পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের জন্য ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ক্রয়কৃত ওষুধগুলো শুধু কাগজে-কলমে বুঝে নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে প্রায় দুই কোটি টাকা বিল পরিশোধ করেছে কর্তৃপক্ষ। গত ২৭ জানুয়ারি জেলা হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে এক কোটি ৭৬ লাখ ২১ হাজার ৬০০ টাকার ওষুধ ও এমএসআর পণ্যে গরমিল পায় দুদক। এরপর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত রবিবার ওই গরমিলকৃত ওষুধ ও এমএসআর পণ্য স্টোররুমে নেওয়ার চেষ্টা করে। গোপনে খবর পেয়ে দুদক একটি পিকআপ বোঝাই শতাধিক কার্টনে ২২ ধরনের ৯৪ হাজার ১৯৯ পিস ওষুধ ও এমএসআর পণ্য জব্দ করে।
দুদক সূত্রে জানা যায়, পিরোজপুর জেলা হাসপাতালে ওষুধ ও এমএসআর পণ্য সরবরাহের জন্য সামসুল আরেফিন নামের এক ঠিকাদারের মালিকানাধীন সাউথ বাংলা করপোরেশনকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসপাতালে প্রায় দুই কোটি টাকার কোনো পণ্য সরবরাহ না করলেও কাগজে সেগুলোকে সরবরাহ করা হয়েছে দেখিয়ে ঠিকাদারকে পুরো বিল পরিশোধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
সাউথ বাংলা করপোরেশন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক সামসুল আরেফিন সাবেক মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিমের আপন মামাতো ভাই। তিনি নাজিরপুর উপজেলার সদর ইউনিয়নের বুইচাকাঠী গ্রামের মৃত মাহাবুবুর রহমান শেখের ছেলে।
দুদকের পিরোজপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হাসপাতালে প্রায় দুই কোটি টাকার কোনো পণ্য সরবরাহ না করলেও কাগজে সেগুলোকে সরবরাহ করা হয়েছে দেখিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় বিল তুলে নেন। ওষুধ প্রাপ্ত না হয়েও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মিথ্যাভাবে ওষুধ রেজিস্টারে সংযুক্ত করে এবং বিতরণ দেখায়। প্রকৃতপক্ষে ওষুধ আসেনি। এতে প্রমাণ হয়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের যোগসাজশে এই দুর্নীতি হয়।
এ কারণেই রাতের আঁধারে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রবিবার ওষুধ নিয়ে আসে এবং আমরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তা জব্দ করেছি।’
পিরোজপুর জেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) মো. নিজাম উদ্দিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়ার পরও আমাদের মাল বুঝিয়ে দিতে পারেনি। বারবার তাগাদাপত্র দিলেও তারা মাল না দিয়ে আমার ওপর বিলে স্বাক্ষর করার জন্য চাপ প্রয়োগ করে বিধায় আমি স্বাক্ষর করে দিই।’
পিরোজপুরের সিভিল সার্জন মো. মিজানুর রহমান দায় এড়িয়ে বলেন, ‘এই ওষুধগুলো ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ক্রয়কৃত। তখন আমি এখানে যোগদান করিনি।
আমি তখন এখানে ছিলাম না।’
এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাউথ বাংলা করপোরেশনের মালিক সামসুল আরেফিনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিলেও তাঁর ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।