<p style="text-align:start"><strong>মা, তুমি আমার আগে যেয়ো না গো মরে</strong></p> <p style="text-align:start"> </p> <p style="text-align:start">গীতিকার-সুরকার মিল্টন খন্দকার। ২০০২ সালের ঘটনা। আমরা একটা অ্যালবাম করছিলাম, ‘ভুল করেছি ভালোবেসে’। একটি দেশাত্মবোধক আর বাকি সব রোমান্টিক গান করার পরিকল্পনা ছিল। পাঁচটি গান করার পর মিল্টন ভাইয়ের মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে বলা যায়। মিল্টন ভাই মাকে নিয়ে ভীষণ চিন্তিত। সে সময় মিল্টন ভাইয়ের মাথায় কোনো রোমান্টিক গান আসছিল না। আল্লাহর কাছে তিনি প্রার্থনা জানান, মা যেন তাঁর আগে চলে না যান। গানটির ট্র্যাক করে আমাকে শেখালেন। আমি তখনো এ সবকিছু জানতাম না। বললেন, ‘তুমি গাও, গানটি ভালো হবে।’ রেকর্ডিংয়ের সময় অনেকেই কাঁদছিলেন। গানটি এক টেকেই গেয়েছি। এরপর যতবারই গাইতে গেছি গলা ধরে এসেছে। এই গানটিই অ্যালবামে সবচেয়ে হিট হয়। পরে ‘খোদার পরে মা’ চলচ্চিত্রে ব্যবহৃত হয়। গানটির জন্য আমি শ্রেষ্ঠ সংগীতশিল্পী আর মিল্টন খন্দকার শ্রেষ্ঠ গীতিকারের পুরস্কার পান।</p> <p style="text-align:start"> </p> <p style="text-align:start"> </p> <p style="text-align:start"><strong>ও প্রিয়জন</strong></p> <p style="text-align:start">১৯৯৮ সাল। মিল্টন খন্দকার প্রথম আমাকে নিয়ে অ্যালবামের পরিকল্পনা করেন। তার আগে বেশি গাইতাম হিন্দি গানের বাংলা। শ্রোতারাও আমার কণ্ঠে হিন্দি গানের বাংলা শুনতে বেশি পছন্দ করত। প্রতি মাসে আমার একটি-দুটি হিন্দি গানের বাংলা অ্যালবাম প্রকাশিত হতো। মিল্টন ভাইয়ের কথা ও সুরে সাউন্ডটেক থেকে বের হয় আমার প্রথম মৌলিক গানের অ্যালবাম ‘কাল তুমি আমারই ছিলে’। প্রথম তিন মাস অ্যালবামের কোনো কাটতি নেই। এরপর প্রচুর বিক্রি হতে লাগল। সাউন্ডটেক থেকে আমাকে ফোন করে জানানো হলো ‘ও প্রিয়জন’ গানটির জন্যই শ্রোতারা বেশি কিনছে। এরপর তারা আমাকে আরেকটি অ্যালবাম করার অনুরোধ জানায়। মজার ব্যাপার হলো, আমাদের টার্গেট সং ছিল ‘কাল তুমি আমারই ছিলে’। অথচ হিট হলো ‘ও প্রিয়জন’।</p> <p style="text-align:start"> </p> <p style="text-align:start"><strong>আজ পাশা খেলব রে শ্যাম</strong></p> <p style="text-align:start">এটি সিলেট অঞ্চলের গান। গানটি আমাকে সংগ্রহ করে দেন হবিগঞ্জের গায়ক মামুন। তিনি এখন দেশের বাইরে থাকেন। মামুন আমার গানের ভীষণ ভক্ত। নিজে গান শিখলেও বেশি একটা গাইতেন না। সিলেট থেকে অনেক গান তিনি আমাকে এনে দেন। বড় একটা ডায়রিতে গীতিকার-সুরকারের নামসহ গানগুলোর ইতিহাস লেখা ছিল। সেখান থেকেই ‘আজ পাশা খেলব রে শ্যাম’ নিয়ে রেকর্ড করে রেখে দিই। হুমায়ূন আহমেদের একটি নাটকে সেলিম চৌধুরী গানটি করেন। ঠিক তখনই সাউন্ডটেক আমার হিন্দি গানের বাংলা একটি অ্যালবামে গানটি প্রকাশ করে। অ্যালবামের নাম ‘আজ পাশা খেলব রে শ্যাম’। অ্যালবামে এটিই ছিল একমাত্র মৌলিক গান। এই গানের জন্যই অ্যালবামটি ব্যবসাসফল হয়। পরে ‘স্বজন’ চলচ্চিত্রেও গেয়েছি।</p> <p style="text-align:start"> </p> <p style="text-align:start"><strong>কী এমন ছিল প্রয়োজন   </strong></p> <p style="text-align:start">মনির খান ও কয়েকজন শিল্পীর গান নিয়ে সাউন্ডটেক ‘অর্কিড’ নামে একটি মিক্সড অ্যালবাম করে। অ্যালবামটির জন্য তারা আমার কাছে একটি গান চায়। মিল্টন ভাইয়ের কাছে গিয়ে বললাম। তিনি একটার বদলে দুটি গান দিলেন। মানাম [আহমেদ] ভাইয়ের গানটি খুব ভালো লাগে। সুর করার জন্য তিনি সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত টানা কষ্ট করেন। আমাকে সঠিকভাবে গাওয়ার জন্য নির্দেশনা দেন। সাধ্যমতো চেষ্টা করি। অ্যালবামটির সবচেয়ে হিট গান ছিল এটি। পরে আমার একক অ্যালবাম ‘তুমি ভুলে যেতে পারো’তেও গানটি রাখি। ১৯৯৮ সালে  বিটিভিতে তালিকাভুক্ত শিল্পী হওয়ার অনুষ্ঠানে গানটি করি। সে সময় সরাসরি গান গেয়ে তালিকাভুক্ত হতে হতো।  অনেক স্বনামধন্য শিল্পী ফেল করলেও আমি পাস করে যাই।</p> <p style="text-align:start"> </p> <p style="text-align:start"><strong>মানুষ বড় স্বার্থপর</strong></p> <p style="text-align:start">আগে ‘অরবিট’ নামে ব্যান্ড করতাম। অ্যালবামের সব গানের কথা ও সুর করতেন ব্যান্ডের ভোকালিস্ট আশরাফ বাবু। একদিন তাঁকে মানুষ যে বড় স্বার্থপর এ নিয়ে একটা গান লিখতে বলি। কারণ মানুষের সব কিছুর মধ্যেই স্বার্থপরতা কাজ করে। বাবু এক বসায় গানটি লিখে ফেলেন। সেটাই হয়ে যায় অ্যালবামের টাইটেল। অ্যালবামটি বাজারে যাওয়ার পরদিন আমার পুত্রসন্তান হয়। ক্লিনিকে থাকা অবস্থায় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে ফোন করে বলা হয় অ্যালবামটি লেগে গেছে। তখন অনেক তাড়াহুড়ার মধ্যে গানটি গেয়েছিলাম। গানটি আবার নতুন করে গাইতে ইচ্ছা করে।</p>