীর্ঘ ২৫ বছরে একবারও আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিশ্ববিদ্যালয়কে বিবেচনার জন্য আবেদন না করার বিষয়টি লজ্জাজনক। আমাদের পরে প্রতিষ্ঠিত দেশের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থায় ভালো র্যাংক করছে।
তাদের থেকে গবেষণাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলেও মূলত মানসিকতায় আমরা এত দিন পিছিয়ে ছিলাম। না হলে প্রতিষ্ঠার দীর্ঘ এই সময় অতিক্রমের পরও কেন একবারও আবেদন করা হবে না।’
র্যাংকিংয়ের জন্য আবেদন না করার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত প্রশাসনের কোয়ালিটি অ্যাশিউর্যান্স ইনিস্টিটিউটের পরিচালক ড. তুহিন শুভ্র রয় বলেন, আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের জন্য কখনো আবেদন না করার তথ্য সত্য। তবে বাস্তবতা হলো, বিগত সময়ে প্রশাসনিকভাবে এই বিষয়গুলোতে খুব বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়নি। আবার এ বিষয়গুলোতে দায়িত্বরত ব্যক্তিদের প্রশাসনের উচ্চস্তরে কথা বলার জায়গাও ছিল কিছুটা সংকুচিত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে কখনো আবেদন না করার বিষয় জেনে রীতিমতো অবাক হয়েছিলাম। এ ছাড়া বেশ কিছু মানদণ্ডে আমরা পিছিয়ে আছি। শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিষ্ঠানকে সর্বদা ভালো অবস্থানে দেখতে চায়। তবে এই অবস্থার পরিবর্তনে আমরা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। এরই মধ্যে কিউএস এবং টাইমস হায়ার এডুকেশনস সংস্থায় আবেদন করা হয়েছে এবং নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় তথ্য সরবরাহের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করছি ২০২৬ সালের মধ্যে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিষ্ঠানকে ভালো অবস্থানে দেখতে পারবে।’