<p>আব্দুল্লাহ আল বাকি ওরফে আরজু বিশ্বাস। বয়স ৫২ বছর। ছিলেন পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি। আরজু বিশ্বাসের চাচা এনামুল হক এনাম বিশ্বাস পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। তাঁর সঙ্গে খুবই সখ্য রয়েছে স্থানীয় এমপি প্রয়াত শামসুর রহমান শরীফ ডিলু পরিবারের। চাচার তদবিরে পাবনা সুগার মিলের (বর্তমানে উৎপাদন বন্ধ ঘোষাণা) ওজনমাপক (কাটা বাবু) পদে চাকরি পান আরজু বিশ্বাস। অবৈধ উপায়ে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। ঈশ্বরদী শহরে সোয়া কোটি টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট ক্রয় করেছেন। ক্রয় করেছেন বিলাসবহুল প্রাইভেট কার, ১০-১২টি অত্যাধুনিক হাইচ মাইক্রো, পাঁচটি ডাম্পট্রাক। ঢাকার উত্তরায় প্রায় দুই কোটি টাকায় ক্রয় করেছেন ফ্ল্যাট। ঈশ্বরদীতে ১০ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে নির্মাণ করছেন সাততলার বিলাসবহুল বাড়ি।</p> <p>বিভিন্ন সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১২ সালে আরজু বিশ্বাস নিজের ও চাচার দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে অবৈধভাবে পাকশী ইউনিয়নের ফটু মার্কেট এলাকায় পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন করেন। নদীপারের মাটি কেটে বিক্রি করেন ইটভাটায়। এবারও আরজু বিশ্বাস ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেন চাচা এনামুল হক বিশ্বাসকে। স্থানীয় সাবেক এমপি গালিবুর রহমান শরীফ ও তাঁর পরিবারের সঙ্গে এনাম বিশ্বাসের বালুমহালের টাকার লেনদেন ছিল। এই কারণে প্রশাসন ছিল তাঁদের হাতের মুঠোই। পদ্মা নদী থেকে বালু উত্তোলন ও পারের মাটি কেটে বিক্রি করে এক বছরেই বনে যান কোটিপতি।</p> <p>২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ সরকার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের নির্মাণকাজ শুরু করে। তখন থেকেই আরজু বিশ্বাস মেসার্স অর্ক এন্টারপ্রাইজ নামে প্রজেক্টে ছোটখাটো নির্মাণকাজ শুরু করেন। কাজে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করলেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের দাপটে তাঁর বিরুদ্ধে তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী রাশিয়ান কম্পানিগুলো। এমনকি চাচা এনাম বিশ্বাস পাকশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হওয়ায় এককভাবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রকল্প থেকে স্থানীয় কৃষকদের ফসলের ক্ষতিপূরণের তালিকায় আরজু বিশ্বাস নিজের, ছোট ভাইয়ের, বাড়ির কাজের লোক, আত্মীয়-স্বজনের নাম বিশেষ চুক্তিতে কৃষকের ক্ষতিপূরণের তালিকায় তোলেন। কৃষকের ক্ষতিপূরণের ২৮ কোটি টাকার মধ্য থেকে আরজু বিশ্বাস ও তাঁর চাচা চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাস হাতিয়ে নেন প্রায় সাড়ে ছয় কোটি টাকা। এই বিষয়ে প্রতিবাদ করায় নিজ বাড়ির দরজার সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান পাকশী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান সেলিম। এই ঘটনায় পুলিশ আরজু বিশ্বাসকে প্রধান সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে বিদেশি পিস্তলসহ আটক করেছিল পুলিশ। টাকা ও দলীয় ক্ষমতার জোরে কিছু দিনের মধ্যেই জামিনে মুক্ত হয়ে এলাকাসহ প্রকল্পের ভেতরে সব কাজে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন আরজু বিশ্বাস।</p> <p>৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান আরজু বিশ্বাস ও তাঁর চাচা এনাম বিশ্বাস।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার পাকশী রূপপুর ফটু মার্কেট এলাকায় ২০১৩ সালের আগ পর্যন্ত টিনশেড বাড়িতে থাকতেন আরজু বিশ্বাস। বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তাফিজুর রহমান সেলিম হত্যায় অস্ত্রসহ আটক হয়ে জামিনে এসে ঈশ্বরদী শহরের সাউথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সংলগ্ন এলাকায় প্রায় সোয়া কোটি টাকা দিয়ে ফ্ল্যাট ক্রয় করেন। স্ত্রী, ছেলে ও মেয়ের নামে বেনামে কোটি কোটি টাকা এফডিআর ও ডিপোজিট করেছেন। গড়েছেন স্ত্রী ও কন্যার গহনা। ক্রয় করেছেন বিলাসবহুল প্রাইভেট কার, ১০-১২টি অত্যাধুনিক হাইচ মাইক্রো, পাঁচ-ছয়টি ডাম্পট্রাকসহ অন্যান্য ইকুইপমেন্ট। ঢাকার উত্তরায় প্রায় দুই কোটি টাকা দিয়ে ক্রয় করেছেন ফ্ল্যাট, ঈশ্বরদী শহরের বিভিন্ন এলাকায় কিনে রেখেছেন জমি। ঈশ্বরদী সাউথ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ব পাশে ক্রয় করেছেন প্রায় আড়াই কোটি টাকা দিয়ে চার কাঠা জমি। সেখানে ১০ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে নির্মাণ করছেন সাততলাবিশিষ্ট বিলাসবহুল বাড়ি। যার নির্মাণকাজ প্রায় শেষের দিকে। আরজু বিশ্বাস আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলের মাত্র ১২ বছরে নানা উপায়ে শতকোটি টাকার মালিক হয়েছেন। এসব সম্পদের বিষয়ে কিছুই জানে না আয়কর বিভাগ ঈশ্বরদী উপকর কমিশনারের কার্যালয়ের কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টরা।</p> <p>এসব বিষয়ে জানতে দেড় সপ্তাহ ধরে আরজু বিশ্বাস ও তাঁর চাচা এনামুল হক বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে তাঁদের বাড়ি ও শহরের বাড়িতে যাওয়া হয়। তাঁদের পরিবারসহ নিকটাত্মীয়রা জানান, ৫ আগস্টের রাতেই আরজু বিশ্বাস ও তাঁর চাচা এনাম বিশ্বাস মোবাইল ফোন বন্ধ করে এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন। তাঁদের ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরগুলোও বন্ধ রয়েছে। এই কারণে তাঁদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।</p> <p> </p>