পড়ন্ত বিকেলে বই পাঠে মগ্ন কিছু সাহিত্যপ্রেমী মানুষ। কাঠের তাকে সাজানো অনেক বই। যার যে বই খুশি নিয়ে পড়ছেন। পড়া শেষে আবার জায়গামতো রেখে চলে যাচ্ছেন।
পড়ন্ত বিকেলে বই পাঠে মগ্ন কিছু সাহিত্যপ্রেমী মানুষ। কাঠের তাকে সাজানো অনেক বই। যার যে বই খুশি নিয়ে পড়ছেন। পড়া শেষে আবার জায়গামতো রেখে চলে যাচ্ছেন।
পাঠাগার দুটিতে গিয়ে দেখা যায়, চেয়ার-টেবিলে বেশ কয়েকজন তরুণ-তরুণী বই পড়ায় মগ্ন। শেলফে সাজানো রয়েছে অনেক বই। কেউ কেউ আবার বই হাতে নিয়ে বাইরে আমগাছের নিচে চেয়ারে বসে পড়ছে। পড়ন্ত বিকেলে গাছের ছায়ায় বসে বই পড়তে বেশ ভালো লাগে বলে জানাল কয়েকজন। তাদেরই একজন রাসেল আহমেদ বলেন, ‘বই পড়তে ভীষণ ভালো লাগে। যখনই সময় পাই এখানে চলে আসি। এখানে বিভিন্ন ধরনের বই রয়েছে। সুন্দর পরিবেশে ইচ্ছামতো বই পড়তে পারি।’ আরেক বইপ্রেমী সুমাইয়া খাতুন বলেন, ‘কয়েকজন বান্ধবী মিলে আমরা প্রায়ই এখানে বই পড়তে আসি। এখানকার পরিবেশটা খুবই চমৎকার।’ স্থানীয় লোকজন জানায়, আলোকিত মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে হলে বেশি বেশি বই পড়তে হবে। বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগার মেধাবী মানুষ গড়ার কাজটিই করছে।
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) কুষ্টিয়া জেলা শাখার সভাপতি আলহাজ রফিকুল আলম টুকু বলেন, তরুণ প্রজন্মকে বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করতে অনেক বেশি ভূমিকা রাখবে বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগার। জ্ঞানচর্চার আলো যদি একবার জ্বালানো যায়, তবে সেটি কোনো দিনই নিভে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না। বই পড়ার অভ্যাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে হবে। সোনার মানুষ গড়তে বই পড়ার অভ্যাস অনেক বড় ভূমিকা রাখে।
সম্পর্কিত খবর
সুমাইয়া ইসলাম, দশম শ্রেণি, মনোহরদী সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়
সব সময় শুনে আসছি, বই পড়লে জ্ঞান বাড়ে। কিন্তু পাঠ্যবইয়ের বাইরে আমাদের বই পড়ার কোনো সুযোগ ছিল না। পাঠ্যবইয়ের বাইরেও বই পড়তে চাইতাম। আমার কবিতা ভালো লাগে।
লামিয়া হোসাইন, অষ্টম শ্রেণি, মনোহরদী সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়
আমার বাড়ি নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলায়। বাড়ি থেকে এই পাঠাগারটি অনেক কাছে। প্রথমে আমার বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মাধ্যমে এখানে একটি পাঠাগার হবে বলে জেনেছিলাম।
মুগ্ধ রায় নীরব, অষ্টম শ্রেণি, ড. এম এ হাসান মডেল উচ্চ বিদ্যালয়
আমার বই পড়ার খুব আগ্রহ। পাঠ্যবইগুলো খুবই ভালো করে পড়ি। এর বাইরেও আমার জানার অনেক ইচ্ছা। আমি ইতিহাস, সাহিত্য বইগুলো পড়তে চাই, কিন্তু বই পড়ার সুযোগ ছিল না। বান্ধবীরা বই উপহার দিলে তা ওই দিনই পড়ে ফেলতাম। বাড়ির কাছে পাঠাগার পাব ভাবতেই পারিনি। যেদিন শুনেছি এখানে একটি পাঠাগার হবে, সেদিন থেকে প্রতিদিন খোঁজ নিচ্ছিলাম। এরই মধ্যে আমি পাঠাগারের ভেতর ঘুরে ঘুরে অনেক বই দেখে রেখেছি, সব বই পড়ব। এমন একটি পাঠাগার পেয়ে আমি অনেক খুশি।
তাসরিয়ান আফরীন, দশম শ্রেণি, মনোহরদী সরকারি পাইলট মডেল উচ্চ বিদ্যালয়
যে যত বেশি পড়ে, সে তত বেশি জানে—এটাই শুনেছি এবং প্রমাণ পেয়েছি। পাঠ্যবইয়ের বাইরেও পাঠের সুযোগ পেলে মনের জগৎ প্রসারিত হবে। কিন্তু দু-চারটি বই ছাড়া আমার পাঠ্যবইয়ের বাইরে পড়ার সুযোগ হয়নি। তবে আমি পড়তে চাইতাম। বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে এখানে পাঠাগার হওয়ার কারণে সেই সুযোগ তৈরি হয়েছে। এখন সুযোগ পেলেই বই পড়ব। শুধু আমিই নই, সহপাঠীদেরও বলব বই পড়তে। আমার ভাই-বোনদেরও বই পড়তে বলব। এত কাছে একটি পাঠাগার হয়েছে, এই সুযোগটি কাজে লাগাব।
পাঠ্যপুস্তকের বিদ্যায় কখনোই জ্ঞানার্জন পূর্ণ হয় না। এ জন্য পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও বিভিন্ন বই পড়তে হয়। শরীরের জন্য যেমন খাদ্যের দরকার, তেমনি মনের জন্যও খাদ্য প্রয়োজন। এটি মেটাতে পারে পাঠাগার।
হাতের নাগালে বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগার পেয়ে আমি অত্যন্ত আনন্দিত। আমি ইংরেজি পড়াই। এখানে আমি কোথাও কাউকে একটি ইংরেজি পত্রিকা রাখতে দেখিনি। দেখলাম, বসুন্ধরা শুভসংঘ পাঠাগারে পাঁচটি দৈনিক পত্রিকা রাখা হয়, যার মধ্যে একটি ইংরেজি পত্রিকা। আমার মনটা আনন্দে নেচে উঠল।
বসুন্ধরা শুভসংঘ এগিয়ে এসেছে, এখানে একটি পাঠাগার স্থাপন করেছে। এতে শিক্ষার্থী ছাড়াও সব বয়সী মানুষ বই পড়ার সুযোগ পাবে। শুধু আমিই নই, পুরো এলাকার মানুষ খুবই আনন্দিত। এখন এখানে সকাল-বিকালে পাঠকদের ভিড় লেগেই থাকবে। কেউ পত্রিকা পড়বে, কেউ বা ধর্মীয় বই কিংবা গল্প-উপন্যাস, কেউ বা আবার ক্যারিয়ার গঠনমূলক নানা বই পড়বে। এমন সুযোগ এই এলাকার শিক্ষার্থী ও সব বয়সী মানুষকে করে দিয়েছে বসুন্ধরা শুভসংঘ। তাদের অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
গ্রন্থাগার বা পাঠাগারের সূচনা অনেক আগে থেকেই। যিশুখ্রিস্টের জন্মেরও পাঁচ হাজার বছর আগে পাঠাগার ছিল। যখন ছাপা বই ছিল না, তখনো পাঠাগার ছিল। আগে মানুষ তার সঞ্চিত জ্ঞান বিভিন্ন গাছের ডালে, পাতায়, চামড়ায় লিখে রাখত।
বই পড়ার মাধ্যমে আনন্দ, বুদ্ধি ও সক্ষমতা অর্জিত হয়। অবসর ভরে ওঠে নির্মল আনন্দে। বইয়ের কথামালা থেকে বুদ্ধিপ্রাপ্তি হয় আর বিদ্যার সঙ্গে বিষয়বুদ্ধির সংশ্লেষে সক্ষমতা আসে। আমার বাবা আবদুল গণি বিএসসি ছিলেন কাপাসিয়া হরিমঞ্জুরী পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক।