<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় এখনো কানাডায় সংখ্যায় কম বাংলাদেশি বসবাস করলেও কানাডার প্রবাসী বাংলাদেশিদের নিয়ে আলোচনার শেষ নেই। আলোচনা হয় সর্বত্র; সাধারণ মানুষের মধ্যে, সংবাদমাধ্যমে, টেলিভিশনের টক শোতে, এমনকি সাম্প্রতিক সময়ের নাটক-সিনেমায়ও। এই আলোচনার একটি কারণ হতে পারে কানাডার বৃহত্তম বাণিজ্যিক শহর টরন্টোতে কিছুসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশির গড়ে তোলা কথিত বেগমপাড়া নিয়ে নানা রকম আলোচনা-সমালোচনা এবং এক ধরনের প্রতিবাদ। আবার এখানকার কিছু বাংলাদেশির জীবনযাত্রার যে ধরন, সেটিও এই আলোচনাকে উসকে দেয়। এসব আলোচনা ভালো না খারাপ, সেটি একটি ভিন্ন প্রসঙ্গ। সম্প্রতি কানাডার সরকার এখানে বিদেশিদের প্রপার্টি কেনার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কানাডায় বাড়ি বা প্রপার্টি কেনার আইনে কী পরিবর্তন এসেছে এবং এই পরিবর্তনের ফলে কানাডায় বাংলাদেশিদের বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে কী সমস্যা হতে পারে, তা নিয়ে সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে যাঁরা কানাডায় বসবাস করেন এবং ভবিষ্যতে কানাডায় আসতে চান, তাঁদের কৌতূহলের শেষ নেই।  </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বেশ কয়েক বছর ধরেই কানাডায় বাড়ির দাম আকাশচুম্বী। ক্রমাগত বাড়ি বা রিয়াল এস্টেট প্রপার্টির মূল্য লাগামহীনভাবে বেড়ে চলেছে। যে বাড়ির মূল্য সাত-আট লাখ কানাডিয়ান ডলার হলেও বেশি মনে হয়, সেই বাড়ির বাজারমূল্য হয়ে আছে ১৫ লাখ ডলারের ওপরে। সম্প্রতি ক্রমাগত সুদের হার বৃদ্ধির ফলে বাড়ির মূল্য কিছুটা সংশোধন করা হলেও এখনো অনেক বেশি। কানাডায় বাড়ির এ রকম অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে অনেকেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ইউরোপ ও আমেরিকার অনেক বিশ্লেষক কানাডায় বাড়ির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিকে হাউজিং বাবল বলেও আখ্যায়িত করেছেন। এখানেই শেষ নয়। বাড়ির মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে মানুষের বন্ধকি ঋণ এবং ব্যক্তিগত ঋণের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে সমান তালে। শুধু বাড়ির মূল্য বৃদ্ধি পেলে তেমন কোনো সমস্যা হতো না; বেশির ভাগ ক্ষেত্রে বর্ধিত মূল্যের বিপরীতে রি-ফিন্যান্স বা পুনরর্থায়নের নামে নতুন করে ব্যক্তিগত ঋণ নিয়ে হয় ভোগবিলাসে ব্যয় করেছে অথবা সেই অর্থ ব্যবহার করে আরো একটি বাড়ি ক্রয় করেছে। এটি কানাডার মতো উন্নত দেশে কিভাবে সম্ভব, সেটি আজও আমার কাছে এক বড় রহস্য। কিন্তু এটি হয়েছে। এর পরিণতিতে বাড়ির উচ্চমূল্যের বিপরীতে মর্টগেজ এবং ব্যক্তিগত ঋণের পরিমাণও মাত্রাতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা এই মুহূর্তে অর্থনীতির জন্য বড় হুমকি বলেই বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এসব কারণেই বর্তমান সরকার কানাডায় অস্বাভাবিক বাড়ির মূল্য নিয়ে প্রচণ্ড চাপের মধ্যে আছে এবং বাড়ির মূল্যের ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরাটা তাদের জন্য অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাড়ির মূল্যের ঊর্ধ্বগতি থামিয়ে দিয়ে রিয়াল এস্টেট প্রপার্টির বাজার স্বাভাবিক করার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে কানাডা সরকার আগামী দুই বছর বিদেশিদের এখানে বাড়ি ক্রয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞা গত জানুয়ারি থেকেই কার্যকর হয়েছে। যেভাবে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে এবং যেভাবে বিষয়টি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছে, তাতে মনে হতেই পারে যে এই নিষেধাজ্ঞার কারণে এখন আর বিদেশিরা কানাডায় বাড়ি কিনতে সক্ষম হবেন না এবং এর ফলে এখানকার বাড়ির মূল্যে বড় ধরনের দরপতন ঘটবে। এই নিষেধাজ্ঞার কারণে তেমনটি ঘটবে কি না, তা হয়তো ভবিষ্যৎ বলতে পারবে। তবে নিষেধাজ্ঞাটি যেভাবে জারি করা হয়েছে, তাতে বাস্তবিক ক্ষেত্রে কানাডার রিয়াল এস্টেট মার্কেটে খুব একটা প্রভাব পড়বে বলে আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় না। নিষেধাজ্ঞার শর্তগুলো পর্যালোচনা করলেই বিষয়টি পরিষ্কার হওয়া যাবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="কানাডায় বিদেশিদের বাড়ি কেনায় নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা" height="240" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2023/07. July/11-07-2023/3_kalerkantho-2023-10-pic-7.jpg" style="float:left" width="400" />এই নিষেধাজ্ঞায় বিদেশিদের সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে এভাবে যে একজন ব্যক্তি তখনই বিদেশি হিসেবে গণ্য হবেন, যদি তিনি ১. কানাডার নাগরিক না হন; ২. পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট না হন এবং ৩. ইন্ডিয়ান অ্যাক্টের অধীনে নিবন্ধিত কোনো ব্যক্তি না হন। একইভাবে কোনো ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান তখনই বিদেশি করপোরেশন বলে বিবেচিত হবে, যদি সেই কম্পানি ১. ব্যক্তিগত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে ওঠে; ২. কানাডার কোনো স্টক এক্সচেঞ্জে নিবন্ধিত না হয় এবং ৩. কম্পানির নিয়ন্ত্রণভার এমন এক ব্যক্তির হাতে থাকে, যিনি বিদেশি নাগরিক। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিদেশি হিসেবে নির্ধারিত হবে, তারা কানাডায় আগামী দুই বছর রিয়াল এস্টেট প্রপার্টি ক্রয় করতে পারবে না। তার পরও বিষয়টি এত সহজ সমীকরণ নয়। কেননা এখানেও কিছু ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে এবং সেই ব্যতিক্রমগুলো হচ্ছে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১. যদি কোনো ব্যক্তি কানাডার নাগরিককে বিয়ে করেন; ২. বিদেশি দূতাবাসে বা আন্তর্জাতিক সংস্থায় কর্মরত কোনো ব্যক্তি যদি কানাডায় অবস্থান করেন; ৩. যাঁরা রিফিউজি হিসেবে কানাডায় অবস্থান করছেন; ৪. যাঁরা রেসিডেন্ট ভিসা নিয়ে কানাডায় অবস্থান করছেন; ৫. যাঁরা কাজের অনুমতি নিয়ে কানাডায় আছেন এবং বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে চার বছর ট্যাক্স রিটার্ন জমা দিয়েছেন; ৬. কানাডার কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রী, যাঁরা তাঁদের পাঁচ বছরের মধ্যে বেশির ভাগ সময় পার করে ফেলেছেন। এখানেই শেষ নয়। এই নিষেধাজ্ঞা শুধু প্রধান প্রধান নগরে বাড়ি ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ছোট ছোট শহর বা মহল্লায় যেখানকার মূলধারার জনসংখ্যা ১০ হাজারের নিচে, সেখানে এই নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ কোনো বিদেশি যদি ছোট একটি শহর বা এলাকা বেছে নেন, যেখানে মূলধারার জনসংখ্যা ১০ হাজারের নিচে, সেখানে তিনি অনায়াসেই বাড়ি কিনতে পারবেন। এ রকম আরো কিছু ব্যতিক্রম ঘোষিত এই নিষেধাজ্ঞায় আছে, যা এখানে খুব একটা প্রাসঙ্গিক নয় এবং অল্প পরিসরে এখানে তুলে ধরার সুযোগ নেই। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিষেধাজ্ঞায় কানাডার নাগরিক ও বিদেশিকে যেভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে এবং যেভাবে এই নিষেধাজ্ঞার ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে, সেগুলো বিবেচনায় নিলে দেখা যায় একমাত্র ভিজিটর বা যাঁরা কানাডায় নেহাতই বেড়াতে আসেন, তাঁরা ছাড়া আর সব বিদেশিই কোনো না কোনোভাবে কানাডায় বাড়ি কিনতে পারবেন। ভিজিটররা আগেও কানাডায় বাড়ি কেনার সুযোগ খুব একটা পেতেন না, এখনো পাবেন না। এ কারণেই বহুল আলোচিত এই নিষেধাজ্ঞা কানাডায় বাড়ির বাজার স্বাভাবিক হতে কতটা ভূমিকা রাখবে, তা দেখার জন্য আমাদের আরো অনেক দিন অপেক্ষা করতে হবে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, পৃথিবীর সব দেশেই আইন প্রণয়ন করা হয় এমনভাবে, যাতে সমাজে বা মার্কেটে সঠিক বার্তাটা যায় এবং সেই সঙ্গে সমাজের বা মার্কেটের স্বাভাবিক অবস্থাটাও ঠিক থাকে। এই কাজটাই কানাডার বর্তমান সরকার বিদেশিদের এখানে বাড়ি ক্রয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে খুব সতর্কতার সঙ্গে করতে সক্ষম হয়েছে। কারণ এই নিষেধাজ্ঞার মাধ্যমে বাড়ির মার্কেটে একটা বার্তা চলে গেছে। এতে অনেকেই কিছুটা চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন হয়েছেন। ফলে বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে যে উন্মাদনা শুরু হয়েছিল, সেটা আপাতত দূর হয়েছে। আবার নিষেধাজ্ঞাটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে, যাতে বাড়ির বাজারে অব্যাহত দরপতন ঘটে অর্থনীতিতে ধস না নামে। আর এ কারণেই যেসব বাংলাদেশি কানাডায় উচ্চমূল্যে বাড়ি কিনে বসে আছেন বা যাঁরা বাড়ি কেনার কথা ভাবছেন বা যাঁরা আগামী দিনে কানাডায় এসে বাড়ি কিনবেন, তাঁদের চিন্তার কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না। মোটকথা, কানাডায় যদি আইনগত স্ট্যাটাস থাকে, তাহলে শুধু বাড়ি কেনা কেন, অন্য যেকোনো ধরনের লেনদেন করতে সমস্যা হয় না। পক্ষান্তরে যদি আইনগত কোনো স্ট্যাটাস না থাকে, তাহলে বাড়ি কেনা তো অনেক পরের কথা, যেকোনো সাধারণ কাজকর্ম করতেও অনেক সমস্যা হয়। তাই যাঁরা কানাডায় আসতে চান, তাঁরা নিষেধাজ্ঞার দিকে না তাকিয়ে আইনগত স্ট্যাটাস নিয়ে কিভাবে আসা যায়, সে চেষ্টা করলেই সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন।</span></span></span></span></p> <p> </p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : সার্টিফায়েড অ্যান্টি-মানি লন্ডারিং স্পেশালিস্ট ও ব্যাংকার, টরন্টো, কানাডা</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">Nironjankumar_roy@yahoo.com</span></span></span></span></p>