<p>সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কমপক্ষে ২৪ কেজি চা-পাতা তুলতে পারলে এক দিনে ১৭৮ টাকা মজুরি পান চা শ্রমিকরা। তাদের বেশির ভাগই নারী বা তরুণী। বেশির ভাগ পরিবারের পুরুষরা তেমন কিছুই করেন না। কেউ কেউ চা-বাগানের আবর্জনা পরিষ্কার বা অন্যান্য কাজ করে একই মজুরি পান। একজন বা দুজনের আয়ে চলে পুরো পাঁচ থেকে সাতজনের সংসার। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত চা-বাগানের শ্রমিকদের দুর্দশা কাটেনি কখনো। এর মধ্যেই কোনো কোনো পরিবারের কিশোরী মেয়েটি বা কিশোর ছেলেটি শত অভাব কাটিয়ে পড়াশোনা করছে। অনেকের দিন কাটে এক বেলা পান্তা ও চানাচুর মেশানো চায়ের ভর্তা খেয়ে। কারো কারো এক বেলার আহারও জোটে না অনেক দিন। নিম্ন আয় ও জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত চা শ্রমিকদের সন্তানরা কেউ কেউ এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। স্বপ্ন দেখে একটি সুন্দর গোছানো জীবনের, যেখানে থাকবে না শত অভাব আর অভিযোগ। জীবন বদলে দেওয়ার স্বপ্ন দেখা এমনই ২০ চা শ্রমিকের তরুণী মেয়ের পাশে দাঁড়িয়ে নতুন ইতিহাস তৈরি করল বসুন্ধরা শুভসংঘ। দেশসেরা শিল্প পরিবার বসুন্ধরা গ্রুপের সহায়তায় চা শ্রমিক তরুণীদের জীবনধারায় নতুন স্বপ্ন যোগ করল বসুন্ধরা শুভসংঘের সেলাই প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ শেষে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে তাদের জীবনবদলের হাতিয়ার হিসেবে তুলে দেওয়া হলো একটি করে সেলাই মেশিন। পড়ালেখার পাশাপাশি এই তরুণীদের কেউ কেউ চা-পাতা তুলতেন। ফাঁকে ফাঁকে সপ্তাহে দুই দিন করে বিনা মূল্যে নিয়েছেন সেলাই প্রশিক্ষণ। চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা। বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন উপহার পেয়ে তাদের স্বপ্নের পালকে যোগ হয়েছে নতুন ডানা। সেই ডানায় ভর করে নতুন স্বপ্নের পথে উড়বেন তারা। এগিয়ে নেবেন নিজের পরিবারকে। দেশের অর্থনীতির চাকা আরো সচল হবে তাদের উপার্জনে। মেশিন হাতে পেয়ে এমনই নানা স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন চা-বাগানের তরুণীরা।</p> <p style="text-align:center"><img alt="চা-কন্যাদের পাশে দাঁড়িয়ে নতুন ইতিহাস" height="600" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11.November/18-11-2024/Rif/23-11-2024-p13-2.jpg" width="1000" /></p> <p>গত ১৬ নভেম্বর শনিবার দুপুরে হবিগঞ্জের চুনারুঘাট উপজেলার লালচান্দ চা-বাগানের তরুণীদের হাতে বসুন্ধরা গ্রুপের পক্ষ থেকে সেলাই মেশিন তুলে দেয় বসুন্ধরা শুভসংঘ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইপিই (ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং) বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মিছবাহ উদ্দিন, ‘চা-কন্যা’ খ্যাত উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান খায়রুন আক্তার, লালচান্দ চা-বাগান স্কুলের প্রধান শিক্ষক ও সমাজসেবক রনি গোয়ালা, মনোহরদী সরকারি কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক কামরুল ইসলাম, বসুন্ধরা শুভসংঘ কেন্দ্রীয় সদস্য মো. মামুন, সৈয়দ আল মাসুদ, হাসিব, আমিনুর, সজিব প্রমুখ। দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে খাইরুন বলেন, ‘প্রশিক্ষণসহ সেলাই মেশিন পাওয়া চা শ্রমিক তরুণীদের জীবনধারায় নতুন স্বপ্ন যোগ হয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপের মতো অন্যান্য কম্পানিও যদি চা শ্রমিকের পাশে দাঁড়ায়, তবে শ্রমিকরা অন্য রকমভাবে তাদের জীবনটা সাজাতে পারবে। লালচান্দ চা-বাগানের মতো অন্যান্য বাগানেও সুবিধাবঞ্চিত শ্রমিকের পাশে থাকবে বসুন্ধরা, এমনটাই প্রত্যাশা করি।’</p> <p>হবিগঞ্জ সদরের বৃন্দাবন সরকারি কলেজে স্নাতক তৃতীয় বর্ষে লেখাপড়া করছেন লালচান্দ চা শ্রমিক পরিবারের তরুণী তৃষ্ণা রায়। বসুন্ধরা শুভসংঘের উদ্যোগে প্রশিক্ষণ শেষে সেলাই মেশিন উপহার পেয়ে আনন্দে সবাইকে একটি গান শুনিয়েছেন তৃষ্ণা, যে গানের মধ্যে ফুটে উঠেছে চা শ্রমিকের জীবনধারা। তৃষ্ণা বলেন, ‘বাবা ও মায়ের সামান্য মজুরিতে কোনো রকম চলছে সংসার। লেখাপড়া করছি খুব কষ্টে। বসুন্ধরা থেকে বিনা মূল্যে প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন পেয়েছি। এখন লেখাপড়ার পাশাপশি উপার্জন করে পরিবারের সদস্যদের জীবিকায় অবদান রাখতে পারব।’ সেলাই মেশিন পাওয়া ২০ জনের বেশির ভাগই এখন লেখাপড়া করছেন। তারাও সেলাইয়ের কাজ করে নতুনভাবে জীবনধারণের স্বপ্ন দেখছেন। অধ্যাপক সৈয়দ মিছবাহ উদ্দিন বলেন, চা শ্রমিকরা যদি অবহেলিত না থাকতে চান, তাহলে কেউ তাদের অবহেলিত রাখতে পারবে না। আজকে যে চা শ্রমিকরা প্রশিক্ষণ ও সেলাই মেশিন পেলেন, তারা ভবিষ্যতে জীবন নতুনভাবে সাজাতে পারবেন। এভাবে আরো অনেক সুযোগ আসবে। সেগুলো দায়িত্বশীলতার সঙ্গে চা শ্রমিকদের গ্রহণ করা জরুরি। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধকতা ও দরিদ্রতার সঙ্গে লড়াই করা সুজাতা সাঁওতাল সেলাই মেশিন পেয়ে আবেগাপ্লুত হন। তিনি বলেন, ‘এই সেলাই মেশিন কাজে লাগিয়ে দুই বেলা অন্নের সংস্থান করতে পারব।’ অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন প্রশিক্ষক সাবিকুন্নাহার সাবিনা, কালের কণ্ঠের হবিগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি শাহ ফখরুজ্জামান, চা শ্রমিক নেতা রনি গোয়ালা, দিপ গোয়ালা, আলেম বাউরি, কালের কণ্ঠের চুনারুঘাট প্রতিনিধি জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ।</p> <p> </p>