<p>রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের চার লেন প্রকল্পের কাজ দুই জেলার জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় থমকে আছে। গেল আট বছরেও এই সমস্যার সমাধান না হওয়ায় নির্ধারিত মেয়াদের বাড়তি দুই বছর পেরিয়ে গেলেও কাজের অগ্রগতি বাড়ছে না। বরং এই প্রকল্পে সরকারের বাড়তি শত শত কোটি টাকা গচ্চা যাচ্ছে। একই সঙ্গে দুর্ঘটনার হট স্পটে পরিণত হয়েছে, বেড়েছে দুর্ভোগও।</p> <p>টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুরের মডার্ন মোড় পর্যন্ত ১৯০.৪ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২২ সালের জুন মাসে। এদিকে রংপুর বিভাগ অংশে কাজ শুরুর কথা ছিল ২০১৯ সালের জুনে কিন্তু ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয় কাজ।</p> <p>জানা গেছে, ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হওয়া প্রকল্পের ব্যয় পরবর্তী সময়ে বেড়ে দাঁড়ায় ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।</p> <p>এর মধ্যে ২০১৭ সালের ভূমি অধিগ্রহণ আইন অনুযায়ী জমির ক্ষতিপূরণ তিন গুণ হারে নির্ধারিত হওয়ায় শুধু ভূমি অধিগ্রহণ খাতেই দুই হাজার ২৫৩ কোটি টাকা এবং পুনর্বাসন-প্রক্রিয়ায় ব্যয় বেড়েছে প্রায় ২২৭ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে মোট ব্যয় ছিল ১৮ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা। কিছু পরিবর্তন আনায় নতুন করে প্রকল্পের মোট ব্যয় দাঁড়াবে ১৯ হাজার ৫৬ কোটি টাকা।</p> <p>কিন্তু করোনা, বন্যা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দোহাইয়ে বারবার প্রকল্পের মেয়াদ বেড়েই চলছে। সর্বশেষ মেয়াদ অনুযায়ী ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও এখনো রংপুরের পীরগঞ্জ ও গাইবান্ধার পলাশবাড়ী ও আশপাশ এলাকায় জমি অধিগ্রহণ জটিলতা শেষ হয়নি। এই দুই এলাকায় সড়ক সংকুচিত হওয়ায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।</p> <p>গাইবান্ধা ও রংপুর জেলা প্রশাসন অফিসের সূত্র জানিয়েছে, রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বড়দরগা থেকে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী পর্যন্ত এই মহাসড়কে জমিসংক্রান্ত সংকট সবচেয়ে বেশি গাইবান্ধা অংশে।</p> <p>গাইবান্ধার পলাশবাড়ী থেকে ধাপেরহাট এলাকার আট কিলোমিটার সড়কের মধ্যে কোনো কোনো অংশে সমস্যা রয়েই গেছে। একই অবস্থা রংপুর অংশের পীরগঞ্জ ও মিঠাপুকুরের শঠিবাড়ী অংশে। দুই জেলা প্রশাসনই বলছে, দ্রুতই সমস্যার সমাধান হবে।</p> <p>এদিকে সাসেক-২ সূত্রে জানা গেছে, রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার বড়দরগা থেকে রংপুর নগরীর মডার্ন মোড় পর্যন্ত ২৩.৮ কিলোমিটার সড়কের ৮৫ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। কিন্তু মিঠাপুকুর উপজেলার শঠিবাড়ী বাজার এলাকায় জমি জটিলতার কারণে দেড় কিলোমিটার অংশে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। সেখানকার প্রায় ২২ একর জমি এখনো অধিগ্রহণ করা হয়নি। ভূমি মালিকদের অসহযোগিতা এবং মামলা জটিলতার কারণে জমি অধিগ্রহণে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে।</p> <p>নিরাপদ ও টেকসই সড়ক অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় মহাসড়কের শিল্প ও বাজার অঞ্চলে ৫০ কিলোমিটার কংক্রিট পেভমেন্ট, ২৬টি সেতু, ৩৯টি আন্ডারপাস, ছয়টি ফ্লাইওভার, ১৮০টি কালভার্ট এবং পথচারী পারাপারের জন্য ১১টি পথচারী সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে।</p> <p>সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের জায়গীরহাট ও মিঠাপুকুরে ওভারপাস নির্মাণ করায় সেখানকার যানজট নেই। শঠিবাড়ী ও বড়দরগায় ওভারপাসের নির্মাণকাজ চলমান।</p> <p>এই মহাসড়কের ওপর সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের পাশাপাশি ফ্লাইওভার, ওভারপাস নির্মাণ দৃশ্যমান হয়েছে। এই সড়কের মধ্যে চার লেনে দ্রুতগতির যানবাহন চলাচল করছে।</p> <p>ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সাউথ এশিয়া সাবরিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশনের (সাসেক-২)। টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে রংপুরের মডার্ন মোড় পর্যন্ত নির্মীয়মাণ ১৯০.৪ কিলোমিটার সড়ক, ইন্টারচেইঞ্জ, মনিটরিং ও কন্ট্রোল স্টেশন, বাস বে ও আন্ডারপাসের কাজ হলে ওভারলোড নিয়ন্ত্রণ, দুর্ঘটনা কমানোসহ সাসেক মহাসড়কটি নিরাপদ ও আরামদায়ক হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। পুরো প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রাজধানীর সঙ্গে দেশের উত্তরাঞ্চলের একটি শক্তিশালী সড়ক নেটওয়ার্ক তৈরি হবে।</p> <p>রংপুর হাইওয়ে পুলিশের একটি সূত্র জানায়, রংপুর-বগুড়ার মধ্যে পীরগঞ্জ আর পলাশবাড়ীতে সড়ক দুর্ঘটনা বেশি ঘটছে।</p> <p>সড়কটির নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক নির্বাহী ফিরোজ আক্তার জানিয়েছেন, রংপুরের শঠিবাড়ীতে এখনো অধিগ্রহণ বাকি রয়েছে। গাইবান্ধার পলাশবাড়ীতে জমি অধিগ্রহণসহ কিছু জটিলতা রয়েছে। সমস্যার মধ্যেই কাজ চলমান। ডিসেম্বর কাজ শেষ হবে না, আশা করছি জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার।</p> <p> </p> <p> </p>