<p>আবহমান সনাতনী কৃষকসমাজের অন্যতম এক লোকাচারের নাম ডাকসংক্রান্তি। এ সময় ধানের ক্ষেতে লক্ষ্মীর ঘর তৈরি করে তাতে লক্ষ্মী দেবীকে আহ্বান ও পূজা-অর্চনা করা হয়। ছড়া কেটে কেটে ক্ষেতের চারপাশে ঘুরে বেড়ায় কৃষক ও তাঁর সন্তানরা। আধুনিকতার ছোঁয়ায় ডাকসংক্রান্তি এখন অনেক এলাকাতেই বিলুপ্তির পথে। তবে পঞ্চগড়ের দরিদ্র কৃষকসমাজে এখনো এই রীতির প্রচলন রয়েছে। এলাকাভেদে ঐতিহ্যবাহী এই ডাকসংক্রান্তি দিনের হেরফের ও কিছুটা পার্থক্য লক্ষ করা যায়।</p> <p>ডাকসংক্রান্তি হিন্দু বর্ষপঞ্জিকা মতে আশ্বিনের শেষ দিনে গ্রামীণ হিন্দুসমাজের এক লৌকিক উৎসব। তবে স্থানীয়রা কেউ ক্ষেতিপূজা, কেউ নলসংক্রন্তি—নানাভাবে এই রীতি পালন করে থাকে। এ সময় ধানক্ষেতের সবুজ ধানকে গর্ভিণী জ্ঞানে পূজা করা হয় এবং লক্ষ্মীর ঘর তৈরি করে দেবী লক্ষ্মীর আরাধনা করা হয়।</p> <p>পঞ্চগড় জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় গ্রামীণ সনাতন কৃষক পরিবারে এবারও পালিত হয়েছে এই উৎসব। গ্রামবাংলার লোকসংস্কৃতির এই ধারা এখনো ধরে রেখেছে তারা। সনাতন সমাজের কৃষকরা জানান, পঞ্জিকা মতে পঞ্চগড়ে এবার ডাকসংক্রান্তি ছিল বৃহস্পতিবার। এই সময়ে ধানের শীষ সবে বের হয়েছে। পূজার জন্য ধানের ফুল সংগ্রহ করা হয়। দিনের বেলাতেই ধানের ক্ষেতের এক কোণে পাটকাঠি দিয়ে লক্ষ্মীর ঘর তৈরি করা হয়। সেখানে ধানের ফুল, পায়েসসহ বিভিন্ন ফল দিয়ে সম্পদের অধিষ্ঠাত্রী দেবী লক্ষ্মীকে আহ্বান করেন কৃষকরা। সন্ধ্যার পর উলুধ্বনিতে জ্বালানো হয় প্রদীপ। ক্ষেতের বিভিন্ন স্থানে কলাপাতায় প্রদীপ জ্বালিয়ে পাটকাঠির মাধ্যমে পুঁতে রাখা হয়। ছড়া কেটে ছুটে বেড়ায় কৃষক ও সন্তানরা। ‘আশ্বিন গেইল কার্তিক হইল/মা লক্ষ্মীর জন্ম হইল/মা লক্ষ্মী দিলে বর/হামার ধান নিকলে পর। আশ্বিন যায় কার্তিক আসে/মা লক্ষ্মী গর্ভে বসে/এপারের পোকামাকড় ওপারেতে যায়/ওপারের শিয়াল-কুকুর ধরে ধরে খায়।’ এভাবে ছড়া কাটে আর ওহো ওহো বলে ডাক ছাড়ে তারা।</p> <p>পঞ্চগড় সদর উপজেলার মালাদাম এলাকার কৃষকবধূ পারুল রানী বলেন, ‘আমরা প্রতিবছর ধানের ক্ষেতে লকক্ষ্মীর ঘর নির্মাণ করে পূজা-অর্চনা করি, যেন দেবী আমাদের ধানের ফলন বাড়িয়ে দেন এবং ফসলকে সব বিপদ-আপদ থেকে রক্ষা করেন।</p> <p>পঞ্চগড়ের ইতিহাস গবেষক আলী ছায়েদ বলেন, ডাকসংক্রান্তি গ্রামীণ বাংলার সনাতন সমাজের একটি অন্যতম লোক সংস্কৃতি।</p> <p> </p> <p> </p>