<p>দূর থেকে মনে হয় যেন পাথরের কোনো উপত্যকা। কিন্তু আসলে তা নয়। দূর-দূরান্ত থেকে আনা বিশাল পাথরের স্তূপ নরসুন্দা নদীতেই রাখা হচ্ছে। এতে গতিপথ পরিবর্তন হয়ে যেন কাঁদছে নরসুন্দা। দীর্ঘদিন ধরে নদীপথকে কাজে লাগিয়ে ইজারাবিহীন শতকোটি টাকার পাথর আমদানি-রপ্তানির ব্যবসা করছেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। এ অবস্থা চলমান থাকলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।</p> <p>এতে নান্দাইল উপজেলায় বাণিজ্যিক সুবিধা বাড়লেও সরকার যেমন কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে, ঠিক তেমনি নরসুন্দার পানিপ্রবাহের পথ বন্ধ হওয়ায় উপজেলায় বিঘ্ন ঘটছে কৃষিজমি চাষাবাদে। এ ছাড়া পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই পাথর ক্র্যাসিং করা হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নামমাত্র ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে সড়ক ও জনপথের জায়গা এবং নদীর জায়গা দখল করে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছে রমরমা পাথর ব্যবসা। সেই পাথর ব্যবসা কেন্দ্র করে নরসুন্দা নদীর জমি (চর) দখল ও পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতাসহ পরিবেশদূষণ করা হচ্ছে।</p> <p>গত বুধবার ও গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা সিলেট, সুনামগঞ্জ, ছাতকসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বড় বড় নৌকা দিয়ে নদীপথে লাখ লাখ ঘনফুট বড় বড় পাথর মুশুলী ইউনিয়নের তারেরঘাট বাজারে নিয়ে আসেন। সেই পাথর নরসুন্দা নদীর তীরে স্তূপ করে রাখা হয়। পরে তা ক্র্যাসিং মেশিনের মাধ্যমে ভাঙানো হয় এবং তা সারা বছর ক্রয়-বিক্রয় করা হয়। এতে ব্যবসায়ীরা নদীর জায়গা দখলে নিয়ে যাওয়ায় সংকোচন হয়ে যাচ্ছে নদীর সীমানা।</p> <p>ব্যবসায়ীরা জানান, পাথর বহনকারী ছোট-বড় প্রতিটি নৌকা থেকে  ৪০০-৮০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা তোলা হয়, যা ব্যবসায়ী সমিতি নিয়ে যায়। তবে বেশ কয়েকজন পাথর ব্যবসায়ী জানান, ওই তারেরঘাট বাজার পাথর ব্যবসায় সরকারি ইজারা ডাকের ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। এখানে কারো পরিবেশ অধিদপ্তরের কোনো অনুমতি নেই।</p> <p>জানা গেছে, এই পাথর ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার লেনদেন হয়। তবে স্থানীয়রা মনে করেন, এখানে বছরে কমপক্ষে পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকার পাথর কেনাবেচা হয়ে থাকে।</p> <p>এ ব্যাপারে তারেরঘাট পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আইয়ুব আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘ভাইরে এটা তো মরা নদী। মরা নদীর আর গতি কি? তার পরেও সবাইকে বলে দিছি নদীতে পাথর না ফেলার জন্য।’</p> <p>স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ইফতেকার উদ্দিন ভূঁইয়া জানান, সরকারি ইজারা ছাড়াই বিশাল কর্মযজ্ঞ চালাচ্ছে। অনেকেই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করছেন। মোটা অঙ্কের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।</p> <p>এ বিষয়ে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত দায়িত্বে) মো. আবুল ইসলাম বলেন, ‘এ বিষয়ে জানতাম না। খোঁজ নিয়ে অচিরেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’</p>