<p>এবার শীতের আগমনী বার্তায় জনপ্রিয় খাবার কুমড়াবড়ি তৈরির ধুম পড়েছে বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার সাবলা এলাকাজুড়ে। ওই গ্রামের মানুষের দেখাদেখি আশপাশের কয়েকটি গ্রামেও চলছে কুমড়াবড়ি তৈরির কাজ। শুধু শীতকালেই তৈরি হয় এই সুস্বাদু খাবার। দেশব্যাপী চাহিদা ব্যাপক হওয়ায় প্রতিদিন বাড়ি বাড়ি গিয়ে পাইকাররা কিনে নিচ্ছেন কুমড়াবড়ি। এই টাকা দিয়ে তারা সংসার চালাচ্ছেন। উৎপাদকরা বলছেন, সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেলে সুস্বাদু এই কুমড়াবড়ি বিদেশে রপ্তানি করতে চান তাঁরা।</p> <p>দুপচাঁচিয়া উপজেলার তালোড়া পৌরসভার সাবলা মহল্লার দেড় শতাধিক পরিবার শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রেখে কুমড়াবড়ি তৈরির এই পেশা চালিয়ে যাচ্ছে। সাবলা ছাড়াও উপজেলার দুপচাঁচিয়া সদরের লক্ষ্মীতলা, কালীতলা, জিয়ানগর ইউনিয়নের বাঁকপাল হিন্দুপাড়া, তালোড়া ইউনিয়নের কইল ও পোড়াঘাটাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কমবেশি এই কুমড়াবড়ি তৈরি হয়ে থাকে।</p> <p>কথা হয় গৃহবধূ শোভা রানী মোহন্ত, উপলা রানী ও রিমা মোহন্তের সঙ্গে। তাঁরা জানান, কুয়াশা ভেজা শীতের সকালে মাষের ডালের সঙ্গে পরিপক্ব কুমড়ার রস মিশিয়ে এই বড়ি তৈরি করা হয়। এ কারণেই এর নাম হয়েছে কুমড়াবড়ি। প্রস্তুত প্রণালী সম্পর্কে তাঁরা জানান, বাজার থেকে মাষকলাই কিনে এনে জাঁতায় মাড়ানোর পর তা ঝেড়ে নিতে হয়। ভেজা ডালের খোসা ছাড়িয়ে নিয়ে তা পাটায় পিষতে হয়। এর পর মসলা হিসেবে জিরা, কালো এলাচ, কালিজিরা দিয়ে পাটায় পিষে মণ্ডের মতো নরম করে তা দিয়ে গোলাকৃতির বড়ি তৈরি করা হয়। সেসব বড়ি পাতলা কাপড়ের ওপর রেখে বাইরের মাচায় রোদে শুকাতে হয়। প্রায় তিন দিন শুকানোর পর তা খাবার উপযোগী হয়। ঐতিহ্যবাহী এই কুমড়াবড়ির খ্যাতির কারণে রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, নওগাঁ, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে এই কুমড়াবড়ি কিনে নিয়ে যান।</p> <p>খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই মহল্লার একেকটি পরিবার গড়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ কেজি কুমড়াবড়ি তৈরি করে থাকে। একেকটি পরিবার মাসে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকার কুমড়াবড়ি বিক্রি করে। কার্তিক থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত এ মহল্লার লোকজন পাঁচ-ছয় কোটি টাকার কুমড়াবড়ি বিক্রি করে।</p> <p>সাবলা মহল্লার ধীরেন চন্দ্র শীল (৬৫) বলেন, ‘এখানকার বেশির ভাগ মানুষেরই ভিটেবাড়ি ছাড়া তেমন কোনো জমিজমা নেই। শীতের মৌসুমে বিক্রি বেশি হয় বলে আমি ও আমার পরিবারের লোকজন সংসারের অন্যান্য কাজের পাশাপাশি এই কুমড়াবড়ি তৈরির ঐতিহ্য ধরে রেখেছি। গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় প্রতিটি পরিবারই এ পেশায় নিয়োজিত রয়েছে। বাংলা সনের কার্তিক মাস থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত এই কুমড়াবড়ির চাহিদা বেশি থাকে।’</p> <p>তিনি আরো বলেন, ‘গত বছর মাষকলাইয়ের ডাল প্রতি কেজি ১৪০ টাকা দরে কিনেছিলাম। এ বছর তা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি কিনতে হচ্ছে। এ ছাড়া কুমড়াবড়ি তৈরির অন্যান্য উপকরণের দামও বেড়ে গেছে।’</p> <p>তিনি জানান, গত বছর সাধারণ মানের কুমড়াবড়ি ১৫০ টাকা এবং ভালো মানের কুমড়াবড়ি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। এবার সাধারণ মানের কুমড়াবড়ির ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা এবং ভালো মানের কুমড়াবড়ির ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।</p> <p>ওই একই এলাকার রেখা রানী শীল (৪০) বলেন, ‘আমরা নারীরা মধ্যরাত থেকে কুমড়াবড়ি তৈরির উপকরণ নিয়ে বিভিন্ন প্রক্রিয়া সারি। পরিবারের অন্য সদস্যরা মিলে চাটাইয়ে কুমড়াবড়ির তৈরি করে তা রোদে শুকাতে দিই।’</p> <p>ওই এলাকার মনোরঞ্জন মোহন্ত (৫২) বলেন, ‘৩৫ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত। তবে এ পেশায় সরকারি কিংবা বেসরকারি পর্যায় থেকে স্বল্প সুদে ঋণসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেলে আমাদের তৈরি কুমড়াবড়ি দেশ ছাড়িয়ে বিদেশে পাঠানো সম্ভব।’</p> <p> </p> <p> </p>
