ধর্ষণের স্বীকার ভুক্তভোগীরা নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগলেও চিকিৎসা নিতে আসেন না তাঁরা। এসব ভুক্তভোগীর মধ্যে মানসিক চিকিৎসা নেওয়ার হার ১ শতাংশেরও কম। গতকাল রবিবার জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে এক সংবাদ সম্মেলনে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনটির আয়োজন করে মানসিক চিকিৎসকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলসেন্ট মেন্টাল হেলথ।
’
জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগীরা মানসিক চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে আসেন না বা আসতে চান না। যাঁরা আসেন তাঁরা আবার বিস্তারিত সমস্যার কথা বলতে চান না। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সংখ্যা ১ শতাংশের মতো বা আরো কম। অথচ এই ভুক্তভোগী মানুষটির মানসিক চিকিৎসা জরুরি।
এ জন্য বিষয়টি মিডিয়ায় প্রচার হওয়া খুব প্রয়োজন। যাতে ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগী মানসিক চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ থাকতে পারেন।
সংবাদ সম্মেলনে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের ফেজ বি রেসিডেন্ট ডা. শবনম সাবা ও ডা. নিশাত তামান্না। প্রবন্ধে বলা হয়, শুধু আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী গত ১০ বছরে পাঁচ হাজার ৬০০ শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে।
এর মধ্যে ৩১৬ শিশুকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি শিশু ধর্ষণের শিকার হয় ২০২০ সালে, এক হাজার ১৮ জন এবং ২০১৯ সালে ৯৮৬ জন। ধর্ষণের কারণে সবচেয়ে বেশি শিশুর মৃত্যু ঘটে ২০১৯ সালে ৫৬ জন এবং ২০২০ সালে ৩৫ জন।
এতে আরো বলা হয়, ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগীর নির্দিষ্ট কোনো ধরন নেই, তেমনি এদের নির্দিষ্ট কোনো প্রতিক্রিয়াও নেই। তবে সাধারণভাবে, ট্রমা সিনড্রোম, পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিস-অর্ডার, বিষণ্নতা, সামাজিক ভীতি (বিশেষ করে বৈবাহিক বা প্রেমজনিত ধর্ষণের শিকারদের মধ্যে), উদ্বেগ, মাদকের প্রতি আসক্তি, আত্মহত্যা প্রবণতা দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশ মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. নাহিদ মাহজাবিন মোরশেদ বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগী সব সময় আতঙ্কে থাকেন। তাঁর নিজের জীবন এবং পরিবারের সদস্যদের নিয়ে আতঙ্কিত হন। শুধু যে লজ্জা, ভয়-ভীতি নিয়ে বেঁচে থাকেন তা কিন্তু নয়।
তিনি বলেন, চিকিৎসা দিতে গিয়ে আমরা দেখেছি, রোগী পরিবারের সদস্য দ্বারা ধর্ষিত হলেও কখনো কোথাও অভিযোগ করেন না। শুধু যে নারীরা ধর্ষিত হচ্ছেন তা নয়, ছেলেরাও ধর্ষিত হয়ে চিকিৎসার জন্য আসছে।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলসেন্ট মেন্টাল হেলথের সভাপতি অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দিন কাউসার বিপ্লব বলেন, ‘ধর্ষণের স্বীকার ভুক্তভোগীরা মানসিক চিকিৎসকদের কাছে আসেন না। বেশির ভাগ ভুক্তভোগী নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ করতে চান না। যাঁরা প্রকাশ করেন, তাঁরা নিজেরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে শেষে চিকিৎসকদের কাছে আসেন।’