<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপকূলীয় জেলা বরগুনার সঙ্গে নৌ যোগাযোগের একমাত্র পথ খাকদোন নদ। দখল-দূষণ ও নাব্যতাসংকটের কারণে এ নদটি অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। নদটি দখলের কারণে বারবার খনন করেও নাব্যতা ধরে রাখা যাচ্ছে না। খাকদোন নদের অস্তিত্ব বিলীন হলে এর সঙ্গে অন্তত ১৫টি প্রাকৃতিক খালেরও মৃত্যু হবে। অবৈধ দখলদারদের তালিকা অনুযায়ী প্রশাসন কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু করলেও পরে তা থেমে যায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্থানীয়রা বলছেন, একসময় নদটি প্রায় দেড় কিলোমিটার প্রশস্ত ছিল। গত দুই দশকে অব্যাহত দখল, রক্ষণাবেক্ষণে উদাসীনতা ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের অবহেলায় বিষখালী-পায়রা দুই নদীর সংযোগ স্থাপনকারী ২৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এ নদের ১৫ কিলোমিটার মরা খালে পরিণত হয়েছে। বাকি ১০ কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র ছয় কিলোমিটারে কোনো রকমে নৌযান চলাচল করে। এই নদে বিআইডব্লিউটিএর নৌবন্দর অবস্থিত। শুষ্ক মৌসুমে এই ছয় কিলোমিটারেও নাব্যতাসংকট দেখা দেয়। অপরিকল্পিত সেতু এবং দুই পাশ দখলের কারণে বরগুনার প্রাণ এই খাকদোন নদের অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, বরগুনা নদীবন্দর সচল রাখতে প্রায় প্রতিবছর সরকার লাখ লাখ টাকা ব্যয়ে খাকদোন নদের ছয় কিলোমিটার খনন করে। কিন্তু অব্যাহত দখলের কারণে এই অংশের নাব্যতা ধরে রাখা যাচ্ছে না। এ কারণে নাব্যতা ও অস্তিত্ব সংকটের মুখে পড়েছে নদটি। নদের সঙ্গে শাখা খালগুলোর প্রবেশদ্বারে স্লুইসগেট নির্মাণ করায় জোয়ারের প্রবাহ কমে গিয়ে এসব খালও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। বরগুনা শহরের ক্রোক থেকে মাছবাজার পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এলাকায় বিআইডব্লিউটিএর তালিকায় ১৫০ জন অবৈধ দখলদারের নাম রয়েছে। এর মধ্যে সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে রাজনীতিবিদ, সাবেক জনপ্রতিনিধিদের নামও রয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, বরগুনা শহরের প্রাণকেন্দ্রে খাকদোন নদ দিয়ে একসময় চলত বড় বড় পণ্যবাহী জাহাজ। তবে বছরের পর বছর এর দুই তীর দখলের কারণে সরু হয়ে আসছে। নাব্যতাসংকটের কারণেও নৌযান চলাচলে হিমশিম খেতে হয়। নদটি বিপন্ন হলে পরিবেশ ও ব্যবসা-বাণিজ্য হুমকির মুখে পড়বে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরেজমিনে দেখা গেছে, খাকদোন নদের দক্ষিণপারের পোটকাখালী এলাকা থেকে মাছবাজার ব্রিজ পর্যন্ত সীমানা এলাকার মধ্যে অগণিত অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। শহরের কাঠপট্টি এলাকায় নদের চর দখল করে কাঠবাজার গড়ে তোলা হয়েছে। আবার লঞ্চঘাটের উত্তর পারে নদের ভেতর ঘাটলা নির্মাণ করছে পিআইও অফিস। বরগুনা জেলা প্রশাসন ২০২২ সালের ২১ মার্চ খাকদোন নদের দক্ষিণ পারে মাছবাজার এলাকায় ৪৪টি অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ করেই জেলা প্রশাসন আবার ৭৫টি ঘর বরাদ্দ দিয়েছে। এ বছরের ১২ মে হাইকোর্ট নদের দক্ষিণ তীরভূমিতে মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আদেশ দেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বরগুনা সদরের কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের হলদিয়া গ্রামের বাসিন্দা মোবারক আলী (৬৫) বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাবা-দাদার কাছে শুনেছি এই নদ দিয়ে একসময় স্টিমার, লঞ্চসহ বিভিন্ন নৌযান চলাচল করত। এখন এসবই স্মৃতি। খাকদোন শেষ পর্যন্ত মরেই যাবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কেওড়াবুনিয়া ইউনিয়নের শিংড়াবুনিয়া গ্রামের মোখলেছুর রহমান (৬৫) বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">খাকদোন নদে এখন নৌকা-ট্রলার কিছুই চলতে পারে না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফুলঝুরি ইউনিয়নের বাসিন্দা শাহজাহান মিয়া (৬০) বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নদের সঙ্গে সংযোগ খালগুলোর মুখে স্লুইসগেট নির্মাণ করায় এবং দুই পার অব্যাহত দখল করায় খাকদোন নদটি এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানায়, খাকদোন নদটি দখলের কারণে এখন বেশির ভাগ অংশ মৃতপ্রায়। নদটি রক্ষার জন্য পাউবো থেকে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। সেই প্রস্তাবনা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ (বেলা) সমিতি বরিশাল বিভাগের সমন্বয়কারী লিংকন বাইয়ান বলেন, দুই পার দখল ও পলি জমে নদটি ভরাট হওয়ায় নাব্যতাসংকট দেখা দিয়েছে। আশাকরি এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের বিষয়ে প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বরগুনা নদীবন্দর কর্মকর্তা মাহাফুজার রহমান বলেন, নদের দক্ষিণ ও উত্তরপারে সীমানার মধ্যে অবৈধ দখলদার রয়েছেন। দখলের কারণে নদটির অস্তিত্ব বিপন্ন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ঘাটলা নির্মাণ বন্ধ করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল, তারা তা মানছে না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বরগুনা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নদটি রক্ষার জন্য পাউবো থেকে একটি প্রস্তাবনা তৈরি করা হয়েছে। সেই প্রস্তাবনা পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিকুল আলম বলেন, খাকদোন নদের দুই পারের অবৈধ দখলদারদের তালিকা তৈরি করা হচ্ছে।</span></span></span></span></p>