<p>গতকাল দিনের প্রথম প্রহরে [রাত ১টা ১০ মিনিট] না-ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছেন ঢালিউডের ডাগর চোখের নায়িকা অঞ্জনা রহমান। এই প্রজন্মের অনেকেই হয়তো অঞ্জনা সম্পর্কে সেভাবে জানে না। গত শতাব্দীর মধ্য সত্তর ও আশির দশকের দাপুটে নায়িকা ছিলেন তিনি। অভিনয় করেছেন বেশ কিছু প্রশংসিত ও ব্যবসাসফল ছবিতে। শুধু বাংলাদেশেই নয়, নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও তুরস্কের ছবিতেও অভিনয় করেছেন তিনি।</p> <p>১৯৭৬ সালে শামসুদ্দীন টগরের ‘দস্যু বনহুর’ দিয়ে চলচ্চিত্রে তাঁর অভিষেক। অভিনয় করেছেন শতাধিক সিনেমায়। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবির মধ্যে রয়েছে ‘অশিক্ষিত’, ‘জিঞ্জির’, ‘রজনীগন্ধা’, ‘অভিযান’, ‘হিম্মতওয়ালী’, ‘আখেরি নিশান’, ‘সুখে থাকো’, ‘পথে হলো দেরি’, ‘গুনাই বিবি’, ‘রজনীগন্ধা’, ‘পরিণীতা’। ‘পরিণীতা’ ছবির জন্যই তিনি ১৯৮৬ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছিলেন। ২০১০ সালে ‘ভুল’ ছবিতে সর্বশেষ অভিনয় করেন অঞ্জনা। বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্র প্রযোজনাও করেছেন তিনি। ‘নেপালী মেয়ে’, ‘রঙিন প্রাণসজনী’, ‘লালু সর্দার’, ‘হিম্মতওয়ালী’, ‘বাপের বেটা’ ছবিগুলো পেয়েছিল ব্যাবসায়িক সফলতাও। নায়করাজ রাজ্জাক, সোহেল রানা, ফারুক, আলমগীর, উজ্জল, জসিম, ইলিয়াস কাঞ্চন, জাফর ইকবালসহ ভারতের মিঠুন চক্রবর্তীর নায়িকাও হয়েছেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে ঢালিউডে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।</p> <p> </p> <p> </p> <p><strong>একনজরে</strong></p> <p>জন্ম : ১৯৬৫, ২৭ জুন। ঢাকা।</p> <p>নাম : অঞ্জনা সাহা। পরিচালক আজিজুর রহমান বুলিকে বিয়ের পর ধর্মান্তরিত হন, নাম রাখেন অঞ্জনা রহমান।</p> <p>নৃত্য : শৈশবে নাচ শেখেন ভারতে। নাচে তিনবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন।</p> <p>প্রথম মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি : দস্যু বনহুর [১৯৭৬]।</p> <p>প্রথম হাতে নেওয়া ছবি : সেতু [১৯৭৬]।</p> <p>জাতীয় পুরস্কার : আলমগীর কবিরের ‘পরিণীতা’র [১৯৮৬] জন্য।</p> <p>বিদেশে অভিনয় : নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তান ও তুরস্কসহ ৯ দেশের ১৩টি ছবিতে অভিনয় করেন।</p> <p>প্রথম প্রযোজনা : ‘নেপালী মেয়ে’।</p> <p>মৃত্যু : ৪ জানুয়ারি, ২০২৫।</p> <p> </p> <p><em>সহকর্মীদের কথা</em></p> <p><strong>ভীষণ লক্ষ্মী মেয়ে ছিল অঞ্জনা </strong></p> <p><em>ববিতা অভিনেত্রী</em></p> <p>খবরটা শোনার পর থেকে মনটা ভালো নেই। একসঙ্গে আমরা অনেক ছবি করেছি। ‘নেপালী মেয়ে’, ‘সুখে থাকো’সহ কত কত ছবি! খুব সাদামাটা মেয়ে ছিল, মনের দিক থেকে একদম শিশু। কয়েক বছর আগেও আমাকে ফোন করে বাসায় এসেছে। ছেলেকে আমার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। সেদিন আমি নিজের হাতে রান্না করেছিলাম। অঞ্জনার সঙ্গে আমার যে ছবিগুলো তার বেশির ভাগ শুটিং হয়েছে আউটডোরে। আমি অঞ্জনাকে বলতাম আমার সঙ্গে রাতে থাকতে। সে আর আমি এক বিছানায় ঘুমাতাম। তখন দুনিয়ার সব কথা ও আমাকে বলত। অঞ্জনা এতটাই সহজ-সরল ছিল যে একান্ত ব্যক্তিগত কথাও হজম করতে পারত না। ফরফর করে বলে দিত। কিছু দিন আগেও এক ভিডিওতে দেখলাম বলেছে আমার কথা। খুব সম্মান করে বলেছে, ‘ববিতা আপা তখন এত বড় তারকা। তার পরও আমাকে তাঁর রুম শেয়ার করতে দিতেন। সহশিল্পীর সঙ্গে এমন ব্যবহার এখনকার শিল্পীরা করে না।’ ওর এই কথা আমাকে কাঁদিয়েছে। অঞ্জনা ভীষণ লক্ষ্মী মেয়ে ছিল। ওর অভিনীত ছবিগুলো কিভাবে যেন সুপার ডুপার হিট হয়ে যেত। ওকে দিয়ে অনেক প্রযোজক কোটিপতি হয়েছেন, অনেক নির্মাতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। অথচ পরে তাঁরা আর অঞ্জনার খোঁজ নিতেন না। এটা সে প্রায়ই আমাকে বলত। আচ্ছা! অঞ্জনা তো অনেক দিন ধরে ভুগল, তার কি ভালো চিকিৎসা হয়নি? এভাবে কেন তাকে মরতে হবে?</p> <p> </p> <p><strong>এমন সরল মানুষ পাওয়া কঠিন</strong></p> <p><em>ইলিয়াস কাঞ্চন অভিনেতা</em></p> <p>সবারই একদিন চলে যেতে হবে। তবে কাছের মানুষ বা সহকর্মীরা চলে গেলে খারাপ লাগে বেশি। অঞ্জনা নিঃসন্দেহে একজন ভালো অভিনেত্রী। অনেক ব্যবসাসফল ও কালজয়ী ছবি উপহার দিয়েছেন। এর বাইরে সাংগঠনিক ক্ষমতাও ছিল তাঁর। চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সঙ্গে সব সময়ই ছিলেন। বারবার নির্বাচিতও হয়েছেন। অঞ্জনার একটা বড় গুণ, সহজে সবার সঙ্গে মিশে যেতে পারতেন। নতুন শিল্পীরা অঞ্জনা বলতে পাগল। অনেকে তাঁর সরলতা নিয়ে হাসাহাসি করেন। তবে আমি মনে করি, এমন সরল মানুষ পাওয়াটাই কঠিন। শিল্পী সমিতির নির্বাচনের সময় নিয়মিত অঞ্জনার সঙ্গে দেখা হয়েছে। কথাও হতো। এরপর খুব একটা দেখা-সাক্ষাৎ হয়নি। তাঁর অসুস্থতার খবর পেয়েছিলাম। তবে নানা কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকায় যেতে পারিনি। অঞ্জনার সঙ্গে অনেক স্মৃতি। তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি।</p> <p> </p> <p> </p>
