<p>মাছের সংকট দেখা দিয়েছে সাগরে। তাই পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার শুঁটকিপল্লী প্রায় শূন্য। গভীর সাগরে জাল ফেলে কাঙ্ক্ষিত পরিমাণ মাছ না পাওয়ায় শুঁটকিপল্লীর এ অবস্থা। তাই মন ভালো নেই শুঁটকি ব্যবসায়ীদের।</p> <p>জেলে মহাজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর ৪ নভেম্বর থেকে শুরু হয় দুবলার চরের শুঁটকি মৌসুম। শুরু থেকেই মাছের আধিক্য কম। দামি মাছ লইট্যা, ছুরি, রূপচাঁদা, লাক্ষা এসব তেমন একটা ধরা পড়ছে না জালে। যা পাওয়া যাচ্ছে তার মধ্যে বেশির ভাগই কম মূল্যের ছোট চিংড়ি, চ্যালা ও পারসে জাতীয় মাছ। এর ফলে এ বছর রাজস্ব আয়ে ঘাটতি দেখা দেবে বলেও আশঙ্কা করছে বন বিভাগ।</p> <p>বৃহত্তম শুঁটকিপল্লী আলোরকোলের শুঁটকি ব্যবসায়ী সুলতান মাহমুদ পিন্টু, হক বিশ্বাস, নাদিমুল ইসলাম ও আমানত আলী জানান, তাঁরা এ বছর শুঁটকি ব্যবসায় একেকজন দেড় থেকে দুই কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন। কিন্তু দুই দফা বৈরী আবহাওয়ায় মাছ ধরতে না পারা এবং এ বছর মৌসুমের শুরু থেকেই সাগরে পর্যাপ্ত মাছ না পড়ায় চালান বাঁচাতে পারবেন কি না সেই চিন্তায় পড়েছেন তাঁরা।</p> <p>ব্যবসায়ীরা আরো জানান, মৌসুমের পাঁচ মাসে একেকজন জেলের বেতন ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। মাছ আহরণ বা শুঁটকি উৎপাদন না হলেও তাঁদের বেতন ঠিকই দিতে হবে।</p> <p>পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার আলোরকোল টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান জানান, আলোরকোল সবচেয়ে বড় শুঁটকি উৎপাদন কেন্দ্র। মাছ ধরতে না পারায় গত সপ্তাহে শুধু আলোরকোলেই ১৬-১৭ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে ব্যবসায়ীদের। এ ছাড়া মাঝেরকিল্লা, নারকেলবাড়িয়া, শ্যালার চরসহ বাকি তিনটি ছোট শুঁটকিপল্লীতে ক্ষতি হয়েছে আরো প্রায় চার কোটি টাকা।</p> <p>অপরদিকে, শুঁটকি উৎপাদন না হওয়ায় এক সপ্তাহে এক থেকে সোয়া কোটি টাকা রাজস্ব ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে। এর আগে ঘূর্ণিঝড় ফিনজালের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় তিন দিন বন্ধ ছিল মৎস্য আহরণ। তখন রাজস্ব ঘাটতি হয় ৩০ লাখ টাকা।</p> <p>পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজী মুহাম্মদ নূরুল করীম বলেন, ‘খোঁজ নিয়ে জেনেছি, এবার মাছের পরিমাণ খুব কম। যা-ও পড়ছে তা কম দামের ছোট প্রজাতির মাছ। এতে মহাজনদের লোকসানের পাশাপাশি সরকারি রাজস্ব আয়েও ব্যাপক ঘাটতি হবে। গত বছর শুঁটকি খাত থেকে রাজস্ব আয় হয়েছিল সাত কোটি ২৩ লাখ টাকা। এবার আট কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা পূরণ হবে না।</p> <p>মাছ কমে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ডিএফও কাজী নূরুল করীম বলেন, ‘জলবায়ু পরিবর্তন অন্যতম এবং প্রধান কারণ। দ্বিতীয়ত, শুঁটকি মৌসুমের আগে হয়তো অধিক পরিমাণ মাছ শিকার হয়েছে, যার ফলে এখন মাছের পরিমাণটা তুলনামূলক কমে গেছে।</p> <p> </p> <p> </p>