<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছোট একটি গল্প দিয়ে মাম্পস ভাইরাস প্রসঙ্গটি শুরু করছি। ১৯৬৩ সালের মার্চ মাসের কথা বলছি। মাইক্রোবায়োলজিস্ট মরিচ হিলম্যানের পাঁচ বছর বয়সী মেয়ে জেরিন লিন মাঝরাতে কাঁদতে কাঁদতে ঘুম থেকে উঠে গেল। বাবাকে জানাল তার গলা ব্যথার কথা। হিলম্যান একজন স্বনামধন্য মাইক্রোবায়োলজিস্ট। মেয়েকে বিছানায় রেখে তার গলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করেন। ওই নমুনা থেকেই মাম্পস ভাইরাসের গবেষণা শুরু হয়। গবেষণার এক পর্যায়ে তিনি ভাইরাসটির প্রতিরোধে ভ্যাকসিন আবিষ্কার করতে সফল হন। ১৯৬৬ সালে নিজের আরেক মেয়ে ক্রিস্টেনকে পরীক্ষামূলক ভ্যাকসিন দেন। তাঁর মেয়ের মুখ থেকে সংগৃহীত ভাইরাসের স্টেইন এখনো বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত মাম্পস ভ্যাকসিনের ভিত্তি। চিকিৎসাবিজ্ঞানের তৎকালীন ইতিহাসে এমন ঘটনা আলোড়ন ফেলে।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিশুদের জন্য ১৪টি ভ্যাকসিনের যে পরামর্শ দেওয়া হয় তার আটটি হিলম্যান ও তাঁর গবেষকদলের তৈরি। এগুলো হলো মাম্পস, হাম, হেপাটাইটিস বি, চিকেন পক্স, মেনিনজাইটিস, নিউমোনিয়া, হিমোফেলাস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশে শিশুরা অনেক বেশি মাম্পসে আক্রান্ত হচ্ছে। মাম্পস সাধারণত শিশুদের বেশি হয়, কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে বড়দের মাম্পস হবে না। যেকোনো বয়সেই মাম্পস ভাইরাসের সংক্রমণ হতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মনে রাখতে হবে, মাম্পস ভাইরাস কোনো প্রাণঘাতী ভাইরাস নয়। কিন্তু এই ভাইরাস লালাগ্রন্থিকে আক্রান্ত করে অন্য উপসর্গ তৈরি করতে পারে!</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাম্পসে আক্রান্ত রোগীর লক্ষণগুলো : ১. গাল ফোলা ও গলা ব্যথা। খাওয়া বা চিবানোর সময় বা মুখ খুলতে গেলে গালের দুই পাশে ব্যথা অনুভূত হয়। কারণ উভয় পাশের বা এক পাশের কানের নিচে প্যারোটিড গ্রন্থি এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয় এবং তা ফুলে যায়, যাকে আমরা প্যারোটাইটিস বলি। ২. মাম্পস ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শরীরের তাপমাত্রা কয়েক দিন পর্যন্ত ১০২ থেকে ১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইট থাকতে পারে। ৩. মাংসপেশিতে ব্যথা হতে পারে। ৪. ক্ষুধামান্দ্য দেখা দিতে পারে। ৫. পেটে ব্যথা হতে পারে। ৬. পুরুষদের ক্ষেত্রে অণ্ডকোষ ফুলে ব্যথা হওয়া, যাকে অর্কাইটিস বলে। বয়ঃসন্ধিকালে থাকা পুরুষদের মাম্পস হলে ৩০ শতাংশের অর্কাইটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। ৭. মাথা ব্যথা হতে পারে। অনেক সময় এই ভাইরাসটি মাথায় মেনিনজাইটিস বা এনকেফালাইটিসের কারণ হতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাম্পসে আক্রান্ত ব্যক্তির আক্রান্ত হওয়ার ১৪ থেকে ২৫ দিনের মধ্যে রোগটির লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে। মাম্পস একটি সংক্রামক রোগ, এর জীবাণু আক্রান্ত ব্যক্তি থেকে হাঁচি, কাশি, মুখের লালার সঙ্গে অন্য ব্যক্তির নাক, চোখ কিংবা মুখ দিয়ে ভেতরে সংক্রমণ ঘটায়। মাম্পসে আক্রান্ত ব্যক্তিকে কমপক্ষে দু-তিন সপ্তাহ আলাদা করে রাখা উচিত এবং আক্রান্ত শিশুকে স্কুলে যেতে দেওয়া উচিত নয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাম্পস সাধারণত এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। কিছু ক্ষেত্রে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে; যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> প্যানক্রিয়াটাইটিস, মেনিনজাইটিস, এনকেফালাইটিস, অর্কাইটিস, ওফরাইটিস ও গর্ভপাত। গর্ভবতী নারীদের মাম্পস হলে গর্ভপাতের আশঙ্কা থাকে। এ ধরনের লক্ষণ দেখা গেলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাম্পস একটি ভাইরাসসৃষ্ট রোগ, সে জন্য কোনো অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন নেই। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উপসর্গভিত্তিক চিকিৎসা দেওয়া হলেই রোগী ভালো হয়ে যায়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাম্পসে আক্রান্ত রোগীকে আলাদা করে কমপক্ষে দু-তিন সপ্তাহ রাখা উচিত এবং রোগীর ব্যবহৃত কাপড় ও জিনিসপত্র গরম পানি দিয়ে ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। পাশাপাশি রোগীকে প্রচুর পরিমাণ তরল পান করতে বলা উচিত। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সংক্রামক ব্যাধি বলে এই রোগ হলে শিশুকে খুব কাছ থেকে আদর করা বা চুমু দেওয়া ঠিক নয়। এতে রোগটি একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। রোগীকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। কবিরাজের কাছ থেকে কোনো ধরনের ঝাড়ফুঁক বা অপচিকিৎসা করানো যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনো ধরনের অ্যান্টিবায়োটিক বা স্টেরয়েড ব্যবহার করা উচিত নয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাম্পসে আক্রান্ত হলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন। ব্যথা উপশমের জন্য প্যারাসিটামল বা ইবুপ্রফেন খাবারের পর খেতে পারেন। প্রচুর পরিমাণে তরল পান করবেন। ফোলা গাল বা লালাগ্রন্থির ওপর ঠাণ্ডা কাপড় ব্যবহার করতে পারেন। গরম লবণ পানি দিয়ে গার্গল করুন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মেনিনজাইটিস হলো মস্তিষ্কের চারপাশের এবং মেরুদণ্ডের চারপাশের ঝিল্লির প্রদাহ। মাম্পস সম্পর্কিত মেনিনজাইটিস খুব কম দীর্ঘমেয়াদি সমস্যার সৃষ্টি করে। এ ছাড়া প্যানক্রিয়াটাইটিস, যেটি পেনক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ের ক্ষতি করতে পারে। যেটির উপসর্গ হলো পেট ব্যথা, পেট খারাপ, বমি ও জ্বর।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মাম্পস প্রতিরোধের প্রথম ও প্রধান ব্যবস্থা হলো মাম্পস ভ্যাকসিন নেওয়া। শিশুদের তিনটি ডোজ মাম্পস ভ্যাকসিন : প্রথম ডোজ ৯ মাস বয়সে। দ্বিতীয় ডোজ ১৫ মাস বয়সে। তৃতীয় ডোজ চার থেকে ছয় বছরের মধ্যে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">স্কুলগামী শিশু, যারা আগে মাম্পস টিকা (এমএমআর টিকা) পায়নি, তাদের দুই ডোজ দেওয়া উচিত। যদি একবার টিকা দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে শুধু এক ডোজ দিতে হবে। উভয় ডোজের মধ্যে সর্বনিম্ন ব্যবধান চার সপ্তাহ হওয়া দরকার।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> লেখক : চিকিৎসক, উত্তরা আধুনিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল</span></span></span></span></p> <p> </p>