<p>সাদা মাটির নৈসর্গিক সৌন্দর্য ঘিরে নেত্রকোনার রয়েছে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা। ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (জিআই) হিসেবে ২০২১ সালে স্থানটি স্বীকৃতি পাওয়ায় এর কদর বেড়েছে সর্বত্র। দেশ-বিদেশের পর্যটকদের কাছে দিন দিন স্থানটির গুরুত্ব বাড়ছে। এ ছাড়া অর্থনৈতিকভাবেও সম্ভাবনা দেখাচ্ছে সাদা মাটি। এই সাদা মাটি চীনামাটি হিসেবেও পরিচিত।</p> <p>ভারতের মেঘালয় রাজ্যের সীমান্তঘেঁষা নেত্রকোনার দুর্গাপুর উপজেলা। দুপাশে পাহাড়, মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে সোমেশ্বরী নদী। গত কয়েক বছরে এই অঞ্চলে এসেছে আমূল পরিবর্তন। ইন্টারনেট আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পরিচিতি ঘটছে সবার কাছে। প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লাখো পর্যটক ভিড় করেন এখানকার বিভিন্ন স্পটে। সবার আকর্ষণ সাদা মাটির পাহাড়। অক্টোবর থেকে মার্চের শেষ পর্যন্ত পর্যটকদের আনাগোনা থেকে সবচেয়ে বেশি।</p> <p>স্থানীয়দের মতে, আগের চেয়ে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হওয়ায় সহজেই মানুষ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে যেতে পারছেন সীমান্তবর্তী স্থানটিতে।</p> <p>পর্যটকদের গান শুনিয়ে মাতিয়ে তোলাই আরজ আলীর (৬৫) পেশা। সারা দিনই সাদা মাটির পাহাড়ে বিচরণ তাঁর। তাঁর গানে মুগ্ধ হয়ে ১০-২০ টাকা করে বকশিশ দেন অনেকেই। দিন শেষে যা পান তা দিয়েই চলে আরজ আলী বাউলের সংসার।</p> <p>স্থানীয় ইজি বাইক চালক শান্ত মিয়ার (২৮) রোজগার পর্যটন ঘিরেই। শীত মৌসুম এলেই বাড়ে রোজগার। তিনি বলেন, ‘আমি পর্যটকদের বিভিন্ন স্পটে ঘোরাই। আমার রোজগার তাঁদের থেকেই। সারা বছরের মধ্যে এই শীতকালেই বেশি আসেন। বাকি সময়টা অল্পসংখ্যক মানুষ আসেন, তখন কিন্তু আয় একদমই কম থাকে।’</p> <p>পর্যটন সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে সম্ভাবনাময় এই উপজেলা ঘিরে স্থানীয় অর্থনীতির বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে মনে করছেন স্থানীয় ও পর্যটকরা। শুধু প্রয়োজন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন।</p> <p>স্থানীয় বাসিন্দা প্রবীর পালোয়ান বলেন, ‘আমাদের এলাকায় অনেক মানুষ ঘুরতে এলেও তারা একটু কষ্টে পড়ে। যেমন টয়লেট ব্যবস্থা কিংবা ক্লান্ত হয়ে গেলে কোনো রকম বিশ্রাম নেওয়ার ব্যবস্থা নেই। বিভিন্ন সময় তারা আমাদের বাড়িতে এলে আমরাও সহযোগিতার কমতি রাখি না।’</p> <p>যশোর থেকে ঘুরতে আসা হাসিবুল হক এলাকা সম্পর্কে বলেন, ‘রাঙামাটি কিংবা সিলেটের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। আমি শুধু মোবাইলে দেখেছি। এই প্রথম এসেছি। কিন্তু এখানকার কিছু সমস্যা রয়েছে, সেটা হলো পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা ও নিরাপত্তা নেই। একটি পর্যটন এলাকায় যা যা থাকা দরকার তার অনেক কিছুই নেই।’</p> <p>অপর পর্যটক জামিউল হাসান পরিবার নিয়ে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘সত্যিই চমৎকার জায়গা এই দুর্গাপুরে রয়েছে। কেউ আসলে বলতে পারবে না যে কোনো দিকে ভালো লাগেনি।’</p> <p>উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নাভিদ রেজওয়ান কবীর বলেন, ‘এই উপজেলায় পর্যটনের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। আমি সদ্য যোগদান করেছি। আমি পর্যটন খাতের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে অবহিত হয়েছি। পর্যটকদের যে সমস্যায় পড়তে হয় তা লাঘব করার জন্য কাজ করছি। আশা করছি যে পর্যটকদের আমরা একটি সুন্দর পরিবেশ প্রদান করতে পারব।’</p> <p>২০২১ সালের ১৭ জুন জিআই পণ্য সনদ পায় এ দুর্গাপুর উপজেলার বিজয়পুরের পর্যটন স্পট সাদা মাটি। সাদা মাটির পাহাড় ছাড়াও পাহাড়ি কন্যা নামে খ্যাত সোমেশ্বরী নদী, বিজয়পুর জিরো পয়েন্ট, কমলা বাগান, রানীখং মিশন, রাশি মণি স্মৃতিসৌধ, পাহাড়ি নৃগোষ্ঠীর পাহাড়, ফান্দা ভ্যালিসহ রয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য পর্যটন স্পট।</p> <p> </p> <p> </p>