<p>দুই সন্তান ও স্ত্রীকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করেন বজলুর রহমান বেপারী। চার বছর বয়সী ছেলে আক্তার হোসেন ও দুই বছর বয়সী ছেলে জাহিদকে নিয়ে ঢাকায় চলে যান মা পারুল বেগম। ঢাকায় অন্যের বাসায় কাজ করে দুই ছেলেকে বড় করেন পারুল বেগম। তাদের মধ্যে বড় ছেলে আক্তার হোসেন ঢাকায় বাসচালকের কাজ শুরু করেন এবং ছোট ছেলে জাহিদ চট্টগ্রামে রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। বড় ছেলে আক্তার হোসেন ঢাকার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় মাকে নিয়ে বসবাস করতেন। ২০০৮ সালে বিয়ে করেন তিনি। ২০১১ সালে মা পারুল বেগম মারা যান। পাঁচ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় হাঁটুতে প্রচণ্ড আঘাত পান। সেটি আর ভালো না হওয়ায় সংসার চালাতে ঢাকার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় অটোরিকশা চালানো শুরু করেন। অটোরিকশা চালিয়ে স্ত্রী আকলিমা বেগম, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সংসার ভালোই চলছিল আক্তার হোসেনের। তার ১৪ বছর বয়সী মেয়ে লামিয়া পঞ্চম শ্রেণিতে এবং সাত বছর বয়সী ছেলে শাহদাত দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ালেখা করে।</p> <p>গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার তিন রাস্তার মোড়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন রিকশাচালক আক্তার হোসেন (৩৫)। শহীদ আক্তার হোসেন ভোলার লালমোহন উপজেলার দক্ষিণ কামলা গ্রামের বজলুর রহমান বেপারীর ছেলে।</p> <p>স্বামীকে হারিয়ে দুই সন্তান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন আকলিমা বেগম। এখন ছেলে-মেয়েকে লালমোহনের গজারিয়া বাজার এলাকার পাঙ্গাসিয়া গ্রামে মায়ের কাছে রেখেছেন। সেখানেই তারা একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে। আর আকলিমা বেগম সংসারের খরচ জোগাতে ঢাকায় বোনের কাছে থেকে মানুষের বাসায় কাজ শুরু করেন। স্বামীর মৃত্যুর পর সংসারের খরচ জোগাতে দিশাহারা আকলিমা বেগম।</p> <p>শহীদ আক্তার হোসেনের স্ত্রী আকলিমা বেগম কালের কণ্ঠকে জানান, ১৯ জুলাই মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকার তিন রাস্তার মোড়ে যান তার স্বামী। বিকেলে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন। পরে জানতে পারেন বিকেল ৩টার দিকে তিনি মোহাম্মদপুর তিন রাস্তার মোড়ে গেলে ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে দুটি গুলি ছোড়ে। তার গলায় গুলি লাগলে সঙ্গে সঙ্গেই তিনি মারা যান।</p> <p>আকলিমা বেগম আরো জানান, ছেলের খোঁজখবর না নিলেও মারা যাওয়ার পর তার বাবা বজলুর রহমান জামায়াতে ইসলামীর কাছ থেকে পাওয়া দুই লাখ টাকার মধ্যে এক লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়ে গেছেন। কিন্তু ছেলেকে তার সম্পদের কোনো ভাগ দেননি।</p> <p> </p>