<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি অনেক বছর থেকেই খুব স্থিতিশীল ছিল, বিশেষ করে বর্তমান সরকারের আমলে সামষ্টিক অর্থনীতির সব সূচকই ছিল হয় বাড়ন্ত অথবা স্থিতিশীল। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় এসেই এই সরকারকে বিশ্ব আর্থিক সংকটের বড় ধরনের ধাক্কায় পড়তে হয়। সেই ধাক্কা সামাল দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক নানামুখী আর্থিক অন্তর্ভুক্তিমূলক উদ্যোগ গ্রহণ করে, বিশেষ করে পশ্চিমের দেশগুলো যেমন যত খুশি তত মুদ্রা সরবরাহ বৃদ্ধি করে অর্থনীতিকে চাঙ্গা রাখার চেষ্টা করেছে। বাংলাদেশ কিন্তু তা করেনি। বাংলাদেশ বরং কৃষি ও শিল্পসহ প্রকৃত অর্থনীতিতে অর্থ ঢেলেছে। বাংলাদেশ সরকারের বাজেট এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক খুবই বিচক্ষণতার সঙ্গে এই অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি পরিচালনা করেছে। মুদ্রানীতির রক্ষণশীল চরিত্রকে বজায় রেখেও কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ এবং সবুজ উদ্যোগগুলোতে কম সুদের পুনরর্থায়ন দিয়ে অর্থনীতিকে বলিষ্ঠ হতে সহযোগিতা করেছে। সে জন্য একদিকে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে, অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ ভোগ ও চাহিদার ক্ষেত্রে বড় ধরনের ভারসাম্য রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে। ফলে খাদ্য উৎপাদন বেড়েছে এবং দারিদ্র্য নিরসনে বিরাট গতি এসেছিল। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কভিড-১৯ শুরু হওয়ার পর বিশ্বজুড়েই অর্থনীতি নিস্তেজ হতে থাকে। তখন বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও সরকার বিভিন্ন প্রণোদনা কর্মসূচি চালু করে। যুক্তরাষ্ট্রে তো নাগরিকদের নামে কয়েক দফা ক্যাশ চেক ইস্যু করা হয়। ফলে পুরো বিশ্বেই মুদ্রা সরবরাহ বাড়তে থাকে। সে সময় অর্থনীতি যাতে ঘুমিয়ে না পড়ে, সে জন্য এই কৌশল গ্রহণ করা হয়। এক পর্যায়ে কভিডের তাণ্ডব কমে আসে। অর্থনীতির পুনর্জাগরণ চোখে পড়তে থাকে। আর ঠিক এই সময়ই শুরু হয়ে যায় রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধ বিশ্বের সরবরাহ চেইনগুলোকে বিধ্বস্ত করে দেয়। জ্বালানি তেল, চাল, ডাল, চিনি, গুঁড়া দুধসহ নিত্যপণ্যের সরবরাহ কমে যায়। তাই এসব পণ্যের দাম চড়তে থাকে। একদিকে বাজারে প্রচুর মুদ্রা, অন্যদিকে পণ্যের সরবরাহ কম। তাই পশ্চিমা বিশ্বেই প্রথম মূল্যস্ফীতি অনেক বেশি চোখ-রাঙাতে শুরু করে। তখন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় এলাকা ও অন্যান্য উন্নত দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের নীতি সুদ হার উপর্যুপরি বাড়াতে শুরু করে। কেউ এ পর্যন্ত পর পর ১০ বার তা বাড়িয়েছে। সেই ধারা এখনো চালু আছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="স্থিতিশীলতা অর্জনে প্রয়োজন অর্থনৈতিক কূটনীতি" height="266" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2023/07. July/13-07-2023/1.jpg" style="float:left" width="333" />এভাবে তাদের মূল্যস্ফীতি বেশ খানিকটা বাগে আনা গেছে। কিন্তু আমাদের মতো দেশে আমদানি মূল্য এতটাই বেড়ে যায় যে মূল্যস্ফীতিও আমদানি হতে থাকে। এই পরিস্থিতিতে সংকোচনমূলক মুদ্রা ও রাজস্বনীতি চালু করার ক্ষেত্রে যে ক্ষিপ্রতার প্রয়োজন ছিল তা আমরা দেখাতে পারিনি। অন্যদিকে রাজস্ব আহরণেও আমাদের গতি ছিল মন্থর। তাই বাংলাদেশে মূল্যস্ফীতির চোখ-রাঙানি এখনো চোখে পড়ার মতো। সর্বশেষ মুদ্রানীতিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনার বেশ কিছু সাহসী পদক্ষেপের সূচনা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে মূলত সরকারি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার কারণে এখনো তা নিয়ন্ত্রণে আসেনি। যে পরিমাণ মুদ্রা সংকোচনের প্রয়োজন, তা থেকে এখনো আমরা বেশ দূরেই আছি। তবে এ কথাও ঠিক, কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রচুর ডলার (১৩ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি) বিক্রি করে বাজার থেকে অনেক টাকা তুলেও নিয়েছে। দুইয়ে মিলে অনেকটাই কাটাকাটি হয়ে গেছে। অন্যদিকে আমাদের বৈদেশিক অর্থনীতিতে ভারসাম্য পুরোপুরি ফিরে আসেনি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তবে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তবু বলা চলে টাকার সঙ্গে ডলারের বিনিময় হার স্থিতিশীল করাটা বেশ চ্যালেঞ্জিং মনে হচ্ছে। ডলারের এই অস্থিতিশীলতা আমাদের বৈদেশিক বাণিজ্যে বড় ধরনের টানাপড়েন তৈরি করেছে। বড় আকারের বাণিজ্যিক ঘাটতি সামাল দিতে গিয়ে আমরা অপ্রয়োজনীয় আমদানি কমিয়ে ফেলার নানা উদ্যোগ নিয়েছি। আমদানির পরিমাণ খানিকটা কমেছেও। কিন্তু রপ্তানি ও প্রবাস আয় মিলে এখনো আমদানির পুরো মূল্য শোধ করতে পারছে না। ফলে বাণিজ্য ঘাটতির পাশাপাশি চলতি হিসাবে ঘাটতি থেকেই যাচ্ছে। অন্যদিকে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের কাছ থেকে যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা পাচ্ছি, তা দিয়ে আর্থিক ভারসাম্য ভালোভাবে রক্ষা করাও সম্ভব হচ্ছে না।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অবধারিতভাবেই আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করতে হচ্ছে। আর তা করতে গিয়ে আমাদের রিজার্ভ অনেকটাই কমে গেছে। এখন তা আমাদের হিসাবে ৩০ বিলিয়ন ডলারের আশপাশে থাকলেও আইএমএফের হিসাবে তা আরো কম। এই পরিস্থিতি রিজার্ভের ওপর চাপ কমাতে আমাদের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য অংশীদার ভারতকে তার মুদ্রা রুপিতে বাণিজ্য করতে আগ্রহী করা হয়েছে। পরে টাকায়ও এই বাণিজ্য চলবে। তবে আমরা ভারতের রপ্তানি পরিমাণের সাত ভাগের এক ভাগ মাত্র রপ্তানি করি। সেই হিসাবে খানিকটা স্বস্তি মিললেও এই নয়া বাণিজ্য লেনদেন সত্ত্বেও আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ অব্যাহতই থাকবে বলে মনে হয়। তাহলে উপায় কী? </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপায় একটাই। একদিকে আমাদের সরকারি খরচ কমাতে হবে এবং অন্যদিকে বিদেশ থেকে ডলারের প্রবাহ বাড়াতে হবে। আর সে জন্য ডলার-টাকার বিনিময় হার এক ও বাজারনির্ভর করার যে অঙ্গীকার মুদ্রানীতি করেছে, তা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে। আর এটা করা গেলেই বিদেশ থেকে ডলারের প্রবাহ বাড়বে। রপ্তানি মূল্যের একটি অংশ (প্রায় ১০ বিলিয়ন ডলার) এখনো বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে ঢোকেনি। এদিকটায় ব্যবসায়ী সমিতিগুলো ও ব্যাংকের নজর দিতে হবে। প্রবাস আয়ের প্রবাহে আরো গতি কেন আসছে না সে বিষয়েও নজর দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। প্রচলিত প্রবাস আয়ের প্রবাহের বাইরেও আমাদের অপেক্ষাকৃত ধনী প্রবাসী জনগোষ্ঠীও আছে। তাদের উপযুক্ত প্রণোদনা দিতে পারলে আরো বেশি করে প্রিমিয়াম ও ইনভেস্টমেন্ট বন্ড কিনতে তারা নিশ্চয় উৎসাহী হবে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ এসব বন্ডের সুদের হার কমিয়ে দিয়েছে। যেখানে নীতি সুদ হার বাড়িয়ে বিদেশে বন্ডের মুনাফা বাড়ানো হচ্ছে, সেখানে আমরা কেন উল্টো পথে হাঁটছি? তা ছাড়া এসব বন্ড কেনার ঊর্ধ্বসীমা বা সিলিং কি না দিলেই নয়? এসব বন্ডের লভ্যাংশ কি ডলারে দেওয়া হয়? টাকায় দিলে তো ডলার বিনিয়োগকারীদের বিচারে তা গ্রহণীয় হবে না। অন্যদিকে পুরো বিনিয়োগ ও লভ্যাংশ ফেরত নিতে চাইলে তাদের কি সহজেই তা করতে দেওয়া হয়? নাকি নিয়ম-নীতির বেড়াজালে তাদের হতাশ করা হয়? ডিজিটাল লেনদেনের এই যুগে তাদের বন্ডে বিনিয়োগ ও তার লভ্যাংশ গ্রহণে যদি কোনো বাধা থেকে থাকে, তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ নিশ্চয়ই দেখতে পারে। আমাদের বন্ড বাজারকে আরো স্বচ্ছ ও গতিশীল করা জরুরি হয় পড়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সম্প্রতি ১২টি দেশ থেকে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অ্যাপ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> ব্যবহার করে সহজেই </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিকাশে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> প্রবাস আয় লেনদেনের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। কিছু ব্যাংকও অ্যাপে প্রবাস আয় আনছে। এটি খুবই ইতিবাচক অগ্রগতি। এখন দেখতে হবে আমাদের ছয়-সাত লাখ ফ্রিল্যান্সারও ডিজিটাল লেনদেনের এই সুযোগ যেন নিতে পারে। যেহেতু দেশে পেপল বা অনুরূপ লেনদেন ব্যবস্থা চালু নেই, বিকাশ বা অন্য কোনো মোবাইল আর্থিক সার্ভিসের মাধ্যমে তারা যাতে অ্যাপ ব্যবহার করে সহজেই তাদের কষ্টার্জিত বিদেশি মুদ্রায় আয় দেশে আনতে পারে, সেদিকে নজর দিতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাশাপাশি আমাদের ব্যক্তি খাতের বৈদেশিক ঋণের ওপর যদি নতুন করে এই বাজেটে রাজস্বব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে, তা পুনর্বিবেচনা করা উচিত। এমনিতে বিদেশি ব্যাংকগুলো দেশে ডলার আনতে সংকোচ বোধ করছে। এই সময় এমন কোনো নিরুৎসাহমূলক রাজস্বব্যবস্থা না নেওয়াই উচিত হবে। একইভাবে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য নতুন করে ভাবতে হবে। ভিয়েতনাম আমাদের চেয়ে ছয়-সাত গুণ এফডিআই আনতে পারছে। আমরা কেন এ ক্ষেত্রে গতি আনতে পারছি না? নিশ্চয় আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় পড়ে থাকেন বিদেশি প্রত্যক্ষ বিনিয়োগকারীরা। তাঁদের দিকটা বিডার দেখার কথা। কিন্তু কেন এফডিআইয়ের পালে কিছুতেই হাওয়া লাগছে না, সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজা দরকার। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগকারীরাও বলতে চাইছেন যে তাঁদের বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, ইটিপি সেবা নানা ধরনের জটিলতা ও সমন্বয়হীনতার মধ্যে পড়ে আছে, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতেও বিল্ডিং উঠে যাচ্ছে। কিন্তু উদাহরণস্বরূপ প্রশ্ন করা যায় যে মিরসরাইয়ের বঙ্গবন্ধু অর্থনৈতিক অঞ্চলে লবণাক্তমুক্ত পানি কোত্থেকে আসবে? সেখানে কি আন্তর্জাতিক মানের কেন্দ্রীয় ইটিপি গড়ে উঠেছে? সাভারের চামড়াশিল্পের কেন্দ্রীয় ইটিপির নামে যে বিপর্যয় ঘটেছে, তা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন নতুন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে আধুনিক পরিবেশবান্ধব ইটিপি গড়ে তোলার কোনো বাস্তব উদ্যোগ কি আমরা নিয়েছি? আর যদি না নিয়ে থাকি, তাহলে দেশি বা বিদেশি বিনিয়োগ এসব অঞ্চলে কী করে পূর্ণ গতিতে আসবে?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সব শেষে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের ঋণ সহযোগিতার কথায় আসি। কভিড মোকাবেলায় এবং ইউক্রেন যুদ্ধের ভয়াবহ প্রভাব থেকে বাংলাদেশকে সহযোগিতা করতে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন অংশীদারদের ভূমিকার প্রশংসা না করলে অন্যায় হবে। আইএমএফের শর্ত নিয়ে নানা প্রশ্ন তোলা হলেও ওই সময়ে ৪.৭ বিলিয়ন ডলারের বিদেশি ঋণ কর্মসূচি বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের সংস্কারমুখী অভিপ্রায়কে ইতিবাচক দৃষ্টিতেই দেখা হয়েছে। এই কর্মসূচি চালু থাকায় বিশ্বব্যাংক, এডিবি, এনডিবি, জাইকাসহ প্রায় সব আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীরা বাংলাদেশের ম্যাক্রো অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আনার জন্য বাজেট সহায়তাসহ নানামুখী ঋণ সহায়তা নিয়ে ঝটপট এগিয়ে এসেছে। উন্নয়ন সহযোগীরা জানে আইএমএফ কর্মসূচি চালু থাকলে বাংলাদেশের উন্নয়ন কৌশল কিছুতেই বল্গাহীন হতে পারবে না। নিজস্ব সম্পদ আহরণের বাড়তি তাগিদ বজায় থাকবে। অযথা অনুৎপাদনশীল খরচের বিপরীতে সাশ্রয়ী কর্মসূচি প্রাধান্য পাবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মোটকথা বাংলাদেশ দীর্ঘ মেয়াদে যাতে টেকসই উন্নয়ন কৌশলে নিবেদিত থাকে, সে জন্য আইএমএফ তাদের জ্ঞানভিত্তিক কৌঁসুলিদের বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যুক্ত করবে। বাস্তবেও তা-ই হয়েছে। সংস্কার নিঃসন্দেহে বেদনাদায়ক এক প্রক্রিয়া। জ্বালানি তেলের ওপর থেকে ভর্তুকি কমিয়ে ফেলা মোটেও সহজ কাজ নয়। তবু বাজেটের ঘাটতি কমাতে এর কোনো বিকল্প ছিল না। তবে জ্বালানি খাতে যে কতিপয়ের সুবিধা নেওয়ার সুযোগ এখনো রয়ে গেছে, সেগুলো মোকাবেলার সৎসাহস আমাদের থাকতে হবে। পরিকল্পনা কমিশনের আইএমইডিকে ধন্যবাদ এই বিষয়ে তাদের সাহসী প্রতিবেদনের জন্য। জাতির দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থে নিশ্চয়ই নীতিনির্ধারকরা এই প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে উদ্যোগী হবেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কিছুদিন আগে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসে আগামী দিনে বিশ্বব্যাংক কী ধরনের উন্নয়ন রোডম্যাপ নিতে যাচ্ছে সে বিষয়ে এক আঞ্চলিক সংলাপে অংশগ্রহণ করেছিলাম। বিশ্বব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট এড মাউন্টফিল্ড এই আলাপের সূত্রপাত করলেন। অর্থনীতিবিদ ছাড়াও বিভিন্ন ধারার অংশীজনরা এই আলাপে অংশ নিয়েছেন। সেই আলাপের নির্যাস থেকে কিছু কথা এখানে উল্লেখ করতে চাই। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাংক আমাদের পরীক্ষিত উন্নয়ন সহযোগী। মাঝখানে পদ্মা সেতু নিয়ে তার তৎকালীন প্রেসিডেন্টের একটি ভুল সিদ্ধান্তের কারণে সম্পর্কের খানিকটা টানাপড়েন চললেও এখন বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক চমৎকার। কিছুদিন আগে এই সম্পর্কের ৫০ বছর আমরা উদযাপন করেছি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">১৯৭২ সালে মাত্র পাঁচ কোটি টাকার ঋণ, গ্র্যান্ট ও কারিগরি সহায়তা নিয়ে যে সম্পর্কের যাত্রা শুরু তা গত অর্থবছরে ৩৯ বিলিয়ন ডলারের অঙ্গীকারে গিয়ে ঠেকেছে। কভিডের সময় টিকা কেনা থেকে শুরু করে হালে বাজেট সহায়তা দিয়ে বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে। নতুন রোডম্যাপে দারিদ্র্য নিরসন ও জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বড় ধরনের সহযোগিতার পরিকল্পনা করছে বিশ্বব্যাংক। নিঃসন্দেহে আমাদের দারিদ্র্যের হার ব্যাপকভাবে কমেছে। বিশ্বব্যাংকের সহযোগিতা এ ক্ষেত্রে অস্বীকার করার উপায় নেই। এখন দরকার আমাদের অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতিকে আনুষ্ঠানিকে রূপান্তর, নতুন কর্মসন্ধানীদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কারিগরি প্রশিক্ষণ এবং বয়স বাড়ছে যে জনগোষ্ঠীর তাদের জন্য উপযুক্ত সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির। আর জলবায়ু অর্থায়নের দিকটি তো আছেই। কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য সবুজ জ্বালানি ও জ্বালানিসাশ্রয়ী কর্মকাণ্ডে তাদের সহযোগিতা নিশ্চয়ই বাড়বে। আমরা আমাদের কৃষিতে চার-পাঁচ লাখ সোলার সেচযন্ত্র চালু করতে পারলে ৮১ লাখ টন ডিজেল খরচ কমাতে পারি। এ ছাড়া বিশ্বব্যাংক আইডিএ তহবিল সম্প্রসারণের কথা ভাবছে। সেই তহবিলের অন্যতম প্রধান ব্যবহারকারী বাংলাদেশ। ভবিষ্যতেও এই ধারা যাতে অব্যাহত থাকে সে জন্য উপযুক্ত প্রকল্প প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের অঙ্গীকার করা বিরাট ঋণ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাইপলাইন (৫০ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি) অব্যবহৃত রয়েছে। এই পাইপলাইন অব্যবহৃত থাকলে তা একসময় </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফেটে</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> যাবে। তখন নতুন করে সহায়তার ক্ষেত্রকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তাই বর্তমান বাস্তবতায় কি করে উন্নয়ন সহযোগীদের দেওয়া দীর্ঘমেয়াদি, কম সুদের ও লম্বা গ্রেস পিরিয়ডসহ বিভিন্ন ঋণ প্রকল্পের অর্থ দ্রুত ছাড় করা যায় সে কথাটি জোর দিয়ে ভাবতে হবে। ভূ-রাজনৈতিক টেনশন হয়তো বর্তমান উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে বিদ্যমান সম্পর্কের ওপর ছায়াও ফেলতে পারে। কিন্তু আমাদের উদ্যমী, পরিশ্রমী মানুষ ও উদ্যোক্তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে এই সম্পর্ক আরো মজবুত করার জন্য উপযুক্ত স্মার্ট অর্থনৈতিক কূটনীতি অবশ্যই চালিয়ে যেতে হবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর</span></span></span></span></p> <p> </p> <p> </p>