<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অস্বীকার করার উপায় নেই যে এই মুহূর্তে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার বাজারে অনিশ্চয়তা আছে। তবে বাংলাদেশের রপ্তানি খাত এখনো অনেকটাই চাঙ্গা। ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের বাজারে রপ্তানি বাড়ন্তই রয়েছে। অপ্রচলিত বাজারেও আমাদের বস্ত্র রপ্তানি বৃদ্ধির হার আরো ভালো। জুন মাসে যে অর্থবছর শেষ হয়েছে তাতে আগের অর্থবছরের চেয়ে বাংলাদেশের রপ্তানি ১৫ শতাংশ বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে আমরা বস্ত্র রপ্তানি করেছি ৩.৯৫ বিলিয়ন ডলার। এর আগের অর্থবছরের জুলাই মাসে এই অঙ্ক ছিল ৩.৩৭ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি ১৭.২১ শতাংশ। একই সময় প্রচলিত বাজারে বস্ত্র রপ্তানি বেড়েছে ২৩.৭৫ শতাংশ। মূলত ডলার-টাকার আনুষ্ঠানিক বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারনির্ভর না হওয়ার কারণে রপ্তানি আয়ের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ বাংলাদেশে এখনো প্রবেশ করেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে বলে মনে হয়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তা সত্ত্বেও রপ্তানি খাতের অর্জন নিয়ে আশাবাদী হওয়াই যায়। কিন্তু রপ্তানি আয়েরই আরেকটি অংশ প্রবাস আয়ের প্রবৃদ্ধির হার একইভাবে ইতিবাচক নয়। এখানেও আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বিনিময় হারের তারতম্য সাত-আট টাকা হওয়ার কারণেই নাকি আমদানি নিয়ন্ত্রণের ফলে ছোটখাটো আমদানিকারকদের হুন্ডির ওপর নির্ভরশীলতা বেড়ে গেছে কি না তা অনুসন্ধানের দাবি করে। তা ছাড়া অস্থির রাজনৈতিক পরিবেশে মুদ্রাপাচারের গতি বেড়ে গেছে কি না তা-ও পরখ করে দেখা প্রয়োজন; নাকি এটি একটি মৌসুমি বাস্তবতা? এই সময়ে বিদেশে পড়তে যায় অনেক শিক্ষার্থী, বেড়াতেও যায় অনেকে। সে কারণেও কি নগদ ডলারের চাহিদা বাড়ল? এসব প্রশ্নের উত্তর সহজে দেওয়া মুশকিল। তবে বিগত কয়েক মাস বা সাম্প্রতিক দিনগুলোতে প্রবাস আয়ের প্রবাহ যে কমেই চলেছে তা মানতেই হবে। এই সময়টায় আবার কার্ব বা অনানুষ্ঠানিক বাজারে ডলারের দামও বেশ বাড়ন্ত। বাংলাদেশ ব্যাংকও বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বিএফআইইউ ও গোয়েন্দাদের বলেছে। সে জন্য বেশ কিছু অভিযানও চলছে। প্রশাসনিক ব্যবস্থা কিংবা গোয়েন্দা অভিযান ছাড়াও সমস্যার মূলে যাওয়ার দরকার রয়েছে বলে অভিজ্ঞমহলের ধারণা, বিশেষ করে কী কারণে হুন্ডিতে লেনদেন চাহিদা এই সময়ে বেড়ে গেল তা আরো গভীরভাবে বিচার-বিশ্লেষণের সুযোগ রয়েছে। যাঁরা বিদেশে যাচ্ছেন, তাঁদের একটি বড় অংশ কি </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ফ্রি ভিসা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">র জটিলতায় </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আন-ডকুমেন্টেড</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শ্রমিকে পরিণত হচ্ছেন? তাঁরা কি উল্টো হুন্ডিতে তথাকথিত চাকরিদাতাদের অর্থ চুকিয়ে দিয়েও বিড়ম্বনায় পড়ছেন? তাঁরা কিভাবে আনুষ্ঠানিকভাবে টাকা পাঠাবেন? উল্টো দেশে ফিরে আসার জন্য পরিবারের সর্বস্ব বিক্রি করে তাঁদের হুন্ডিতে টাকা পাঠিয়ে ফেরত আনা হচ্ছে। যেসব দালাল-উপদালাল গ্রামের এসব অসহায় মানুষকে তথাকথিত </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মুক্ত ভিসা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বা যেখানে খুশি কাজ করার মিথ্যা প্রলোভন দিয়ে দেশ থেকে উল্টো বিদেশি মুদ্রা হুন্ডিতে পাঠানোর মতো অপব্যবস্থার মদদ দিচ্ছেন, তাঁদের ওপর কি যথেষ্ট প্রশাসনিক ও গোয়েন্দা নজর রাখা হচ্ছে? </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমনি এক বাস্তবতায় আমাদের ম্যাক্রো অর্থনীতির স্থিতিশীলতার স্বার্থে বিকল্প উপায়ে হলেও প্রবাস আয় কী করে বাড়ানো যায়, সেদিকে নীতি-মনোযোগ দিতেই হবে। কেননা প্রতিদিনই দেখছি আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে প্রবাস আয় আসার পরিমাণ কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পাওয়া হিসাবে দেখছি ২০২৩ সালের ১ থেকে ১৭ আগস্ট সময়ে আনুষ্ঠানিক প্রবাস আয় এসেছে এক হাজার ৪১ মিলিয়ন ডলার। গত বছরে এই সময়ে তা এসেছিল এক হাজার ২৬১ মিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধির হার মাইনাস ১৭.৫ শতাংশ। আরো পেছনে গিয়ে যদি দেখি ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত প্রবাস আয় এসেছে তিন হাজার ১৪ মিলিয়ন ডলার। ২০২২ সালের ওই সময়ে তা এসেছে তিন হাজার ৩৫৭ মিলিয়ন ডলার। তার মানে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১০.২ শতাংশ। অন্যদিকে গত আগস্ট মাসে প্রবাস আয় এসেছে ১.৬ বিলিয়ন ডলার। এটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের চেয়ে ২১.৫৬ শতাংশ কম। গত ছয় মাসের মধ্যে এটি সর্বনিম্ন। কেন এমনটি হচ্ছে এ নিয়ে গভীর গবেষণা ও বিশ্লেষণের নিশ্চয় সুযোগ রয়েছে। এই স্বল্প পরিসরে সে আলাপ করার সুযোগ নেই। বরং আমরা দেখি কী কী উদ্যোগ নিলে প্রবাস আয়ের এই ধারা আরো বেগবান করা সম্ভব। প্রচলিত এক্সচেঞ্জ হাউস বা মানি ট্রান্সফার অপারেশনের পাশাপাশি আমরা আরো কিছু বিকল্প উপায়ের কথা ভাবতে পারি।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="প্রবাস আয় বাড়ানোর উপায়" height="225" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2023/09.September/05-09-2023/1.jpg" style="float:left" width="277" />এক. আমাদের মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বেশ পোক্ত। তাদের আমরা বিদেশি ডিজিটাল ওয়ালেটের সঙ্গে বন্দোবস্ত করার জন্য উৎসাহিত কি করতে পারি না?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুই. বিদেশে বসেই প্রবাসীরা তাঁদের পছন্দমতো বিদেশি ওয়ালেটের সঙ্গে সংযুক্ত আমাদের দেশের মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারী কিংবা ব্যাংকের উপশাখার ওয়ালেটের মাধ্যমে কেন তাঁদের আয় করা অর্থ সহজেই তাঁদের পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠাতে পারবেন না?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিন. আমাদের নিজস্ব কার্ড হওয়ার আগ পর্যন্ত ভিসা থেকে ভিসা কার্ডে তাঁরা নিশ্চয়ই তাঁদের অর্থ পাঠাতে পারেন, সে সুযোগ কি করে দেওয়া সম্ভব?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চার. আমাদের দেশে এখন অনেক পেমেন্ট সার্ভিস প্রভাইডারস সক্রিয় রয়েছে। অনলাইন পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস প্রভাইডারস, পেমেন্ট সার্ভিস প্রভাইডারস, পেমেন্ট সার্ভিস অপারেটরস এদের সবাইকে তাদের সক্ষমতা সাপেক্ষে প্রবাস আয় স্থানান্তরের অনুমোদন কি দেওয়া যায় না?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাঁচ. প্রবাসীরা যদি সার্ভিস প্রভাইডারস, ভেন্ডর ক্রেডিটরস ইত্যাদি তৃতীয় পক্ষকে সরাসরি তাদের অর্থ পাঠান, তাহলে এই লেনদেন কি প্রবাস আয় বলে স্বীকৃতি দেওয়া যায় না? যদি দেওয়া হয়, তাহলে তাঁদের পাঠানো অর্থের ওপর করের বোঝা চাপানো যাবে না, বরং তাঁরা প্রচলিত প্রণোদনা পাবেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছয়. মোবাইল আর্থিক সেবাদানকারীদের সঙ্গে প্রবাসীদের বিদেশি মুদ্রার হিসাব রাখা কি সম্ভব? আর তা রাখা গেলে সহজেই দেশে তাঁরা ওই হিসাব থেকে টাকা পাঠাতে পারবেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সাত. প্রবাসীরাও কি যৌথ ডেবিট কার্ড পেতে পারেন। তাঁদের পরিবারের মনোনীত সদস্যরা ওই কার্ড ব্যবহার করে বাজার থেকে যখন-তখন ভোগ্যপণ্য কিনতে পারবেন। প্রবাসীদের পাঠানো প্রবাস আয় থেকে ওই কার্ডের লেনদেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিষ্পন্ন করা কি সম্ভব?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আট. প্রবাসীদের জন্য আমানত হিসাব খোলা যায় নিশ্চয়ই। বাইরে থেকে তাঁদের পাঠানো অর্থ ওই হিসাবে জমা হওয়ার সুযোগ নিশ্চয় থাকার কথা। ওই হিসাব থেকেই তিনি দেশে ফিরলে খরচ করবেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নয়. প্রবাসীদের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ট্রাভেল কোটা</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">র অধীনে কিছু পরিমাণ বিদেশি মুদ্রা ব্যবহারের সুযোগ দেওয়া যেতে পারে। অল্প কিছুদিনের জন্য দেশে ফিরলে ওই হিসাব থেকে তিনি ডলার বা অন্য কোনো বিদেশি মুদ্রা তুলতে পারবেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দশ. আমরা লক্ষ করেছি যাঁরাই আর্থিক অন্তর্ভুক্তির সুযোগ পেয়েছেন, তাঁরা আনুষ্ঠানিক চ্যানেলেই অর্থ লেনদেন করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তাই প্রবাসীদেরও অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক সেবায় যুক্ত রাখা গেলে তাঁরা আরো বেশি করে আনুষ্ঠানিক পথেই তাঁদের অর্থ পাঠাবেন বলে আশা করা যায়। এতে আর্থিক সেবার সঙ্গে তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক বন্ধন দৃঢ় হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ওপরের এসব উদ্ভাবনীমূলক আর্থিক সেবার ব্যবস্থা করা গেলে প্রবাসীরা ধীরে ধীরে আনুষ্ঠানিক চ্যানেলে তাঁদের আয়-রোজগার বাড়াতে নিশ্চয়ই উৎসাহী হবেন। তা না হলে বৈদেশিক মুদ্রার </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শ্যাডো মার্কেট</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বা অনানুষ্ঠানিক বাজার ছেঁটে ফেলা সহজ হবে না। উল্লেখ্য, এখন এক কোটি ৩০ লাখ মানুষ প্রবাসে থাকেন। তাঁরা প্রতি মাসে গড়ে ২৫০ ডলার করে দেশে প্রবাস আয় পাঠান। কোনো কোনো বিশ্লেষক বলেন, কম করে হলেও প্রায় ১৫ বিলিয়ন ডলার এই অনানুষ্ঠানিক বাজারে লেনদেন হয়। এই বিরাট অঙ্ক আমাদের প্রবাস আয়ের আনুষ্ঠানিক হিসাবের বাইরে। তাইতো গত বছর মাত্র ২১ বিলিয়ন ডলার পরিমাণ আনুষ্ঠানিক প্রবাস আয় এসেছে বাংলাদেশে। তার মানে, ছায়া বাজারে নিশ্চয় ডলার লেনদেনের পর্যাপ্ত চাহিদা আছে। কী কারণে এই ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে? উত্তর বলা যায়, আমাদের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ক্যাপিটাল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> হিসাবে লেনদেন মোটেও সহজ নয়। রয়েছে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ। তাই মানুষ ছায়া বাজার খোঁজেন। যে শিক্ষার্থী সহজেই বিদেশে পড়ার হিসাব ব্যাংকের সঙ্গে খুলতে পারছেন না তাঁকে তো ছায়া বাজারে বাধ্য হয়েই যেতে হচ্ছে। একই কথা অন্যান্য বিদেশি মুদ্রা ব্যবহারকারীর জন্য প্রযোজ্য হতে পারে। চলতি হিসাবেও আইনত লেনদেন </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কনভার্টিবল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">। কিন্তু সেখানেও রয়েছে হাজারো বাধা। শুধু তালিকাভুক্ত খাতেই তা প্রযোজ্য। উচ্চশিক্ষা বা প্রশিক্ষণের জন্য দেওয়া টিউশন ফি, বিজ্ঞাপন, বিনোদন পণ্য বা সেবা কেনার ক্ষেত্রে বিদেশি মুদ্রা সরবরাহে যথেষ্ট কড়াকড়ি করা হয়। বাধ্য হয়েই এসব ডিজিটালসেবা গ্রহণকারীরা ছায়া বাজারে ঢুকে পড়েন। এ ছাড়া চিকিৎসা ও পর্যটন খাতের জন্য প্রয়োজনীয় বিদেশি মুদ্রা পেতে অনেকেই ছায়া বাজারের ওপর নির্ভরশীল। এসবই বাস্তবতা। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ছায়া বাজারের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে হলে কী করা দরকার?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এক. চলতি হিসাবের লেনদেন সত্যিকার অর্থেই </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কনভার্টিবল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বা সহজসাধ্য করা উচিত।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">দুই. প্রবাসীদের নানা প্রণোদনা ও সুযোগ দিয়ে পেনশন সুবিধাসহ আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনা খুবই জরুরি। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিন. আইনগতভাবেই বাংলাদেশ থেকে তাঁদের ন্যায্য পাওনা যাতে প্রবাসীরা বিদেশে ব্যাংকিং চ্যানেলে নিতে পারেন তা নিশ্চিত করা উচিত। প্রবাসী বা প্রিমিয়াম বন্ডে বা সরকারের ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ করে দিনের শেষে যদি তাঁরা তাঁদের প্রাপ্য লভ্যাংশ বিদেশি মুদ্রায় স্থানান্তর না করতে পারেন, হঠাৎ করে যদি তাঁদের প্রাপ্য লভ্যাংশের হার কমিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে তো বড় অঙ্কের বিদেশি মুদ্রার বিনিয়োগ আসবে না। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">চার. প্রবাসীদের বাজারভিত্তিক আকর্ষণীয় বিনিময় হার দিতে হবে। আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বাজারের বিনিময় হারের পার্থক্য বিরাট হলে প্রবাসীদের ঝোঁক অনানুষ্ঠানিক বাজারের দিকেই থাকবে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পাঁচ. যে অর্থ ভালো বিনিময় হারের মাধ্যমে প্রবাসীরা পাঠাবেন তা যেন বাণিজ্যিক আমদানিতে সরাসরি ব্যবহার করা যায় (যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিমানভাড়া, স্টুডেন্ট ফাইল, ডিজিটাল কেনাকাটা) সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এতক্ষণ ধরে আমি যে আলাপটি করলাম তা প্রবাস আয় বাড়ানোর লক্ষ্য সামনে রেখে। সে জন্য অনেক প্রশ্নও তুলেছি। রেগুলেটরদের চিন্তা করার সুযোগ করে দেওয়ার জন্যই এসব প্রশ্নের উত্থাপন করেছি। নিঃসন্দেহে সময় বদলেছে। আমাদের বিদেশি মুদ্রা লেনদেনের রেগুলেশনগুলো মনে হয় নতুন করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় হয়েছে। অংশীজনদের সঙ্গে আলাপ করে এসব নিয়ম-নীতি আরো সহজ ও প্রাসঙ্গিক করার সময় কিন্তু বয়ে যাচ্ছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তবে আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে এই মুহূর্তে যে টানাপড়েন চলছে, তার পেছনে বড় কারণ হলো চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে বিরাট ফারাক তৈরি হয়েছে। এই ফারাক কমাতে হলে শুধু কম টিকিটের প্রবাস আয় নয়, ব্যাংকিং খাতের মাধ্যমে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি বৈদেশিক মুদ্রার ঋণ (যার সুদের ওপর আরোপিত ২০ শতাংশ করারোপ তুলে নেওয়া), আরো বেশি কম সুদের দীর্ঘমেয়াদি আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে সরকারি ঋণ ছাড়ের ব্যবস্থা করা, আপাতত সরকারি ব্যয় আরো কমানোর উদ্যোগ নেওয়া এবং মূল্যস্ফীতি কমানোর জন্য সুদের হার আরো বাড়ানোর বিচক্ষণ মুদ্রা ও রাজস্বনীতি গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই। আশা করি, নীতিনির্ধারকরা অংশীজনদের সঙ্গে আরো নিবিড়ভাবে আলাপ-আলোচনা করে ম্যাক্রো অর্থনীতির স্থিতিশীলতার স্বার্থে আরেকটু নড়েচড়ে বসবেন।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> লেখক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর</span></span></span></span></p> <p> </p>