<p>‘হামরা প্রতিবছর বন্যার কবলে পড়ি ভিটামাটি হারাই। সরকার হামাক ত্রাণ দিয়ে সাহায্য করে। হামরা আর বন্যার সময় ত্রাণ চাই না, তিস্তার ভাঙনের হাত থেকে বাঁচতে উজানে একটি বেড়িবাঁধ চাই।’ কথাগুলো বলছিলেন রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের চরগাবুড়া গ্রামের আব্দুস ছামাদ। শুধু আব্দুস ছামাদ নন, ভাঙন রোধে বেড়িবাঁধের দাবি এ এলাকার সবার। তবু প্রমত্তা তিস্তার ভাঙন রোধে নজর নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।</p> <p>জানা যায়, পীরগাছা উপজেলার ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে তিস্তা নদী। এতে ইউনিয়ন দুটি প্রতিবছর ভাঙনের কবলে পড়ছে। এতে বিলীন হচ্ছে একের পর এক জনপদ। পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় প্রতিবছর ভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হচ্ছে তিস্তাপারের বাসিন্দরা। তাদের দাবি, ছাওলা ইউনিয়নের ১০ নম্বর বোল্ডারের পার থেকে আরো তিন কিলোমিটার বোল্ডার দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করে নদী শাসন করলে এ গ্রামগুলো রক্ষা পেত। কিন্তু কর্তৃপক্ষ অপরিকল্পিতভাবে ১ নম্বর ও ২ নম্বর বেড়িবাঁধ নির্মাণ করলেও বাঁধের পূর্ব পারের গ্রামগুলো বন্যা ও নদীভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। তাই প্রতিবছর নদীভাঙনের ফলে উপজেলার ছাওলা ও তাম্বুলপুর ইউনিয়ন মানচিত্র থেকে ছোট হয়ে আসছে। এ অঞ্চলে গত সাত বছরে প্রায় ২০ হাজার হেক্টর ফসলি জমিসহ সাড়ে তিন হাজার পরিবারের বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে।</p> <p>স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে পানি উন্নয়ন বোর্ড তিস্তার ভাঙন রোধ করতে পারছে না। ফলে প্রতিবছর শত শত পরিবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে সহায়-সম্বল ও বসতবাড়ি হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়ছে।</p> <p>শিবদেবচর গ্রামের আতিয়ার রহমান বলেন, ‘বারবার নদীভাঙনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছি। আগেই যদি উজানে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হতো, তাহলে এত ক্ষতি হতো না। পাউবোর ভুলের কারণে বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।’</p> <p>চরগাবুড়া গ্রামের খয়বর হোসেনসহ অনেকে বলেন, ‘তিস্তার ভাঙনের হাত থেকে বাঁচতে উজানে একটি বেড়িবাঁধ প্রয়োজন। এটাই এত বছরে সরকারকে বোঝাতে পারলাম না। তাই প্রতিবছর ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি আমরা।’</p> <p>ছাওলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজির হোসেন বলেন, ‘উজানে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হলে নদীভাঙন ও বন্যার হাত থেকে ছাওলা ইউনিয়নের শিবদেবচর, চরছাওলা, কামারের হাট, বজরাপাড়া, নয়ারহাট, রামশিং, রহমতের চরসহ বেশ কয়েকটি গ্রাম রক্ষা পাবে। দ্রুত একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।’</p> <p>এ বিষয়ে রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, ‘তিস্তার ভাঙন রোধে বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য আলাদা কোনো বরাদ্দ নেই। বরাদ্দ পেলে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হবে।’</p> <p> </p> <p> </p> <p> </p> <p> </p> <p> </p>