স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি জেনেও টাঙ্গাইলের কৃষকরা বেশি লাভের আশায় তামাক চাষে ঝুঁকছেন। ফলে ফসলি জমি উর্বরতা হারাচ্ছে। এ ছাড়া ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের নানা প্রলোভনে তামাক চাষে প্রান্তিক কৃষকরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছেন।
তামাক ও তামাকজাত পণ্য চাষের ক্ষেত্রে সরকারি অনুমোদন নেওয়ার আইনগত বিধান থাকলেও তার তোয়াক্কা না করে প্রতিবছর নতুন নতুন ফসলি জমি তামাক চাষে যুক্ত হচ্ছে।
ফলে জেলার বিস্তীর্ণ চরাঞ্চলের কৃষি জমিতে তামাকের বিষ ছড়িয়ে পড়ছে। তামাক চাষে ‘কারগিল’ নামক সার প্রয়োগের ফলে চাষি ও তার পরিবারের স্বাস্থ্যঝুঁঁকি বাড়ছে এবং ফসলি জমির উর্বরতা শক্তি হ্রাস পাচ্ছে।
টাঙ্গাইলের ১২ উপজেলায়ই কমবেশি তামাক চাষ হয়ে থাকে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এবার কালিহাতীতে ৯০, নাগরপুরে ৭, ভূঞাপুরে ১১৫, টাঙ্গাইল সদরে ১৮ এবং দেলদুয়ারে ৩ মোট ২৩৩ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হচ্ছে।
কালিহাতীর দুর্গাপুর ইউনিয়নের চরহামজানী গ্রামে দেখা যায়, বেশির ভাগ কৃষকই তামাক চাষ করেন। বাড়িতে বাড়িতে চলে তামাকপাতা শুকানোর কাজ। রোদযুক্ত স্থানে বাঁশের মাচায় তামাকপাতা শুকানো হয়। যার ফলে পুরো গ্রামে তামাকের তীব্র গন্ধ।
তামাক চাষি ফরিদুল ইসলাম, রায়হান আলী, হারেছ মিয়া, শুকুর মামুদসহ অনেকেই জানান, কম্পানি (তামাক ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান) থেকে তাঁদের বীজ, সার, বিষ, ত্রিপল ও কাগজসহ উৎপাদনের যাবতীয় সামগ্রী দিয়ে থাকে। আবার তারাই তামাক পাতা কিনে নেয়। টাঙ্গাইল জেলায় মূলত ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কম্পানি ও আকিজ টোব্যাকো কম্পানি তামাক চাষে কৃষকদের সহযোগিতা দিয়ে থাকে।
টাঙ্গাইলের পরিবেশ উন্নয়নকর্মী সোমনাথ লাহিড়ী বলেন, ক্রয়কারী প্রতিষ্ঠান দাদন দিয়ে কৃষকদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করে। গ্রামের অসহায় কৃষক না বুঝে তাঁদের জমি ও জীবনের চরম ক্ষতি করছে।
এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে গণসচেতনতা এবং তামাকজাত পণ্যের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ করা দরকার।
মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ডক্টর এ এস এম সাইফুল্লাহ বলেন, তামাক চাষের প্রক্রিয়া থেকে সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, বিপণন এবং ব্যবহার পুরোটাই পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সুজাউদ্দিন তালুকদার বলেন, দীর্ঘদিন তামাক চাষে যুক্ত থাকলে ক্যান্সার, পেটের পীড়া, ব্রংকাইটিস, অ্যাজমা, চর্ম, বুক ও ঘাড়ে ব্যথাসহ নানাবিধ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।
টাঙ্গাইল জেলায় তামাক চাষে লগ্নিকারী কম্পানির স্থানীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাঁরা কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তবে তাঁরা কম্পানির দেওয়া দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করে থাকেন।
টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আশেক পারভেজ বলেন, তামাক চাষের বিষয়ে সরকারিভাবে তাঁদের কোনো নির্দেশনা নেই। তাই এ ক্ষেত্রে তাঁরা কোনো মতামত ও তামাক চাষে হস্তক্ষেপ করেন না। তবে তামাক চাষ রোধে গণসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি সরকারেরও ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।