<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্ব রক্তদাতা দিবসে এবার যে স্লোগানটি ঠিক করা হয়েছে, তার একটি লক্ষ্য আছে। যাদের নিয়মিত রক্ত লাগছে, তাদের জন্য প্রত্যেক রক্তদাতা রক্ত বা প্লাজমা দানের মাধ্যমে কতটুকু ভূমিকা পালন করতে পারেন সেটিকেই তুলে ধরতে এবারের স্লোগান</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রোব Give blood, give plasma, share life, share often. আসলে দিবস পালনের মূল উদেশ্য হলো, সবার কাছে এর তাৎপর্য তুলে ধরা। যাতে বছরব্যাপী সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা যায়। এতে যে উদ্দেশ্যে দিবস পালন করা হয়, তা সফল হওয়ার সুযোগ থাকে। তবে দুর্ভাগ্যের বিষয়, রক্তদান আন্দোলন ততটা সফল হয়নি, যতটা আমরা শিক্ষার হার বাড়াতে পেরেছি। শিক্ষার হারের সঙ্গে আন্দোলনের সম্পর্ক কেন টানলাম তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। অন্য দেশগুলোর দিকে তাকালে আমরা দেখি, যে দেশের শিক্ষার হার যত বেশি, সে দেশে স্বেছায় রক্তদাতার সংখ্যা তত বেশি। কারণ শিক্ষিত হলেই রক্তদানের উপকারিতা ও মর্যাদা উপলব্ধি করা যায়। শ্রীলঙ্কার মতো দেশে স্বেচ্ছায় রক্তদাতার সংখ্যা প্রায় শতভাগ। কিন্তু আমাদের দেশে সেটি ৫০ শতাংশ হয়েছে কি না সন্দেহ। সন্দেহ এই কারণে যে আমরা স্বাস্থ্য খাতের কোনো তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করতে পারি না সামঞ্জস্যতার অভাবে। দেশে জাতীয় রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্র নেই, যা থাকা উন্নত দেশ হওয়ার জন্য খুবই জরুরি। তথ্য যা কিছু পাওয়া যায় তা গুচ্ছ গুচ্ছ আকারে, সামগ্রিক নয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রোগীর জন্য যখন রক্তের প্রয়োজন হয়, তখন রোগীর স্বজনদেরই তার ব্যবস্থা করতে হয়। কারণ বাংলাদেশের কোনো হাসপাতালে এমন কোনো ব্যবস্থা নেই যে হাসপাতালই রক্তের ব্যবস্থা করে তাদের রোগীর জন্য। এর পেছনের কারণ হলো স্বেচ্ছায় রক্তদাতা কার্যক্রম নেই হাসপাতালগুলোতে। আরো দুর্ভাগ্য হলো, যেসব হাসপাতালে অপারেশন হয়, সেসব হাসপাতালে ব্লাড ব্যাংক থাকা জরুরি হলেও সেটি অনুপস্থিত বেশির ভাগ জায়গায়। যখন রক্তের প্রয়োজন হয়, তখন ছোটাছুটি করতে হয়। যেহেতু নানা কারণে রক্তদাতাদের তাঁদের নিজস্ব আত্মীয়-স্বজনকে রক্ত দেওয়া লাগে, তাই স্বেচ্ছায় রক্তদানের পরিবেশ আমরা তৈরি করতে পারছি না।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রক্তদানের কার্যক্রম এখন অনেকটাই সামাজিক মাধ্যমকেন্দ্রিক। ফেসবুকে রক্তের প্রয়োজনে নানা গ্রুপ রয়েছে। সেখানে দেখেও রক্ত দেওয়ার জন্য ছুটে যান রক্তদাতারা। ফলে এসব গ্রুপকেন্দ্রিক নির্দিষ্ট রক্তদাতাগোষ্ঠী তৈরি হচ্ছে। এটা এক দিক দিয়ে যেমন ভালো, তেমনি নেতিবাচক দিকও রয়েছে। ঢাকা শহরের জন্য রক্তের চাহিদা তৈরি হলে পাশের জেলাগুলো থেকে রক্ত দেওয়ার জন্য মানুষ আসে। অনেকেই অগ্রিম টাকা দাবি করেন যাওয়া-আসার জন্য। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রক্তদানের জন্য আসেন না। প্রতারণা করার অভিযোগ দেওয়ার মতো মানসিক অবস্থাও রোগীর স্বজনদের থাকে না। ফলে দিন দিন এসব প্রতারণা বেড়েই চলেছে। রোগী ভুক্তভোগী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যাঁরা সত্যিকারের রক্তদাতা, তাঁরাও এসব গ্লানির মধ্যে পড়ছেন। আইসিটি বিভাগ থেকে যদি এলাকাভিত্তিক রক্তের গ্রুপ নিয়ে অ্যাপস তৈরি করা যায়, যা দিয়ে সার্চ দিলেই যেন জানা যায় ঠিক সেই মুহূর্তে কতজন রক্তদাতা রয়েছেন, সেই গ্রুপের যাঁরা রক্ত দিতে পারবেন। অনেকটা পাঠাও, উবার ইত্যাদির মতো।   </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যাঁরা রক্ত দেন, তাঁরা মানুষের উপকার করে যে স্বর্গীয় তৃপ্তি পান, সেটিই তাঁদের বারবার রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করে। অনেকের কাছে সেটি নেশা হয়ে যায়। দুঃখজনক হলেও সত্য, রক্তদান নিয়ে অনেকে প্রতিযোগিতা করেন। সেটি করতে গিয়ে সময় হওয়ার আগেই রক্ত দিতে কার্পণ্য বোধ করেন না। এতে তাঁর যেমন ক্ষতি হয়, তেমনি রোগীর উপকার পাওয়ার সুযোগও কমে যায়। ইদানীং অনেকেই অ্যাফেরেসিস পদ্ধতির মাধ্যমে রক্তদান করেন। মাসে দুবার দেওয়ার সুযোগ থাকে বলে বছরে ২৪ বার রক্তদান হয়ে যায়। তাই তাঁরা অ্যাফেরেসিস ছাড়া রক্ত দিতে চান না। তাঁদের মনে রাখা উচিত, অ্যাফেরেসিস করে আমাদের দেশে শুধুই রক্তের একটি উপাদান প্লাটিলেট সংগ্রহ করা হয়। বেশির ভাগ রোগীর কিন্তু রক্তের প্রয়োজন হয় হিমোগ্লোবিনজাতীয় সমস্যার কারণে। তাই নিজের নামের পাশে রক্তদানের সংখ্যা বাড়ানোর চেষ্টায় থাকলে অনেক রোগীই কিন্তু বঞ্চিত হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের শরীরে ওজন অনুপাতে রক্ত থাকে। সেটি প্রায় ৬৬ মিলি প্রতি কেজিতে। আবার তিনি যখন রক্তদান করেন, তখন ওজন অনুপাতে যতটুকু রক্ত থাকে তার ৮ থেকে ১২ শতাংশ (১০ শতাংশ) পরিমাণ দান করতে পারেন প্রতিবারে শরীরের ক্ষতি না করে। সেই হিসাবে যাঁর ওজন ৫০ কেজি, তাঁর শরীরে রক্ত আছে ৫০</span></span> <span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">x৬৬=৩৩০০ মিলি। তাহলে তিনি রক্তদান করতে পারবেন=৩৩০০</span></span> <span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">x১০%=৩৩০ মিলি। একেবারে গাণিতিক হিসাব। কিন্তু অনেকেই দাবি করেন ব্লাড কালেকশন সেন্টারে গিয়ে যে তিনি নিয়মিত ৪৫০ মিলি দিচ্ছেন। তিনি নিয়মিত দিলেও শরীরের নিয়মিত ক্ষতি করছেন। আর ব্লাড কালেকশন সেন্টারগুলো তাঁকে সঠিকভাবে না বলায় তিনি এই ক্ষতির কাজটি নিয়মিত করেই চলেছেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইদানীং একটি তথ্য নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে, সেটি হলো নিকটাত্মীয়কে রক্তদানে নিষেধ করা। আসলে পেশাদার রক্তদাতা থেকে নিষ্কৃতি পাওয়ার উদ্দেশ্যেই একসময় স্লোগান ছিল আপনজনকে রক্ত দিন। বিজ্ঞানের উন্নতির দ্বারা আমরা অনেক কিছুর ব্যাখ্যা জানতে পারছি ধীরে ধীরে। তেমনই একটি জিনিস হলো, নিকটজনকে রক্ত দিলে কখনো কখনো বিপদের আশঙ্কা হতে পারে। সেটি এমনই যে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। বেশির ভাগ সময় রোগীর যখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থাকে না, তখন এটি ঘটার আশঙ্কা থাকে। আমরা যেখানে রক্তদানকে সামাজিক আন্দোলনে নিয়ে যেতে পারিনি, আবার হাসপাতালগুলো নিজেরা রক্তের জোগান দিতে পারছে না, তাই এটিকে একেবারে নিয়ম করে ফেলা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। এই নিয়ম ধীরে ধীরে চালু করা যায় রোগীর অবস্থার ওপর নির্ভর করে, নয়তো রক্তের অভাবেই রোগীর ক্ষতির আশঙ্কা বেশি হয়ে যেতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রক্তদান আন্দোলন সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত না করা গেলে সুফল পাওয়া যাবে না। সেটি তখনই সম্ভব হবে, যখন রক্তদাতাকে সম্মানিত করা হবে অথবা তাঁর উপকারে লাগবে এমন কিছুর ব্যবস্থা করা যাবে। সেটির দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। উন্নত দেশ হওয়ার যেসব মানদণ্ড রয়েছে, তার মধ্যে এর গুরুত্ব অনুভব করে রাষ্ট্রীয় নীতি গ্রহণ করা জরুরি। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ হওয়ার সুবিধা নাগরিককে দিতে হলে রক্তদাতাদের উপযুক্ত সম্মান দেওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রক্তের অভাবে মৃত্যু কোনোভাবেই কাম্য নয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগ, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি  ইনস্টিটিউট</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">ashraf.djmc03@gmail.com</span></span></span></span></p>